২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জুলাই। বিকাল ৫ টা ২০ মিনিটে বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ছাতা আনার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরেনি স্কুলছাত্র রকি মিয়া (১২)। রকি উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের রূশন মিয়ার (৫২) ছেলে। নিখোঁজের পর হয়েছে মাইকিং। আত্মীয়-স্বজনসহ কোথাও খুঁজে পায়নি রকিকে। অবশেষে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ নভেম্বর রকির পিতা রূশন এ বিষয়ে সরাইল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন (জিডি নম্বর-১৬০৪, তারিখ-৩০.১১.২০২২ খ্রি.)। জিডি তদন্তের দায়িত্ব পান এস আই সিদ্দিক। তদন্তে চলে গেছে ১০ মাস। শিশু রকি বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তাও এখন অজানা। রকির মা সুফিয়া বেগমের আকুতি, ‘আমার সন্তানের মুখটি একটু দেখতে চাই।’ এই ব্যাকুলতা ও আকুতি পূরণের নিশ্চয়তাও দিতে পারছে না কেউ।
জিডি ও পারিবারিক সূত্র জানায়, রওশনের ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে রকি তৃতীয়। রকি শাহবাজপুর পূর্ব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত ছিল। রকির বড় ভাই রাহুল (১৮) শাহবাজপুর বাজারে ফলের ব্যাবসা করে। রাহুলের কাছ থেকে ছাতা আনার কথা বলে গত বছরের ১৮ জুলাই বিকাল আনুমানিক ৫টা ২০ মিনিটে বাড়ি থেকে বের হয় রকি। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা এরপর রাত। আর বাড়ি ফিরেনি রকি। রাতের গভীরতা বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে দিয়ে হার্টবিট বাড়তে থাকে পিতা মাতাসহ পরিবারের লোকজনের। সকল স্বজনদের বাড়ি খুঁজেও রকির সন্ধান মিলেনি। রকি নিখোঁজের বিষয়টি মাইকে প্রচার করা হয়। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর অবশেষে নিরূপায় হয়ে সরাইল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন পিতা রূশন মিয়া। ঘটনার তদন্তে, পিতা-মাতা আর স্বজনদের পথ চাওয়ায় চলে গেছে ১০ মাস। আদৌ খুঁজ মিলছে না রকির। ওদিকে শিশু সন্তান নিখোঁজের পর থেকেই খাওয়া ঘুম নেই মা সুফিয়ার। দিনে রাতে তিনি কাঁদছেন শুধু রকি বলে। মাঝে মধ্যে স্তদ্ধ হয়ে বাড়ির রাস্তায় চেয়ে থাকেন। এই বুঝি আসছে তাঁর হারানো ধন। কিছুক্ষণ পরই আবার ‘রকি নেই’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। কখনো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। আবার কখনো ফেলফেল করে শুধু তাকিয়ে থাকেন। চেহারা দেখলেই মনে হয় সন্তান নিখোঁজের বেদনায় বুকে পাথর চাপা দিয়ে বেঁচে আছেন সুফিয়া। ময়লা কাপড় ছোপড় পড়ে গ্রাম পেরিয়ে অন্য গ্রামে/ইউনিয়নে ছেলের সন্ধানে ঘুরছেন রকির বাবা রূশন। অগণিত শিশু সন্তানের দেখা মিললেও তার আদরের রকির দেখা পাচ্ছেন না। রকির পরিবারের সদস্যদের ব্যাথা বেদনায় শান্তনা দেওয়ার সাধ্য কারো নেই। নিখোঁজ রকির মা সুফিয়া বেগম বলেন, সর্বক্ষণ আমার চোখের সামনে ভাসে রকি মনার চেহারা আর হাঁসিটা। আমার বাবার কথা গুলো শুধু কানে বাজে। কোথায় আছে? কি করছে? কি খাচ্ছে? বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে আমার কলিজা? আমার রকির চাঁদ মুখটা একটি বার দেখার সুযোগ দাও। আমার বাবারে তোমরা এনে দাও। এ বিষয়ে জানতে জিডি’র তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আবু বক্কর সিদ্দিকের মুঠোফোনে (০১৮৩৪-১২১৮৩১) একাধিকবার ফোন করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।