বড়াইগ্রাম উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অজুহাতে উৎকোচ আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যোগদানের মাত্র তিন মাসেই তার এমন বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে শিক্ষকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। এতে উপজেলার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি গত ১১ মে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সমন্বয় সভায় এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে হট্টগোলসহ হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, গত ২২ফেব্রুয়ারী মিজানুর রহমান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসাবে যোগ দেন। এরপর থেকেই নানা কায়দায় শিক্ষকদের কাছ থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে অর্থ আদায় শুরু করেন। শিক্ষকরা জানান, শিক্ষকদের বদলীর ছাড়পত্র, মেডিকেল ছাড়পত্র, বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অনাপত্তিপত্র নিতে তাকে চাহিদামত উৎকোচ দিতে হয়। এ ছাড়া প্রভিডেন্ট ফান্ড, অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের পেনশনের টাকা উত্তোলন, কোন শিক্ষক ডেপুটেশনে অন্য স্কুলে যাওয়াসহ কোন কাজ তিনি টাকা ছাড়া করেন না। এ ছাড়া বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে ৩-৪ বছর আগে সম্পন্ন হওয়া কাজের ফাইল দেখার নামে শিক্ষকদের বেকায়দায় ফেলে টাকা আদায় করেন। এমনকি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নামে ভয় দেখিয়েও তিনি মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। সম্প্রতি জোনাইল ইউনিয়নের কুশমাইল সংগ্রামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগের সত্যতা মিললেও তিনি মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে সে তদন্ত প্রতিবেদন ধামাচাপা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে গাড়ফা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ঝর্ণা কর্মকার বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে তিন বছর আগের স্লিপ প্রকল্পের ফাইল দেখার নামে আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নেন। কয়েকদিন পর পুনরায় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে আরো ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু আমি সে টাকা না দেয়ায় তিনি নিজে স্কুলে এসে এবং বারবার ফোন করে টাকা চাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক বলেন, সম্প্রতি রুটিন মেইনটেনেন্সের জন্য আমাদের স্কুলের নামে ৪০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ পাই। এ কাজের বিল পাশ করাতে তাকে উৎকোচ দিতে হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও কালিকাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আজমা খাতুন বলেন, ইনি আসার পর থেকে বিভিন্ন ছাড়পত্র, প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশনের টাকা তোলাসহ কল্পিত অজুহাত তৈরি করে প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে উৎকোচ আদায় করছেন। তিনি আমার কাছেও টাকা চেয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, আমি কয়েক মাস হলো মাত্র এসেছি। ডিপিও স্যারের নাম বলে টাকা চাওয়াসহ বিভিন্ন কাজের জন্য উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। আর সমন্বয় সভায় হৈ হট্টগোল হয়েছে, তবে সেটা অন্য কারণে। এগুলো সবই ষড়যন্ত্র।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা: মারিয়াম খাতুন বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।