রংপুরের পীরগঞ্জে সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে ১৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে অবৈধ ইট ভাঁটা স্থাপন করা হয়েছে। ওই ভাটাগুলোতে প্রশাসন আইনি ব্যবস্থা না নেয়ায় দিনের পর দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন নতুন-নতুন ইট ভাঁটা গড়ে উঠছে। কর্তৃপক্ষ জানান,উপজেলায় এবারে ৫৪ টি ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। এরমধ্যে ৩২ টি হাওয়া ভাঁটা এবং ২২ টি নিষিদ্ধ চিমনির ভাটা। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের পালগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শালটি শমস দিঘী উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে মকবুল ইসলামের এমইউবি ভাটা,বড়দরগাহ্ ইউনিয়নের ডাসারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাত্র ২’শ মিটার দুরে জোয়াদ মন্ডলের জেবিএফ ভাটা, কুমেদপুর ইউনিয়নের বাজে শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক সাজু মাস্টারের এবিএস নামে ২টি ভাটা,একই ইউনিয়নের কুমেদপুর চকপাড়া গ্রামে ফারুক মন্ডলের এফএমবি ভাটা, মদনখালী ইউনিয়নের কাদিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাদিরাবাদ উচ্চবিদ্যালয় এবং লক্ষীপুর নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৫’শ মিটারের মধ্যে শহিদুল ইসলাম, মাজহারুল ইসলাম মাস্টার এবং মোস্তাফিজার রহমান মানিক মন্ডলের জিএনএম ভাটাসহ ৩টি ভাটা, টুকুরিয়া ইউনিয়নের মোনাইল দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাত্র ১’শ গজের মধ্যে ১ টি, ছাতুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছাতুয়া দাখিল মাদ্রাসা ও ছাতুয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাত্র দেড়’শ গজের মধ্যে সবুজ মিয়ার এসআরএম, ভাটা, বড়আলমপুর ইউনিয়নের তাঁতারপুর গুচ্ছ গ্রাম সংলগ্ন আবুল কালামের পিকেবি ভাটা, পীরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মকিমপুর ২ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাত্র ৩’শ গজ ১টি ইটভাটাএবং গঙ্গারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাত্র ১’শ মিটার দুরে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ইটভাটা,শানেরহাট ইউনিয়নের ৩টি ইটভাটার ২টিই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন। এরমধ্যে ১টি হলো শানেরহাট পার্বতীপুর গ্রামে এইচএনআর ভাঁটা এবং পার্বতীপুর উচ্চবিদ্যালয় ও পার্বতীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১’শ মিটারের মধ্যে রায়তী সাদুল্যাপুর গ্রামে জোয়াদ মন্ডলের জেবিএফ ভাটা,মিঠিপুর ইউনিয়নের একবারপুর ২নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ওই ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারন সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম সাদার এমএস বিক্স, কাশিমপুর দারুল আমান দাখিল মাদ্রাসার মাত্র ৩০ মিটার দুরে আনিছার রহমানের পিবিএস নামের ১ টিসহ ২টি অবৈধ ইটভাটা জ¦লছে দিবারাত্র। চতরা ইউনিয়নের চতরা উচ্চমাধ্যমিকবিদ্যালয়, চতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চতরা আলিম মাদ্রাসা, চতরা এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং, চতরা ২০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে মাত্র ২’শ গজ দুরে অনিক ব্রিক্স এর ইটভাটা রয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এইসব ইটভাটাগুলোর জমির মালিকানা ছাড়া কোন কাগজপত্র নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের নেই কোন ছাড়পত্র। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনেরও কোন অনুমতি নেই ভাটায় আগুন দেয়ার জন্য। সেইসাথে ইউনিয়ন পরিষদের ট্যাক্সও দেয় না ভাঁটা মালিকরা। ভাটাগুলো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবৈধভাবে প্রায় দেড় যুগ ধরে ফিল্ডে ড্রাম চিমনি দিয়ে কাঠ ব্যবহার করে ইট পোড়ানো হচ্ছে। বেশিরভাগ ভাটাতেই কয়লার বালাই নেই। ইটভাটার আশপাশের গ্রামে প্রায় বিশ হাজারের উপরে লোক বসবাস করে। ইট পোড়ানো কাঠের ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। কালো ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০ সহ¯্রাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। এ ছাড়া ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় চারপাশের অনেকে শ্বাস কষ্টে ভুগছেন। একই চিত্র প্রতিটি ইটভাটা এলাকায়। বিষয়টির প্রতিবাদ করার সাহস করছেন না সাধারণ মানুষ কিংবা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পীরগঞ্জে প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধভাবে কাঠ পুড়িয়ে চলছে এসব ইটভাটা। উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নে ৫২টি ভাঁটা ঘুরে দেখা যায় এই চিত্র। উপজেলা ভাঁটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবি বলেন, আমরা ২২ টি অবৈধ চিমনি ভাটায় কাঠ পোড়ানোর বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ভাঁটা স্থাপন ঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে কয়লার মুল্য বেশি হওয়ায় হাওয়া ভাটাগুলোতেও কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো হলে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হয়। এতে ক্রেতারা ইট কিনতে হিমশিম খাবে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটা স্থাপিত হলে আমাদের বিভাগ এটি দেখবে না। সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং প্রশাসন এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিরোদা রানী রায় বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ভাঁটা রয়েছে, শুনেছি। এ ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। কবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে ? এ ধরনের প্রশ্নে তিনি নীরব থাকেন।