বাংলাদেশে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাত পুরোপুরি না লাগলেও আংশিক আঘাতে অনেকটা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে উপকূলীয় জেলাগুলো। তবে কক্সবাজারে তেমন প্রভাব না পড়লেও বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন টেকনাফ, সেন্টমার্টিনের মানুষ। কারণ বেশি তা-ব চলেছে এই এলাকায়। এরিমধ্যে দ্রুতই সেগুলো মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে বলে যানা যায়। ঘূর্ণিঝড় মোখার মহাবিপদ সংকেতও আর নেই। তেমন কোনো প্রাণহানির হয়নি। শুধু সেন্টমার্টিনে একজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে সেন্টমার্টিন, টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দারা। বিশেষ করে গরীব ও নিম্নবিত্তদের কাঁচা ঘরবাড়ি একেবারে বিধ্বস্ত হয়েছে এ ঘূর্ণিঝড়ে। সবমিলিয়ে ঝড়ের প্রভাবের শিকার হয়েছে তিন লাখ ৩৪ হাজার মানুষ। ঘূর্ণিঝড় মোখা সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে। সেখানের অনেক এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। সিত্তওয়ে শহরে বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সংযোগও বিচ্ছিন্ন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক গনমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিভিন্ন প্রস্তুতি নেয়া হয়। প্রায় আড়াই লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয়। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয় সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ ঘিরে। সেন্টমার্টিনে ঝড়ের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। তবে সন্ধ্যার পর বৃষ্টি ও বাতাস কমে এলে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করে। সেন্টমার্টিনে এখন একটি কাঁচা ঘরেরও অস্তিত্ব নেই। একই অবস্থা শাহপরীর দ্বীপেও। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে যে প্রায় দুই হাজার ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে আর ১০ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে পাঁচ শতাধিক ঘর পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা জানান, কাঁচা ঘর ছাড়াও কাঠের যে সমস্ত রিসোর্ট ছিল, সেগুলো লণ্ডভণ্ড হয়েছে। অনেক বাড়ি গাছ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এখন যেসব বাড়ি ভালো আছে, সেখানে আত্মীয়স্বজন সবাই মিলে থাকছে বলে জানান তিনি। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা গুলোয় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতেও আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ মসজিদে গিয়েও আশ্রয় নিয়েছে। অনেক মানুষ ঘরে ফিরলেও চুলা জ্বালিয়ে রান্না করে কিছু খাওয়ার মতো অবস্থা নেই তাদের। কারো কারো শুকনা খাবারও শেষ পর্যায়ে। সবাই এখন সরকারি ত্রাণের আশায় আছে। সরকারি হিসেবে যদি দুই হাজার ঘর হয়, মানে দুই হাজার পরিবার। আর ঘর যেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো ৫০ হাজার বা দুই লাখেও মেরামত করা যাবে না, এটা তাদের অনেক বড় ক্ষতি।’ তাই এ মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে তাদের জন্য। ত্রাণের জন্য জরুরি তহবিলের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সবাইকে যথাযথ সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে সম্ভব হয়েছে বলে কারো প্রানহানী হয়নি এবং উপকূলের কয়েকটি জেলায় ৭ হাজার ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল। সেখানে প্রায় সাড়ে সাত লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আর যেসব এলাকা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দ্রুতই সেগুলো আবার মেরামতের কাজ শুরু হয়ে গেছে। তা ছাড়া খাবার, পানি যা যা দরকার, সবকিছুরই ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ তাই আমরা সরকারের কাছে আশাবাদী যেসব এলাকায় এখনো খাবার সংকট ও বাসাবাড়ি মেরামত করা হয়নি দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করে দেওয়া ও অসহায়দের সাহায্য সহযোগীতা করা।