ভূয়া সনদে চাকরি নেয়া বেসরকারী শিক্ষকদের মাঝে চাকরি হারানোর আতঙ্ক বিরাজ করছে। যশোরের মণিরামপুরে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বছরের পর বছর অনেকেই ভূয়া সনদ পত্র (নিবন্ধন) চাকরি নিয়ে শিক্ষকতা করছেন। ভূয়া নিবন্ধনধারীদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদ অবগত থাকলেও স্থানীয়ভাবে কোন পদক্ষেপ নেননি তাদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে “চাকরি হারাচ্ছেন জাল সনদধারী ৬৭৮ শিক্ষক” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে টনক নড়েছে ভূয়া সনদধারী শিক্ষকদের। ৬৭৮ জনের এ তালিকায় যশোরের মণিরামপুরে কাজল কুমার পাল, অর্পণা মন্ডল এবং ইলিয়াস কাঞ্চন নামের ভূয়া সনদধারী তিন শিক্ষকের নাম উঠে আসে। সংবাদ মাধ্যমে এ তথ্য প্রকাশের পর প্রায় শতাধিক শিক্ষক চাকরি হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানাযায়, উপজেলার সুবলকাটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ভূয়া সনদ (নিবন্ধন) এ সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘ বছর বহাল তবিয়তে চাকরি করে আসছেন তিন শিক্ষক। তারা হলেন, সহকারী শিক্ষক কল্যাণ কুমার রায়, সন্ধ্যা মন্ডল ও শিমুল রায়। এদের মধ্যে গণিত শিক্ষক হিসেবে কল্যাণ কুমার রায় ২০১০ সালের ১ জুলাই যোগদান করেন। ওই বছর ১ নভেম্বর থেকে তিনি সরকারীভাবে বেতনভাতা তুলে আসছেন। তার বেতন (ইনডেক্স) সূচক নং- ১০৫২৯৪০। ২০০৯ সালে পাশ ৩১২১১৪৫১ রোল নম্বরধারী একটি সনদের মাধ্যমে চাকরি নেন তিনি। যেটি ভূয়া সনদ বলে জোরালো অভিযোগ রয়েছে।
শরীর চর্চা শিক্ষক হিসেকে সন্ধ্যা মন্ডল এ বিদ্যালয়ে যোগদান করে ১ জুলাই ২০১০ তারিখে। ওই বছরের ১ লা নভেম্বর থেকে সরকারী বেতন ভাতা গ্রহন করছেন। ২০০৭ সালের ৩১১৯০২৬৪ রোল নম্বরধারী সনদ (নিবন্ধন) এর মাধ্যমে তিনি চাকরি নিয়েছেন। যেটিও ভূয়া সনদ বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল ওই বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে চাকরি নেন শিমুল রায়। তিনি একই পদ্ধতিতে বেতন-ভাতা গ্রহন করে আসছেন। ০০১৫১৩১/২০০৯ নম্বরধারী একটি সনদ দাখিলের মাধ্যমে তিনি বহল তবিয়তে চাকরি করছেন। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ হলেও পদক্ষেপ নেননি কেউ। তবে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্রধান শিক্ষক দীপক কুমার ঘোষ জানান, আমার হাত নিয়ে ওই তিন শিক্ষকের নিয়োগ হয়নি। এক পর্যায় তিনি সংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, কেন খামাখা তাদের পিছনে লাগা হচ্ছে।
ভূয়া সনদে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে উত্তম কুমার পালিত নামে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তিনি পাঁচবাড়িয়া-পাঁচকাটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। তবে তার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আশিস কুমার বলেন, ভূয়া সনদ সংক্রান্ত বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। ভূয়া সনদে চাকরি করার অভিযোগ রয়েছে শৈলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম) প্রশান্ত কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম ভূয়া সনদের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “সরকার যখন ধরবে, তখন সে বাড়ি যাবে”। এতে অন্য কারোর ক্ষয়-ক্ষতি হবে না।
শ্রীপুর আলিম মাদ্রাসায় নূর-জাহান খাতুন নামে একজন ভূয়া সনদে সহকারী শিক্ষক (গণিত) হিসেবে চাকরি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই শিক্ষক নূর-জাহানের ভাই আমিন হোসেনও ভূয়া সনদের মাধ্যমে কাশিপুর আলিম মাদ্রাসার এবতেদায়ী সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছেন। নূরজাহান ও তার ভাই আমিন হোসেন প্রথমে জয়নগর দাখিল মাদ্রাসায় (নন-এমপিও) শিক্ষক ও অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মণিরামপুর মহিলা আলিম মাদ্রাসায় ভূয়া সনদে শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছেন শরিফা খাতুন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মহাসিন হোসেন বলেন, আমি তো সবেমাত্র এ মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছি। নিয়োগে কার কি সমস্যা তা আগের সুপার বজলুর রহমান জানতেন।
এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, অবৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্তরা অবশ্যই একদিন ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। ধরা পড়লে চাকরি হারাবেন। সরকারের অর্থ ফেরত দেয়া ছাড়াও ফৌজদারি মামলায় জেল-জরিমানার সম্ভবনাও রয়েছে।