নাটোরের লালপুরে বাবা ও মেয়ে একসাথে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। বাবা আবদুল মান্নান জানান দিচ্ছেন ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়, শিক্ষার জন্য বয়স কোন বাধা নয়, চাই মনের ইচ্ছা। তাই নিজের ইচ্ছাকে বাস্তবে রুপ দিতে এবছর অনুষ্ঠিত এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন বাবা ও মেয়ে।
লালপুর উপজেলার রুইগাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখা থেকে অংশগ্রহণ করছে বাবা আবদুল হান্নান (৪০) ওরফে মেয়র হান্নান ও উপজেলার নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে তারই মেয়ে হালিমা খাতুন (১৫)। আবদুল হান্নান উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার নারায়ণপুর মহল্লার মরহুম আলহাজ¦ লাল মিয়ার ছোট ছেলে। আবদুল হান্নান জানান, ১৯৯৮ সালে তিনি নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন। এরপর তার আর লেখা পড়া করা হয়নি। নেমে পড়েন সংসার জীবনে। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া গোপালপুর রেলগেট এলাকায় একটা দোকানে চায়ের ব্যবসা শুরু করেন। সেই দোকানের আয় ও জমিজমা চাষ করে বেশ সুখেই চলে সংসার জীবন। তার সংসারে স্ত্রী, মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে আবু হানিফ নিরব (১১) নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুলের ৫ ম শ্রণীর শিক্ষার্থী আর ছোট ছেলে রমজান মিয়ার বয়স মাত্র ৪ বছর। কিন্তু ছাত্র জীবনের সেই পরাজয়ের গ্লানি মুছে ফেলার প্রবল ইচ্ছে দিনে দিনে তার মধ্যে প্রবল থেকে প্রবলতর হতে থাকে। এসএসসি পাশ করতেই হবে মনে মনে এমন প্রতিজ্ঞা করে বসেন তিনি।
আর এইজন্য ২০২১ সালে তিনি লালপুর উপজেলার রুইগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম (ভোকেশনাল) শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে এবছর এসএসসি (সমমান) পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
আব্দুল হান্নান ২০২১ সালে লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করতে না পারলেও অবশ্য এখন তাকে অনেকেই মেয়র হান্নান বলে সম্বোধন করেন। শুধু তাই নয়, আবদুল হান্নান চায়ের দোকানদারি করলেও তার প্রতিভার কমতি নেই। সাংস্কৃতি মনা এ মানুষটি বেশ কিছু গান, কবিতা ও নাটকও লিখেছেন। তার মেয়ে হালিমা জানান, তার বাবার মেধা আছে এবং ইচ্ছে শক্তি আছে আর তাই এবয়সেও তার লেখাপড়া করার প্রবল ইচ্ছার কারনেই তিনি এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। বাবা-মেয়ে এক সাথে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন এতে তার কেমন লাগছে এমন প্রশ্নের জবাবে হালিমা জানান, আমার খুব ভালো লাগছে, বাবাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি, আমার বাবাকে দেখে অন্যরা পড়াশুনায় অনুপ্রাণিত হবে বলে আমি মনেকরি। বাবা-মেয়ে যেন একসাথে ভালো ফলাফল করতে পারে সেজন্য তারা সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। আবদুল মান্নানের এমন ভূমিকায় এলাকাবাসী তাকে স্বাগত জানিয়েছেন।