চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র, জোয়ার ভাটার নদী, বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে আবাহাওয়া অনুকূল থাকলে বাংলা বছরের চৈত্র মাসের আমাবস্যা অষ্টমী কিংবা পূর্ণিমা তিথিতে মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। কিন্তু এবছর চৈত্র মাসে বজ্রসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়নি। বাংলা বছরের শেষ মাসে নদীতে ডিম না ছাড়লে ও ডিম আহরনকারীরা ধারনা করেছিল বৈশাখ মাসের কোন তিথিকে হয়তো মাছ নদীতে ডিম ছাড়বে। এই মাসে ও চার চারটি তিথি চলে গেলে ও মা মাছের ডিম ছাড়ার কোন আলামত দেখা যায়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং ঘূর্ণিঝড় মোখার পূর্ব থেকে নদীর পানিতে লবনাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ না পেয়ে বৈশাখ মাসে ও ডিম ছাড়েনি। চৈত্র, বৈশাখ মাসের জো/ তিথি চলে গেলে ডিম আহরনকারীরা মনে করেছিল জৈষ্ঠ্যমাসের প্রথমে আমাবস্যা তিথি/ জো তে মাছ ডিম ছাড়বে। আগামী শুক্রবার আমাবস্যা তিথি। তিথির জো মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে। জো চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত। জো শুরুর প্রক্কালে গত সোমবার রাতে শুরু হয় বজ্রসহ বৃষ্টিপাত। ঘূর্ণিঝড়ের রেশ না কাটতেই বজ্রসহ বৃষ্টি পাত দেখে ডিম আহরনকারীদের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু নদীর লবনাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়া এবং গত সোমবার দিবাগত রাতে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় পাহাড়ি ঢলের প্রকোপ না থাকায় মাছ ডিম ছাড়েনি। গতসোমবার দিবাগত রাত বজ্রসহ বৃষ্টির আলামত দেখে ডিম আহরনকারীরা ডিম সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে নদীতে প্রস্তত ছিল। কিছু সময় পর বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ডিম আহরনকারীকারীরা নদী থেকে ফিরে আসে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢলের প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে নদীর লবনাক্ততা কমে যাবে। সেই সময় হয়তে আমাবস্যা তিথির মধ্য ডিম ছাড়ার আশা করছেন ডিম আহরনকারীরা। যদি এই আমাবস্যা তিথি / জোর মধ্যে নদীতে ডিম না ছাড়ে আগামী পূর্ণিমা তিথিতে বজ্রসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয় নদীর লবনাক্ততা হ্রাস পায় তাহলে জুন মাসের জো/ তিথিতে (১ থেকে ৬ জুন) নদীতে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এই জো/ তিথিতে ডিম না ছাড়ে তাহলে পরবর্তী আমাবস্যা তিথি (১৫ থেকে ২০ জুন ) তে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন হালদা গবেষক ড,মোঃ শফিকুল ইসলাম। তিনি গনমাধ্যমকে জানান, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে লবণাক্ততাসহ অন্যান্য প্যারামিটার সমুহ আদর্শ মানের মধ্যে ফিরে আসলে এবং অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে হালদায় ডিম ছাড়বে কার্পজাতীয় মা মাছ।
তবে অনুকূল পরিবেশ না পেলে অর্থাৎ পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হলে পরবর্তী জুন মাসের পূর্ণিমার তিথি; জো (১ থেকে ৬ জুন) অথবা সর্বশেষ (১৫ থেকে ২০ জুন) অমাবস্যার তিথি/জো'তে কার্পজাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়বে।
হালদা নদী বাংলাদেশের মিঠাপানির মাছের একটি গুরুত্বপূর্ণ জলজ বাস্তুতন্ত্র। এই বাস্তুতন্ত্রে রয়েছে ছোট-বড় ৯৩ প্রজাতির মাছ, চিংড়ি ও গাঙেয় ডলফিন।
হালদা নদী কার্প জাতীয় মাছের রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ একটি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। দেশের অন্যতম এই প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে বর্তমানে চলছে কার্পজাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার ভরা প্রজনন মৌসুম। প্রজনন মৌসুমে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসের অমাবস্যা, অষ্টমী ও পূর্ণিমার তিথিতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতসহ পানির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের (পানির তাপমাত্রা, পানির স্রােত, পানির স্তর, তড়িৎ পরিবাহিতা, টারবিডিটি, দ্রবীভূত অক্সিজেন, পিএইচ ইত্যাদি) মিত্রস্ক্রিয়তায় হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ঘটে।
হালদা নদীর ডিম আহরনকারী গড়দুয়ারার কামাল সওদাগর বলেন, গত সোমবার রাতে বজ্রসহ বৃষ্টির আলামত দেখে তিনি ডিম সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে নদী পাহাড়ায় ছিলেন। কিন্তু পরিমিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং নদীতে লবনাক্ত পানি থাকায় মাছ ডিম ছাড়েনি। নদীতে স্পষ্ট লবনাক্ততা পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
একইভাবে মধ্যম মাদার্শা এলাকার ডিম সংগ্রহকারী আশু বড়ুয়া জানান, বৃষ্টি হয়েছে অনেক দিন পূর্বে। মা মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বজ্রসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের প্রয়োজন। তাছাড়া নদীতে লবনাক্ত পানির পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। লবণাক্ত পানিতে মাছ কোন সময় ডিম না ছাড়া মাছের স্বভাবজাত ধর্ম বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।