ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিষয়টা ধুমপান সেবনকারী ব্যাক্তিরা জানলেও বাংলাদেশের প্রায় বেশিরভাগ মানুষই ধূমপান করে থাকেন।
চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের এখনো অনেক সময় বাকী। তার আগেই লালমনিরহাটে সব ধরনের সিগারেটের দাম বেড়েছে। ফলে লালমনিরহাটের বিভিন্ন ক্ষুদ্র মুদির দোকানে সিগারেট সময় মত পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা যায়।
ইতিমধ্যে খুচরা বাজারে সব সিগারেটের শলাকা প্রতি দাম বেড়েছে এক থেকে ২ টাকা পর্যন্ত। অনেক স্থানে ৩ থেকে ৪ টাকাও বেশি নেয়া হচ্ছে।
আসন্ন বাজেটে তামাকজাত দ্রব্য বা সিগারেটের দাম বাড়বে কি বাড়বে না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। কিন্তু তার আগেই খুচরা বাজারে বেড়ে গেছে সিগারেটের দাম।
লালমনিরহাট সদরের বড়বাড়ি বাজারে সোনালী ব্যাংকের সামনে ক্ষুদ্র একজন পান সিগারেটের দোকানদার দুলাল চন্দ্র রায় ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ডিলার থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সব সিগারেটের বাড়তি দাম রাখতে শুরু করেছেন। আমার দোকানে প্রতিদিন বেনসন সিগারেট লাগে ১০ প্যাকেট আর কোম্পানি আমাকে দেয় দুই প্যাকেট। তাহলে আমি কাস্টমারের চাহিদা মেটাবো কি করে? তাই আমাকে বাড়তি দাম দিয়ে সিগারেট কিনে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
জেলা শহরের মিশনমোড়ের সিগারেট সেবন করতে আসা রবিউল নামে এক ব্যবসায়ী দাবি করেন ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, দোকানদার ধূমপায়ীদের কাছে বাড়তি মূল্যে সিগারেট বিক্রি করছে। অথচ কোম্পানীর লোক বলছে আমরা আগের দামেই দোকানদারদের সিগারেট দিচ্ছি। তাহলে তারা বেশি দাম নিবে কেন?
একই এলাকার ধুমপায়ী সোবহান মোল্লা ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, আগামী বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের দাম বাড়ার কথা শোনা যাচ্ছে বলেই সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
জেলা শহরে কাজ করা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সাংবাদিক ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, যেহেতু আমি একজন সংবাদ কর্মী সে কারণেই আমি এই বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি যে কোম্পানি দাম না বাড়ালেও খুচরা দোকানীরা সিগারেটের বাড়তি দাম নিচ্ছে। এজন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষনের কর্মকর্তা বাজার মনিটরিং না করায় এই সুযোগ নিচ্ছে কোম্পানি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।
প্রতি বছরই জাতীয় বাজেটে বাড়ানো হয় তামাকপণ্যের দাম। আর এ কারণেই বাজেট ঘোষণায় আগেই সিন্ডিকেট করে সিগারেটের দাম বাড়িয়ে দেন ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটররা। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। বাজেটে দাম বাড়বে এ আশায় সিগারেট দিচ্ছে না সিন্ডিকেট ডিস্ট্রিবিউটরা এমন দাবি খুচরা বিক্রেতা আইরিন স্টোরের মালিক হারুনের। তিনি বলেন, আমার মত শত শত খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, গত এক থেকে দুই সপ্তাহ কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটররা সিগারেট সরবরাহ করছেন না ঠিকমত। তাই বাধ্য হয়ে ডিলারদের কাছ থেকে আগের দামের থেকে বেশি দামে সিগারেট কেনার ফলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির ফলে লালমনিরহাট সহ সারা দেশের ধুমপায়ীদের ধূমপান করতে হলে সিগারেট কিনতে হবে বেশি দামে।
পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের এক সিএন্ডএফ এজেন্ট ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, প্রতি শলাকা বেনসন সিগারেট এক থেকে ২ টাকা বেড়ে এখন ১৮ নিচ্ছে, আর গোল্ডলিফ এক টাকা বেড়ে ১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কিন্তু অনেক সময় ভাংতি ১ টাকা না থাকার অজুহাত দেখিয়ে দোকানদাররা ২ টাকা নিচ্ছে।আগে যে মার্লবোরো সিগারেট প্রতি শলাকা ১৬ টাকায় বিক্রি হতো বা আমরা কিনতাম, এখন তা বেড়ে ১৭ টাকা হয়েছে। তবে রয়েল, ডার্বি, হলিউড আগের দাম ৫ টাকায় বিক্রি হলেও কিছুকিছু জায়গায় ৬ টাকাতেও বিক্রি করচে।
শহরের থেকে গ্রামের মুদির দোকানের অবস্থা আরো করুন, কারণ পরিবহন ব্যবস্থা ও ডিস্ট্রিবিউট জনবল কম থাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীগণ ঠিক মত পাচ্ছে না সিগারেট। ডিলার থেকে অল্প পরিসরে সিগারেট ক্রয় করে তারা প্রতি শলাকা ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে।
খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, চাহিদা মতো সিগারেট মিলছে না। ডেলিভারি দেওয়া বন্ধ রয়েছে বেশ কিছু ব্রান্ডের সিগারেট। এদিকে বাজেটের আগে সিগারেটের দাম বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ ধূমপায়ীরা।
লালমনিরহাটের বৃটিশ ট্যোবাকোর এজেন্ট এশিয়া টিক এর স্বত্বাধিকারী মিশুক ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, তারা নিয়মিত সিগারেট সরবরাহ করছেন। তবে পরিমানে এ অঞ্চলে একটু কম দেয়া হচ্ছে।খুচরা বিক্রেতারা বাজেটের পর বাড়তি দাম পাওয়ার আশায় সিগারেট লুকিয়ে রাখছেন। তারাই বাজারে সিগারেটের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন।