স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে গেছি আমরা। অর্থনীতি, সামাজিক অনেক সূচকেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা চলমান। নানা খাতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সুফল পাঁচ্ছে দেশের মানুষ। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে হৃদরোগ, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো নানা অসংক্রামক রোগ। কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অবশ্যই জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, সুস্থ মানুষের শ্রমের বিনিময়েই দেশ সমৃদ্ধ হয়। এজন্যই জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) লক্ষ্য ৩-এ সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের জীবনাচরণ ও অভ্যাসজনিত কারণে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাঁচ্ছে। এসব রোগের পেছনে একটি বড় কারণ তামাক ব্যবহার। আর এ তামাকমুক্ত দেশ গড়তে ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালিত হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে ১৯৮৭ সালে স্বাস্থ্যের নানা ঝুঁকি বিশেষ করে তামাকের মৃত্যু ও অসুস্থতা রোধে বছরে একটি দিন ধূমপান থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করে এপ্রিলের ৭ তারিখ তামাকমুক্ত দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত হয় এবং এক বছর সেটা পালনও করা হয়েছে। সেটা ছিল ২৪ ঘণ্টা ধূমপান না করার অঙ্গীকার। কিন্তু ১৯৮৮ সালে আর একটি রেজ্যুলিউশান গ্রহণ করে মে মাসের ৩১ তারিখ বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এই দিনেও ২৪ ঘণ্টা কোন প্রকার তামাকদ্রব্য ব্যবহার না করার অঙ্গীকার করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাকমুক্ত দিবস নিয়ে ভাবলেও তার সব সদস্য রাষ্ট্রের সম্মতিতে একটি সনদ করতে পেরেছে মাত্র ২০০৪ সালে, যা ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশান অন টোবাকো কন্ট্রোল (সংক্ষেপে এফসিটিসি) নামে পরিচিত এবং এই সনদের আলোকে সরকারগুলো নিজ নিজ দেশে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করে। বাংলাদেশ সরকার এই ব্যাপারে খুব তাড়াতাড়ি সাড়া দিয়েছে। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন 'ধূমপান ও তামাকদ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫' প্রণীত হয়েছে যা ২০১৩ সালে একবার সংশোধিত হয়েছে, এখন আবার সংশোধনের প্রক্রিয়ায় আছে। আইনকে বাস্তবায়নযোগ্য করে তোলার চেষ্টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য তামাক যে হুমকি সৃষ্টি করেছে, তা নিয়ে আর কোন বিতর্ক নেই। প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর ১৯% তামাক সেবনের কারণে হয়, সংখ্যায় বছরে গড়ে ১,৬১,০০০ মানুষ তামাক সেবনের কারণে মারা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৮ সালে এই তথ্য দিয়েছে। হৃদরোগ সংক্রান্ত মৃত্যুর ২৪% তামাকসেবীদের হয়। এত অসুস্থতা, এত অকালমৃত্যু একটি জাতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই দেশের জনগনের কথা ভেবে আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে 'তামাকমুক্ত বাংলাদেশ' গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। তবে তামাকমুক্ত দেশ গড়তে শুধু পরিকল্পনা গ্রহণ করলেই চলবে না। এর জন্য 'আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে 'তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে তামাক চাষ, তামাক কোম্পানির আয় থেকে নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে রোডম্যাপ গ্রহণ করতে হবে সরকারকে। পাশাপাশি তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার, তামাক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে সরকারি কর্মকর্তাদের রাখা, কৃষি মন্ত্রণালয়ে তামাক পাতার দাম নির্ধারণে কমিটি রাখা বন্ধ করতে হবে এবং দেশের তরুণ সমাজকে তামাকের ছোবল থেকে বাঁচাতে হবে। তামাক কোম্পানির সকল ধরনের অপচেষ্টা এখনই প্রতিরোধ করতে হবে, নয়তো জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের পদক্ষেপসমূহ ও এর বাস্তবায়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।