পরিবেশের ভালো মন্দ মানুষের কৃতকর্মের ফল। দিন দিন পরিবেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। পরিবেশ মানবসভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু নানা কারণে পরিবেশ দূষণ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করায় মানবসভ্যতা আজ চরম হুমকির মুখে। মানুষ নিষ্ঠুরভাবে প্রকৃতি পরিবেশকে বিনাশ করছে। প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এই যে নির্বিচারে আমরা সৃষ্টিকর্তার সাজানো প্রকৃতির বিনাশ করছি, এতে চূড়ান্ত ভুক্তভোগী কে হচ্ছে? বিভিন্ন প্রাণীসহ মানুষ প্রকৃতির রোষানলে পড়ছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে। আমরা পরিবেশ দূষণ করছি হরদম। পানি দূষণ, বায়ু দূষণ, মাটি দূষণ, শব্দ দূষণ, চারদিকে দূষণ আর দূষণ। পরিবেশের দূষিত উপাদান আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। সাগরের পানি দূষিত হওয়ায় বিপন্ন অনেক জলজ জীবন। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে মৌমাছির সংখ্যা কমছে আশঙ্কাজনক হারে। পরাগায়নের মাধ্যমে আমাদের বিপুল পরিমাণ খাদ্য উৎপাদনে মৌমাছির বিকল্প নেই। তাদের এই দুরবস্থা আমাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। জাতিসংঘের পরিবেশ প্রোগ্রামরে হিসাব মতে, পৃথিবীর ৯২ শতাংশ মানুষ দূষিত বাতাসে শ্বাস নেয়। বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয় এই অবস্থার উন্নতিতে। মহাবিশ্বে পৃথিবী নামের এই গ্রহ ছাড়া আমাদের বসবাসের জন্য আর অন্য কোনো জায়গা নেই। কাজেই একে আমাদের বসবাসযোগ্য রাখা একান্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিবেদন ও কিছু গবেষণা প্রবন্ধে দেশের বেশকিছু এলাকায় ভূমির স্বাস্থ্য ভালো নেই বলে জানানো হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিক্ষয়, যশোর জেলার জলাবদ্ধতা ও দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততার কারণে এসব জায়গায় ভূমির অবনয়ন ঘটেছে। এ ছাড়া দেশের অনেক এলাকার জমি নানা ধরনের দূষণের শিকার। পরিবেশ সুরক্ষার ৪০টি বিষয়কে মানদণ্ড ঠিক করে ইপিআই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বায়ুর মান, জ্বালানি ও জলবায়ু, বায়ু দূষণ, পানিসম্পদ, ভারী ধাতু বা হেভি মেটাল, জীববৈচিত্র্য ও তাদের বসতি এলাকা, বনভূমি, মৎস্যসম্পদ ও কৃষি খাত। এর মধ্যে কৃষি ও মৎস্যসম্পদে বাংলাদেশের অবস্থা বেশ ভালো। বাকিগুলোতে অবস্থা নিচের সারিতে। ইপিআইয়ের ২০১৮ সালের তালিকায় বাংলাদেশ ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭৯তম। বাংলাদেশে ২৫ ভাগ বনভূমি থাকার কথা আছে মাত্র ১৬ ভাগ। পরিবেশের ভারসাম্য ধরে রাখার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে ভূমিকা পালন করতে হবে। যাতে নিজেরা নিজেদেরকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত না করি। আর যদি পরিবেশ ভালো থাকে, তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে যাবে। ফলে মানুষ ফুসফুসের বিভিন্ন জটিল রোগ থেকে মুক্তি পাবে।