ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার লাউর ফতেহপুর ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের ও টানচারা আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে নবীনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের ভাই ও ইউপি চেয়ারম্যানের ভাগিনা অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন ও ভেকু দিয়ে ফসলি জমি ও সরকারি খাল থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকার মাটি উত্তোলন করে বিক্রির অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মাটি উত্তোলনের ব্যবহৃত চারটি ড্রেজার মেশিন, বিপুল সংখ্যক পাইপ ও সরঞ্জামাদি দুটি এক্সকাভেটর মেশিন জব্দ ও ঘটনাস্থল থেকে চার জনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- ও জরিমানা প্রদান করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার একরামুল ছিদ্দিক।
জানাযায়, নবীনগর উপজেলার লাউরফতেহপুর ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম সংলগ্ন সরকারি খাল থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকার মাটি উত্তোলন করে মুরাদনগর উপজেলার গাংগেরকুট গ্রামে মাটি বিক্রির উদ্ধেশ্যে ড্রেজার পাইপ লাইন স্থাপন করেন উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেকের চাচাতো ভাই বাশারুক গ্রামের আবদুর রহমান ও লাউরফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের ভাগিনা মুরাদনগর উপজেলার গাংগেরকুট গ্রামে আ.মোমেন। খবর পেয়ে আহম্মদপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার মাহবুব আলম ও বর্তমান মেম্বার মামুন চানমুনি সরকারসহ শতাধিক জনগন গিয়ে ড্রেজার বন্ধ করে দেয়। পরে রাতের আঁধারে পুনরায় ড্রেজার পাইপ লাইন স্থাপন শুরু করেন মাটি উত্তোলনকারীরা। এ নিয়ে স্থানীয় জণগন ও অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনকারীরা মুখোমুখি অবস্থান নিলে এলাকায় থমথমে অবস্থা তৈরি হয়ে দু'পক্ষের লোকজনের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়। মাটি উত্তোলনকারীদের দাবী তারা সরকারী অনুমতি নিয়েই মাটি কাটতে এসেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)বলছেন, সরকারী খাল থেকে মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করার অনুমতি দেওয়ার তাদের কোনো এখতিয়ার নেই,এ বিষয়ে তারা অবগত নন। পরে অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধ করতে মাটি উত্তোলনকারী আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর (১৬ মে) মঙ্গলবার লিখিত অভিযোগ দেন এলাকাবাসী। লিখিত অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার রাতেই নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুদ্দিন আনোয়ারসহ সঙ্গীয় ফোর্স ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার একরামুল ছিদ্দিক। এ সময় আবদুর রহমানের চারটি ড্রেজার,বিপুল সংখ্যক পাইপ ও সরঞ্জামাদি এবং লাউরফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের ভাগিনা পরিচয় দেয়া মুরাদনগর উপজেলার গাঙ্গেরকোট গ্রামের মোমেনের দুটি এক্সকাভেটর মেশিন জব্দ করা হয়। এলাকায় অভিযোগ রয়েছে, আবদুর রহমান নবীনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেন সাদেকের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে এলাকায় অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি অবাধে কেটে যাচ্ছে, তার মাটি কাটার কাজে বাঁধা দিলে মামলা ও হামলার হুমকি দমকি দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখান।
এবিষয়ে নবীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার একরামুল ছিদ্দিক জানান, লাউর ফতেহপুর ইউনিয়নের টানচারা আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রামের পাশে কৃষি জমি থেকে এবং সরকারি খাল থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের অভিযোগের ভিত্তিতে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুসারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে চার জনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- প্রদান করাসহ চারটি ড্রেজার, বিপুল সংখ্যক পাইপ ও সরঞ্জামাদি এবং দুটি এক্সকাভেটর মেশিন জব্দ করা হয়েছে। কৃষিজমি ও কৃষকের স্বার্থ রক্ষার্থে অভিযান চলমান থাকবে।
মাটি উত্তোলনকারী আবদুর রহমান জানান,গত বছর এসিল্যান্ড এসে মেপে দিয়ে গিয়েছে মাটি কাটার জন্য,এই মাটি দিয়ে পাশের গ্রাম গাংঙ্গেরকোট পুকুর ভড়াট করা হবে। মাটি কত টাকায় বিক্রি হয়েছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না, বলতে পারবে ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম এবং এই মাটি কাটার সাথে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যান তারা দুজনেই জড়িত আছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেক বলেন,আব্দুর রহমান আমার বংশের চাচাতো ভাই এটা সত্য, কিন্তু মাটি বিক্রির বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমাকে জড়িয়ে যারা এরকম মিথ্যা রটনা ছড়াচ্ছে আমি এর নিন্দা জানাচ্ছি।
লাউরফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান,আমরা গত বছর অনুমোদন নিয়ে কৃষি জমিতে সেচের জন্য অদখাল খননের কাজ করেছি, এবছর মাটি কাটা ও মাটি বিক্রির বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।