এসএসসি পরীক্ষার মাঝামাঝি সময়ে পটুয়াখালীতে শুরু হয় শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। যে কারণে পরীক্ষার্থী, অভিভবাবক এবং সুশিল সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এরপর বিদ্যুৎ লোডশেডিং এর ভয়াবহতা বাড়লে শহরবাসী মেলা বন্ধের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তোলেন। বিশেষ করে মেলার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এখানকার ব্যবসায়ীদের মাঝে। বিগত দিনের তুলনায় এবছর সিন্ডিকেট করে প্রবেশ টিকিট, সড়কে মটরসাইকেল পার্কিং এ চাঁদাবাজী এবং মেলাতে প্রদর্শিত নানা বিনোদনে অতিরিক্ত মুল্য র্নিধারন করা হয়েছে। যে কারণে আর্থিকভাবে নাকাল হওয়ার অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা। শহরবাসীর অভিযোগ-মেলার নামে মানুষকে সংকটে ফেলে সর্বশান্ত করা হচ্ছে। এসব প্রসঙ্গে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম মেলায় অনিয়ম বন্ধ এবং সব কিছু নাগালের ভেতর রাখার কথা জানান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে।
বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, গত ৩০ এপ্রিল এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে মে মাস পর্যন্ত চলে। কিন্তু পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্স পরীক্ষার কথা বিবেচনা না করে গত ১৭ মে শহরের প্রাণকেন্দ্র সার্কিট হাউজ সংলগ্ন গুরুত্বপূর্ন সড়কের পাশে মেলার উদ্বোধন করেন। যার প্রভাব পড়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাকদের মাঝে। এরপর বৈশি^ক সংকটে শুরু হয় লোডশেডিং এর তীব্রতা। ঊর্ধ্বগতি বাজার দরের পর মেলাটি শহরবাসীর গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাহিরের দোকানের থেকে দেড়-দুইগুন বেশী মুল্য নিচ্ছে প্রতিটি পন্যে। এসব পন্যের মান অত্যন্ত নাজুক ও নিম্নামানের।
মেলা প্রসঙ্গে ঠিকাদার গোলাম সরোয়ার বাদল, যুবলীগ নেতা আতিকুর রহমান রনিক, অভিভাবক সিনথিয়া সাবরিন মৌ, অ্যাড.আরিফুজ্জামান, অ্যাড.আব্দুল্লাহ আল মামুন, অ্যাড.মো. আজিমুর রহমান, পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্সের নেতা মনিরুল ইসলাম এবং একাধিক ব্যবসায়ীরা বলেন-পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্স ও স্থানীয় প্রশাসনের কাঁধে ভর করে মেলা কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেট করে মানুষের পকেট কাটছে। যার আর্থিক খেসারত দিতে নাকাল হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষেরা। বিগত দিনে প্রবেশ টিকিট ৫ টাকা থাকলেও এবছর ২০ টাকা। এছাড়াও এ বছর রাইডারসহ যা কিছু আছে তা ব্যবহারে দ্বিগুন মুল্য র্নিধারন হয়েছে। চলমান বিদ্যুৎ লোডসেডিং শহরের বিদ্যুৎ না থাকলেও বিকল্প ফেইজ সহ মেলাতে ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকছে। অথচ পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে বিকল্প বিদ্যুৎ সেবা সেই। উল্লেখিতরা আরও বলেন-মেলাতে একাধিক বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং আধুনিক আলোকসজ্জা ব্যবহারে অন্তত ১শ কিলোওয়াড বিদ্যুৎ প্রয়োজন। শহরবাসী যখন অন্ধকারে থাকে, তখন মেলায় থাকে আলোকসজ্জা। মেলা পাশর্^বর্তী সরকারি আবাসিক এলাকার জেলা পর্যায়ের এক র্শীষ কর্মকর্তা ক্ষোভ করে বলেন-মেলার কারণে স্বাভাবিক জীবনে বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। স্থান র্নিধারনে ভুল ছিল আয়োজকদের। আবাসিক স্থানে মেলা মানে নাগরিক অধিকার হরন ও শব্দ দূষন সৃষ্টি করা।
গত ৫ জুন সরেজমিনে দেখা গেছে-মেলার অভ্যন্তরে প্রায় শতাধিক রাউন্ড ষ্টল রয়েছে। মাসব্যাপী এই মেলা চললে প্রতি ষ্টল থেকে ৫০ হাজার করে সর্বমোট অর্ধ কোটি টাকা অধিক আদায় হবে। এ ছাড়া বড় আকাড়ের অন্তত এক ডজন ষ্টল থেকে আড়াই লাখ করে মোট ৩০ লাখ টাকা নিচ্ছন কর্তৃপক্ষ। বিচ্ছিন্ন ভাবে চা-সিগারেট ও হরেক প্রসাধনীর অন্তত ২০টি ষ্টল থেকে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭শ টাকা আদায় হচ্ছে। প্রবেশ দ্বারে টিকিট কাউন্টারে দৈনিক আদায় হচ্ছে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। সরকারী রাস্তায় মটরসাইকেল পার্কিং এর নামে ২০ টাকা করে দৈনিক ১০ হাজার টাকা উঠাচ্ছেন তারা। মোট কথা মেলার নামে অন্তত কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। এবছর মেলাতে স্থানীয়দের কোন কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়নি। আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে জমানো অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এই মেলা। এসব প্রসঙ্গে গনমাধ্যমে কোন ব্যবসায়ী কথা বলতে রাজী নন। তবে মেলার ব্যবসায়ীরাও নানা সংকটের অজুহাতে লোকসান দাবি করছেন। মেলার কথিত পরিচালক আখতারুজ্জামানকে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। সে মধ্যরাতে মেলা অভ্যন্তরে এসে হিসেব নিকেশ করে চলে যান।
পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, প্রতি বছরের মত এবছরও পটুয়াখালীতে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মূলত মানুষকে বিনোদন দিতে এ মেলা বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের একটি প্রক্রিয়া মাত্র। প্রবেশ টিকিটসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে অতিরিক্ত মূল্য নিয়ে তিনি বলেন-যেহেতু মেলা শেষের দিকে, আগামীতে বিবেচনা করা হবে। মেলা থেকে চেম্বার অব কমার্স কি লাভবান হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন-লাভের একটি অংশ আমরা পাবো। তবে অনেক অসঙ্গতি প্রসঙ্গে তিনি কোন সদোত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।