প্রথম বিশ্বে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমলেও বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমান্নয়ে বাড়ছে। যদিও প্রতিবছর বাজেটে সিগারেটের ওপর কর বাড়ছে। কিন্তু আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ধূমপায়ীর সংখ্যা না কমে বাড়ছে। একই সাথে তামাক চাষও বাড়ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের ‘টোব্যাকো গ্রেট টু আওয়ার এনভায়রনমেন্ট’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের দেড় কোটি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ সিগারেট পান করেন। অন্যদিকে বিড়ি সেবন করেন ৫৩ লাখ মানুষ। আর দু’কোটি ২০ লাখ মানুষ ধোয়াবিহীন তামাক সেবন করেন। এমন পরিস্থিতির মাঝে ৩১ মে ‘ তামাক নয়, খাদ্য ফলান’ প্রতিবাদ্য নিয়ে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে এবং জনস্বাস্থ্যকে মাথায় রাখতে প্রতিবছর বাজেটে কর বৃদ্ধি করা হলেও কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। বিদায়ী অর্থবছর ২০২২-২৩ বাজেট এতে অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়। প্রতিবছর বাজেটেই তামাকের ব্যবহারের কথা বলা হয়ে থাকে। আর এজন্য আগের বছরের তুলনায় বেশি কর আরোপ করা হয়। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়লেও ধূমপানকারীর সংখ্যা কমছে না। ২০১০-১১ অর্থ বছরে তামাক ও তামাকজাত পণ্য থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল ৭ হাজার ৬৯১ কোটি টাকার বেশি। আর ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে এ আয় বেড়ে ২৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকার বেশি। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এ আয় ৩০ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা ছাড়ায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুসারে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে দেশে প্রিমিয়াম, উচ্চ, মাঝারি ও নিম্নস্তরের ৭ হাজার ১৫৯ কোটির বেশি সিগারেট শলাকা বিক্রি হচ্ছে। পরের বছর তা বেড়ে হচ্ছে, ৭ হাজার ৫৬৪ কোটির বেশি। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ৫ হাজার ১৯৫ কোটি সিগারেট শলাকা বিক্রি হয়েছে। যদি মাস বিত্তিক হিসাব বিবেচনা নেওয়া হয়, তাতে দেখা যায় এ বছরও সিগারেট বিক্রি আগের বছর ছাড়িয়ে গেছে। আসলে নিত্যপন্যের দামের তুলনায় আরও সস্তা হয়ে পড়েছে তামাক পণ্য। সিগারেটের দাম চলতি বাজেটে (২০২২-২৩) বাড়ানো হয়েছে মাত্র দু’দশমিক ৫৬ শতাংশ। বাহুল ব্যবহৃত জর্দা, গুল ও বিড়ির দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ফলে তামাক পণ্যের প্রকৃত মূল্য হ্রাসের জন্য তরুণ ও নিম্ন আয়ের মানুষ এসব পণ্যের ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছে, যা জন স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। বাংলাদেশ বিশ্বের নবম বৃহত্তম তামাক ব্যবহারকারী দেশ। দেশের ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার করে। তামাক ব্যবহারের কারণে ১ লাখ ৬১২ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজি স্টাডি ২০১৯ এর অনুসারে বাংলাদেশে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। তামাকের জন্য এসব ক্ষতি হলেও দেশের তামাক চাষের এলাকা ও এর উৎপাদন বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরো (বিবিএস) বলছে, ২০২০-২১ সালে দেশে ৯৯ হাজার ৬০০ এককের বেশি জমিতে তামাক চাষ হয়। এ সময় ৮৯ হাজার ২ মেট্রিক টন তামাক উৎপাদিত হয়। পরের অর্থ বছরে তামাক চাষের জমি এলাকা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৮৪ এককের বেশি। আর তামাক উৎপাদন হয় ৯২ হাজার ৩২৬ মেট্রিক টন। তামাক উৎপাদন এবং ব্যবহারের এ ভয়াবহ চিত্র আমাদের সামনে থাকলেও আমরা এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারছি না। করোনা মহামারি ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পর সারা দেশেই খাদ্য পণ্যের দাম বেড়েছে। ফলে এখন ঘাতক তামাকের চাষ থেকে দুরে সরে দেশের খাদ্য দেশে উৎপাদন করা সময়ের দাবি। তাই ধূমপান ছেড়ে আসুন এবারের তামাক মুক্ত দিবসের শ্লোগান বাস্তবায়ন করি। এতে সবার মঙ্গল। নিজে বাঁচি অন্যের বাচার পথ নির্বিঘ্ন করি ধূমপান ত্যাগ করে।