অপরিশুদ্ধ পানি পান করার মাধ্যমে অথবা সেই পানি বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের ফলে যে ধরনের ব্যাধি সংক্রামিত হয়, তাকেই পানিবাহিত রোগ বলে। জীবাণু দ্বারা দূষিত পানির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে পানিবাহিত রোগ। পানিবাহিত রোগ সারা বিশ্বেই আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অনুন্নত বিশ্বে শিশুদের পানিবাহিত রোগ ব্যাপকভাবে আক্রমণ করে। প্রতিবছর বিশ্বে পানিবাহিত রোগে ১৫ লাখ লোক আক্রান্ত হয় এবং অজ্ঞতা, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, অর্থনৈতিক দৈন্যতা, সর্বোপরি স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবে ৮ লাখ ৪২ হাজার লোক অকালে মৃত্যুবরণ করছে। নানাভাবে পানিবাহিত রোগ ছড়ায়। বিভিন্ন জায়গায় সুপেয় পানির অভাব রয়েছে। দূষিত পানি পান করে অনেকেই ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিস, টাইফয়েডসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হন। অনেকেই নদী, খাল-বিলের আশপাশে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করেন। এ পয়োবর্জ্য এবং ওই এলাকার বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনায় জলাশয়ের পানি দূষিত হয়ে পড়ে। দূষিত পানি টিউবওয়েলের পানি, বিভিন্ন কাঁচা শাকসবজিতে মিশে সেসবও দূষিত করতে পারে। ভালোভাবে হাত-মুখ না ধুয়ে খাবার খেলে পানিবাহিত রোগের জীবাণু পেটে গিয়ে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। অনেক ধরনের পানিবাহিত রোগ রয়েছে, যেমন-ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড ও জন্ডিস। পানিতে মিশে থাকা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস প্রভৃতি জীবাণুর মাধ্যমে ডায়রিয়া রোগ ছড়ায়। কলেরাও একটি মারাত্মক রোগ। দূষিত জীবাণুযুক্ত পানি পান করলে এ রোগ হয়। পাতলা পায়খানার সঙ্গে প্রচুর বমি কলেরার লক্ষণ। সলমনেলা টাইফি এবং প্যারাটাইফি নামক পানিবাহিত জীবাণুর কারণে যে রোগটি হয় তাকে টাইফয়েড বলে। জন্ডিস একটি পানিবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। এটি লিভারকে নষ্ট করে ফেলতে পারে। জন্ডিসের ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বেশির ভাগ পানিবাহিত রোগের লক্ষণ হলো-পাতলা পায়খানা, বমি, জ্বর ও পেটব্যথা। এসব রোগ থেকে বাচতে হলে চতেনতার কোন বিকল্প নেই। তাই খাবার সব সময় ঢেকে রাখতে হবে। তা না হলে খাবারে মশা-মাছি বসবে। এতে কলেরা ও ডায়রিয়া রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। পানির উৎসের কাছাকাছি মলত্যাগ করা যে সবার জন্যেই ক্ষতিকর, এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে। বাড়ির বাইরে বের হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি সঙ্গে নিতে হবে। পানি খাওয়া ও খাওয়ার আগে ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করতে হবে। ১০ মিনিট ফোটানোর পর কিছুক্ষণ রেখে দিলে পানির বেশির ভাগ জীবাণু মরে যায়। রাস্তা বা ফুটপাতের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। সচেতনতাই পারে মহামারী বিপদ থেকে রক্ষা করতে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে চারটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান যেমন- সাবান, নিরবিচ্ছিন্ন বিশুদ্ধ পানি, হাত জীবাণুমুক্ত করতে আলকোহলমিশ্রিত উপাদান, গ্লাভস এবং জীবাণুমুক্ত ধারালো সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন। জনসচেতনতাই পারে পানিবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে।