একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, পরিবেশ বান্ধব স্মার্ট ও মানবিক শহর গড়ে তোলার প্রত্যাশা করে শতভাগ নিষ্ঠা, সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে বরিশাল সিটি করপোরেশনকে পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত।
নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আয়োজনে টিয়াখালি আনসার উদ্দিন মল্লিক কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত উঠান বৈঠকে প্রধান অতিথি বক্তব্যে মেয়র প্রার্থী বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, বরিশালে ১০ বছরে কোন উন্নয়ন হয়নি। কোন দাতা সংস্থা সাহায্য করেনি। সরকার থেকেও কোন বরাদ্দ আনতে পারেনি। এখানে চলতে গেলে দুর্গন্ধ আসে। মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে। বিগত ১০ বছরে বরিশাল সিটি করপোরেশনে এমন কোন জনপ্রতিনিধি আসেনি যিনি কিনা যোগ্য ছিলেন। যোগ্যতা না থাকায় কোন উন্নয়নই করতে পারেনি।
খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল নগরীর উন্নয়নের কথা চিন্তা করে আমাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়েছেন। যেকারণে নৌকা মার্কার প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন আগামী ১২ জুনের নির্বাচনে নৌকা মার্কার বিজয় নিশ্চিত করতে আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের ভয়াবহ নির্মম হত্যাকান্ডের আমি একজন প্রত্যক্ষদর্শী। ইতিহাসের নারকীয় হত্যাকান্ডের ঘটনায় ঘাতকের বুলেটবিদ্ধ হয়ে আজও আমি বেঁচে আছি। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে বরিশাল নগরবাসীর সেবক হিসেবে সম্মানের সাথে কাঙ্খিত সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে মেয়র প্রার্থী হয়েছি। দীর্ঘদিন উন্নয়ন বঞ্চিত বরিশাল নগরবাসীকে কাঙ্খিত উন্নয়নসহ বরিশাল সিটি করপোরেশনকে আধুনিক জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। নগরবাসীকে সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে সব ধরনের হয়রানি মুক্ত দ্রুত সেবা প্রদানের জন্য আমি অঙ্গীকার করছি।
আগামী ১২ জুন সকল ভোটারকে কেন্দ্রে গিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে বরিশাল সিটি করপোরেশনকে একটি উন্নত ও আদর্শ করপোরেশনে রূপ দিতে খোকন সেরনিয়াবাত নগরবাসীর প্রতি আহবান করেছেন। উঠান বৈঠকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহমেদের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, লস্কর নুরুল হক, আনিসউদ্দিন আহম্মেদ শহীদ, মাহমুদুল হক খান মামুন প্রমুখ। অপরদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা মো. মিজানুর রহমান মিজানের নেতৃত্বে নগরীতে সর্ববৃহত শো-ডাউন নিয়ে নৌকার সমর্থনে গণসংযোগ করা হয়।
আলেম সমাজের সমর্থন ॥ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতকে বরিশালের সর্বস্তরের আলেম-ওলামারা সমর্থন জানিয়ে নৌকার পক্ষে গনসংযোগ ও র্যালি করেছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টায় নগরীর সদররোডস্থ সার্কিট হাউজের বিপরীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় নগরীর সর্বস্তরের আলেম-ওলামারা নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়েছেন। অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নৌকার প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট কে বি এস আহম্মেদ কবির। ওলামা লীগের মহানগর সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান আনসারীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভা শেষে নগরীর বিভিন্নস্থানে নৌকা মার্কার সমর্থনে গনসংযোগ ও র্যালি বের করা হয়। একইদিন বিকেল পাঁচটায় বরিশাল ক্লাবে নৌকা মার্কার সমর্থনে ১৪ দলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না ॥ জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙল মার্কার মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রূপাতলী হাউজিং মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় উঠান বৈঠকে বলেছেন, ভোট চুরির আশঙ্কা বেড়ে গেছে। আমাদের কাছে খবর আছে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে গোপন মিটিং হয়েছে। এসব তামাশা বন্ধ করুন ফলাফল ভালো হবেনা। তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে কাফনের কাপড় পড়ে মাঠে থাকবো। আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করিনা। লুটপাটের দিন শেষ হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছে। চুরি করলে পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না। বরিশাল থেকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে। জনগণ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে শতভাগ বিজয় হবে। আমি মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে নিজে চুরি করবো না, আর কাউকে চুরি করতেও দেবনা। অধ্যাপক রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল করিম ভূইয়া বলেন, আমরা দেখতে এসেছি কারা এবার চুরি করে। ভয় পাবেন না, ওদের চুরি করার সাহস নেই। প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, সারাদিন নগরী ঘুরে দেখলাম। এবার ভোট হলে লাঙলের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, পাগলা ঘন্টা বেজে উঠেছে। সাবধান এবার ভোট চুরি করার চেষ্টা করলে পরিনতি ভয়াবহ হবে।
১৭ দফা ইশতেহার ঘোষণা ॥ আগামী ১২ জুনের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হলে ‘বরিশালকে একটি উন্নত, দুর্নীতি-সন্ত্রাস ও দূষণমুক্ত শান্তির নগরী’ হিসেবে স-প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গীকার করে ১৭ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা মার্কার মেয়র প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিম। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগরীর বান্দরোডস্থ একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি ইশতেহার তুলে ধরেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থীর পর এবার ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশতেহার ঘোষণা করলেন। তার ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে -দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, স্বচ্ছতা আনয়ণ, জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ, নগরবিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন, নগর সরকার গঠনে কার্যকর উদ্যোগ, পানি সমস্যার সমাধান, খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণ, ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিকল্পনা ও মাতৃসদন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ। ইশতেহার ঘোষণাকালে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যাযের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দুর্নীতি মুক্ত করবো ॥ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে টেবিল ঘড়ি মার্কার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপন বলেছেন, আমি নির্বাচিত হলে বরিশাল সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলবো। তরুণ প্রজন্মের শিক্ষিত মানুষ হিসেবে আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করলে আপনাদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা এবং নগরীর উন্নয়নে সবসময় ভূমিকা রাখার চেষ্টা করবো। নগরীর পলাশপুরে গণসংযোগকালে তিনি আরও বলেন, আমার মরহুম বাবা সাবেক সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল তার সারাটিজীবন মানুষের জন্য কাজ করেছেন, সেই আদর্শ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমিও আপনাদের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই। সেজন্য আপনারা আগামী ১২ জুন টেবিল ঘড়ি মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবেন।