ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা পরিষদের দুই ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ও মামলা, নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও তার স্বামী হাবীবুর রহমান এক কোটি ৪ লাখ ১৪ হাজার ৭৬৪ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ ভোগদখলে রাখায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। বৃহস্পতিবার (২৫ মে) কুমিল্লা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাফি মো. নাজমুস্ সাদাৎ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। অপরদিকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেন সাদেকের বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদের ২১ ধারা আইন লংঘন,অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে (২৫ মে) স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন হেফাজত ইসলামের নেতা ও নবীনগর পূর্ব ইউনিয়নের বগডহর গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা মেহেদী হাসান। দুই চেয়ারম্যানের দুর্নীতির অভিযোগ ও মামলা ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়েছে নবীনগর।
জানাযায়, নবীনগর উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেত্রী মোসাম্মাৎ শিউলি আক্তারের পারিবারিক ব্যয়সহ তার সম্পদের পরিমাণ এক কোটি ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৪৪৭ টাকা। এ সম্পদ অর্জনের বিপরীতে ২০১৪-১৫ কর বর্ষে আয়কর নথি খোলার পূর্বের বছরগুলোতে বিভিন্ন আয় এবং আয়কর নথি খোলার পরের ব্যবসা, বাড়িভাড়া ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাপ্ত ভাতাসহ তার এক কোটি ১২ লাখ ১১ হাজার ৩৪৯ টাকার আয়ের উৎস পাওয়া যায়। তার নামে অর্জিত সম্পদের চেয়ে ৭৯ লাখ ২৫ হাজার ৯৮ টাকার আয়ের উৎস কম পাওয়া যায়।
অপর দিকে শিউলি আক্তারের স্বামী, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের স্টোর কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের পারিবারিক ব্যয়সহ তার মোট সম্পদের পরিমাণ এক কোটি ৩ লাখ ৭৮ হাজার ১৭৪ টাকা। ওই সম্পদ অর্জনের বিপরীতে ২০১৭-১৮ কর বর্ষে আয়কর নথি খোলার সময় পূর্বের বছরগুলোতে চাকরির বেতন-ভাতা হতে সঞ্চয় এবং আয়কর নথি খোলার পরের বেতন-ভাতাসহ আয় পাওয়া যায় ৭৮ লাখ ৮৮ হাজার ৫০৮ টাকা। তার নামে অর্জিত সম্পদের চেয়ে আয়ের উৎস ২৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৬ টাকা কম পেয়েছে দুদকের অনুসন্ধানে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কুমিল্লা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফজলুল হক জানান, মো. হাবিবুর রহমান ও তার স্ত্রী শিউলি আক্তার একে অপরের সহযোগিতায় এক কোটি ৪ লাখ ১৪ হাজার ৭৬৪ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ ভোগদখলে রেখেছেন। সে কারণে তাদের স্বামী-স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
অপরদিকে মাওলানা মেহেদী হাসানের অভিযোগপত্রের সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদের ২১ ধারা আইন লংঘন করে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেক তার নিজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইসলাম ট্রের্ডাসের নামে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজসহ ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিভিন্ন প্রকল্প। উপজেলার গুচ্ছ গ্রামে গ্রীন ভিলেজ প্রকল্পে নি¤œমানের কাজ করে কোটি টাকা আত্মসাধ করাসহ ওই প্রকল্পের প্রায় ৬০টি ঘড় বর্তমানে ঝুঁকিপুর্ন অবস্থায় থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে কৃষি জমির মাটি বিক্রী করা, বাঙ্গরা বাজারে সড়ক ও জনপথের সড়কের দুই পাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠা দোকানের উচ্ছেদ অভিযান ঠেকাতে ব্যবসায়ীদের কাছ নিচ্ছে মোটা অংকের চাঁদা,টি আর কাবিখা ও জেলা পরিষদের বহু প্রকল্পের নামে মাত্র কাজ করেই অর্ধ আত্মসাধ করা,মাদক সেবনকারী ও বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখা, এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কাজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাজ আদায় করে নেওয়ার এবং নবীনগর উপজেলার একটি স্বর্নের দোকানে ডাকাতি হওয়ার মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
অভিযোগকারী মাওলানা মেহেদী হাসান বলেন, জাকির হোসেন সাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে, অভিযোগগুলো তদন্ত করলে শতভাগ সত্যতা পাওয়া যাবে।
অভিযোগ অস্বিকার করে জাকির হোসেন সাদেক বলেন, চেয়ারম্যান হওয়ার আগ থেকেই আমি একজন ঠিকাদার, বগডহর গ্রামে একটি স্কুলের কাজ করছি, ওই কাজ করতে গেলে মেহেদী হাসান আমার কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করে, আমি তাকে চাঁদা না দেওয়ার কারণে সে আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র করছে।