ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কারণে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা সরকারের নেই। শনিবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। তিনি বলেন, যেহেতু রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১২ লাখ, সেহেতু তাদের সরিয়ে নিয়ে কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা আমাদের নেই। প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের নেতৃত্বে সাড়ে চার হাজার স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছে। পাহাড়ের ওপর যেহেতু জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা নেই। কিন্তু বৃষ্টিপাতের কারণে ভূমিধস হতে পারে। এই আশঙ্কা মাথায় রেখে স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত থাকতে বলেছি। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কারণে কক্সবাজারে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে আট নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আঘাত হানতে পারে। এখন পর্যন্ত যে দূরত্ব আছে, রোববার সকাল থেকেই উপকূল স্পর্শ করতে থাকবে এটি। তিনি বলেন, রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোখা। গত ৭ মে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি গত শুক্রবার ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় রূপ নিয়েছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে শনিবার সকাল ৬টায় কক্সবাজার উপকূল থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ছিল। পূর্বাভাসকৃত গতিপথ বজায় থাকলে এটি একটি প্রবল/অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে রোববার দুপুরের দিকে কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলের মাঝামাঝি দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ এর আগে থেকেই উপকূলে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তিনি জানান, বাতাসের গতিবেগ কমে যাওয়ায় ঘূর্ণিঝড় মোখা সুপার সাইক্লোন হচ্ছে না। এটি অতিপ্রবল (ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোন) ঘূর্ণিঝড়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাঠ পর্যায়ে জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার কাজে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, সিপিপিসহ সশস্ত্র বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সহায়তা করছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, আনসার-ভিডিপি, বিভিন্ন এনজিও/আইএনজিও, স্থানীয় সংস্থা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন সহায়তা করছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রতিনিয়ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা, পিআইও, সিপিপির কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছোসেবকদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করছে। দুর্গম এলাকা, চরাঞ্চল থেকে মানুষকে উদ্ধারের জন্য আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে, যোগ করেন ডা. মো. এনামুর রহমান। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ও নির্দেশনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয় দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করছে। যথাযথ আইনি ও নীতিগত কাঠামো, উপযুক্ত পরিকল্পনা, প্রশিক্ষিত এবং প্রস্তুত জনবল, যথেষ্ট মানবিক সহায়তা, নিবেদিতপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর পাশাপাশি আগাম সতর্কতার কারণে বিগত সময়ের মতো আমরা এই ঘূর্ণিঝড়টিও সফলভাবে মোকাবিলায় আত্মবিশ্বাসী। এদিকে এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ছয় জেলায় হতে পারে জলোচ্ছ্বাস। জেলাগুলো হলো- চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, ভোলা ও বরগুনা। প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত শুক্রবার সকালে ‘মোখা’ অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। এটি এখনো উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, আশঙ্কা করছি, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় আঘাত হানবে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, ভোলা ও বরগুনাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টেকনাফ ও কক্সবাজারের জন্য সুনির্দিষ্ট করে দুই-তিন মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। আর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, বরগুনা এবং ভোলার জন্য দুই মিটারের কম উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। তিন মিটারের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হলে আশ্রয়কেন্দ্রের লোকজনের জন্য একটি আশঙ্কা থেকে যায় বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।