খুলনার পাইকগাছায় নয়া আতঙ্ক ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ বা ডেভিলস ব্রেথ প্রয়োগ করে মহিলা বা ব্যবসাহীকে বশে এনে সোনা ও অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকচক্র। প্রতারণার নতুন পন্থা অবলম্বন করে ভূক্তভোগীর কাছ থেকে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে একটি ভয়ংকর অপরাধী চক্র। উপজেলায় গত কয়েক মাসে ৪-৫ জন মহিলাকে ডেভিল ডেথ প্রয়োগ করে সোনার বারের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সোনা ও অর্থ হাঁতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্রটি। সোনা আছে এমন একা মহিলা ও বয়ষ্ক মানুষকে প্রতারক চক্র ফাঁদে ফেলছে। সোমবার দুপুরে পাইকগাছা বাজার থেকে বাড়িতে ফেরার পথে এমনই এক প্রতারকের খপ্পড়ে পড়েছেন উপজেলার গোপালপুর গ্রামের আবদুর সবুর গাজীর স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৫৭)। তিনি ভ্যান যোগে বাড়িতে আসছিলেন। পতিমধ্যে ভ্যানে একজন লোক উঠে তার হাতে সোনার একটি বার দেখতে দেয়। তারপর ফাতেমা বেগম আর কিছু বলতে পারে না। প্রতারক তার কাছ থেকে নগদ টাকা ও কানের সোনার দুল খুলে নিয়ে ইজিবাইকে তুলে পাইকগাছা বাজারের মাঝ পথে নামিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর তার জ্ঞান ফিরে আসলে তিনি দেখেন তার কানের দুল ও নগদ টাকা নেই। কে নিয়েছে, কিভাবে নিয়েছে, লোকটা দেখতে কেমন তার কিছুই মনে নেই। এ ঘটনায় ভূক্তভোগী পরিবার পাইকগাছা থানায় অভিযোগ করেছেন। শয়তানের নিঃশ্বাস একটি হেলুসিনেটিক ড্রাগ। রাসায়নিকভাবে এটি স্কোপোলামিন নামে পরিচিত। স্কোপোলামিন একটি প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত ট্রোপেন অ্যালকালয়েড এবং অ্যান্টিকোলিনার্জিক ড্রাগ। এটি হায়োসিন, ডেভিলস ব্রেথ, শয়তানের নিঃশ্বাস, বুরুন্ডাঙ্গা, রোবট ড্রাগ, জম্বি ড্রাগ বা কলম্বিয়ান ডেভিলের নিঃশ্বাস নামেও পরিচিত। এটি মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। দুর্বৃত্তরা লোকজনকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নিতে এটি ব্যবহার করে। এ পন্থায় একজন প্রতারক কিংবা ছিনতাইকারী ভূক্তভোগীকে চাইলেই কাবু করে নিজের ইশারায় নাচাতে পারেন। প্রতারক যে নির্দেশনাই দেবেন, তা-ই অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন সেই নিরীহ ভূক্তভোগী। বিষয়টি জাদুটোনার মতোই কাজ করে। নানাভাবে ও নানা কৌঁশলে এটি প্রয়োগ করা হয়। যেমন, হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে, ঘ্রাণের মাধ্যমে, খাবারের সঙ্গে, চিরকুটের মাধ্যমে, কোমল পানীয়র সঙ্গে, বাতাসে ফুঁ দিয়ে। স্কোপোলামিন তরল ও শুকনো দুই ফরমেটেই পাওয়া যায়। এ ড্রাগটি ৬ থেকে ১২ ইঞ্চি দূরত্ব থেকে শ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে, যার প্রতিক্রিয়া থাকে ২০ থেকে ৬০ মিনিট। খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে এর প্রতিক্রিয়া থাকে দু-তিন দিন। মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণে শয়তানের নিঃশ্বাসের প্রভাব: স্কোপোলামিন বা শয়তানের নিঃশ্বাস শরীরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মস্তিষ্কের প্রাথমিক স্মৃতি ব্লক হয়ে যায়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি আক্রমণকারীকে দেখতে পেলেও চিনতে পারেন না এবং কিছু মনে রাখতে পারেন না। এর প্রভাবে শরীরে কোনো প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না বা বাইরের কোনো আক্রমণে শরীর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর মতো অবস্থায়ও থাকে না। এ অবস্থায় ভূক্তভোগীর আচরণ হয়ে যায় বশীভূত বা সুতায় বাঁধা পুতুলের মতো। তীব্র হেলুসিনেশন শুরু হয়। অন্যের দেওয়া আদেশকে যান্ত্রিকভাবে অনুসরণ করতে বাধ্য করে। মানে আপনি নিজে কিছু করতে পারবেন না, শুধু সামনের লোক যা বলবে তাই করবেন রোবটের মতো। বর্তমানে নতুন এ পন্থা দেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।