চলতি বোরো মৌসুমে জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ইরি-রোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ঝড় ও বৈরী আবাহাওয়া না থাকায় এ বছর বিঘা প্রতি ৫ মণ করে বেশি ধান হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে ওঠেছে। চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১৮ হাজার ৫ শত ৪৮ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়েছে।
উপজেলার চরাঞ্চলের সাতপোয়া ইউনিয়নের আদ্রা গ্রামের কৃষক জিরান আলী। মাঠে কাস্তে দিয়ে ধান কাটার কাজ করছিলেন তিনি। কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বছর ৫ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছি। প্রতি বিঘা জমি চাষ করতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। ধানের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। তবে বাজারে ধানের চাহিদা থাকলেও তার দাম খুবই কম। ৭ শত টাকা থেকে ৮ শত টাকায় ধান কিনছে ব্যাপারিরা।
তারই পাশের জমিতে কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধান কাটছিলেন নগদা গ্রামের আরেক কৃষক মোহাম্মদ আলী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বছর আমি ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। শ্রমিক দিয়ে ধান কাটার চেয়ে মেশিন দিয়ে ধান কাটলে খরচ ও সময় কম লাগে। তাছাড়া তাড়াতাড়ি ধান ঘরে তুলা যায়’। এরপর তিনি একটি প্রবাদ শুনিয়ে আরও বলেন, ‘যায় দিন বালা আহে দিন মন্দ, তাই তাড়াতাড়ি ধান গোলা বন্দি করছি। যদি! আবার বৃষ্টি চলে আসে। মেশিন আসাতে আমাদের বেশ ভালো হয়েছে কম সময়েই ধান কাটা থেকে গোলা বন্দি করা সম্ভব হচ্ছে’।
এরই পাশে খেতে ধান শুকাচ্ছিলেন এক কৃষাণি। কথা হলে ওই কৃষাণি বলেন, ‘বেশ ভালো ফলন হয়েছে। এবার বৃষ্টি হয়নি তাই খেতে ধান শুকাতে পারছি। অন্য বছর বৃষ্টি হয়ে খেত খামার ভরে যায় ধান শুকাতে অনেক সমস্যা হয়’।
সাতপোয়া ইউনিয়নের সাতারিয়া গ্রামের আরেক কৃষক আবদুল আজিজ বলেন, ‘এ বছর ঝড় না হওয়ায় ফসল নষ্ট হয়নি। তাছাড়াও জমিতে চিটা হয়নি বললেই চলে। বেশ ভালো ফলন হয়েছে, তবে বাজারে ধানের দাম কম। যদি! বাজারে ধানের দাম বেশি থাকতো তবে আরো বেশি লাভবান হতাম’।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অনুপ সিংহ বলেন, ‘আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে থেকে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ প্রদান করেছে। পর্যাপ্ত সার পাওয়ায় এবার কোনো কিছুতেই কৃষকদের বেগ পেতে হয়নি। তাছাড়া এখনো আবাহাওয়া অনুকূলে থাকায় সবত্রই বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। অন্যন্য বছর ভালো ফলন হলেও কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে কৃষকের ধান কাটার আগেই তা নষ্ট হয়ে যায়। এ বছর কালবৈশাখী ঝড় না হওয়ায় কৃষকের ফসলের কোন ক্ষতি হয়নি এবং কৃষকের ধানে চিটাও হয়নি'।
চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১৮ হাজার ৬শত ২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্জন হয়েছে ১৮ হাজার ৫শত ৪৮ হেক্টর জমি। উপজেলায় বি-আর ২৮, বি-আর ২৯, হীরা হাইব্রিড ৭৫, ৫১, ৯১, সবুজ সাথীসহ বিভিন্ন প্রজাতির উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ করা হয়। কৃ ভালো ফলন হয়েছে।