গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে মোটরসাইকেল চুরি ঠেকাতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। এতে মানুষজন নির্ভয়ে বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন।
উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম তার ইউনিয়নের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে গ্যারেজ তৈরি করে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে নিরাপত্তা দিচ্ছেন। এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেওয়ার ফলে সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে এখন মোটরসাইকেল চুরি বন্ধ হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিয়ের অনুষ্ঠান, নামাজে জানাযা, মজলিশ, সুন্নাতে খাৎনা, মুখে ভাতসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া মেহমানদের প্রতিনিয়ত চুরি যাচ্ছে বাই-সাইকেল ও মোটরসাইকেল। মেজবানের আমন্ত্রণে এসে অনেকেই তাদের শখের মোটরসাইকেল হারিয়ে ফেলছেন। এতে অনেকেই সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। বিষয়টি উপলব্ধি করেই সর্বানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। স্থানীয়রা জানান, সর্বানন্দ ইউনিয়নে বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের মোটরসাইকেল হারানোর প্রবণতা বেড়েছিল। দাওয়াতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মোটরসাইকেলের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আয়োজনকারীর। কোন আয়োজনকারী যদি নিরাপত্তা দিতে না পারে তাহলে ইউপি চেয়ারম্যানকে অবগত করলেই তিনি গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এটি একটি মহতী উদ্যোগ। প্রতিটি ইউনিয়নে এমন উদ্যোগ নেওয়া দরকার। তাহলে সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে আর কারো গাড়ী চুরি হবেনা। বিয়ের অনুষ্ঠানে আসা পার্শ্ববর্তী সাদুল্যাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা আশিকুর রহমান আশিক বলেন, বিয়ের অনুষ্ঠানে আসা মেহমানদের মোটরসাইকেলের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। অনুষ্ঠানে গ্রাম পুলিশ আমাদের গাডীর নিরাপত্তা দিচ্ছে। আমাদের গাড়ী হারানোর কোন ভয় নেই। নির্ভয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে এসে দাওয়াত খাচ্ছি। আবুল কাশেম নামের একজন বাসিন্দা বলেন, মাঝে মাঝে বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যেত। বিষয়টি জানার পর ইউপি চেয়ারম্যান প্রতিটি অনুষ্ঠানে গ্যারেজের ব্যবস্থা করে নিরাপত্তা দিচ্ছেন। এটি খুব ভালো উদ্যোগ। গ্রাম পুলিশ মঞ্জু মিয়া বলেন, মোটরসাইকেল চুরি ঠেকাতে ইউপি চেয়ারম্যান বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে পাহারার ব্যাবস্থা করে নিরাপত্তা দিচ্ছেন। এসব অনুষ্ঠানে গ্যারেজে গাড়ী রাখলে একটি টোকেন দেই। টোকেনটি জমা দিলেই গাড়ীর মালিককে গাড়ী বুঝে দেওয়া হয়। এতে কোন ধরনের টাকা-পয়সা নেওয়া হয়না। সর্বানন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে মোটরসাইকেল হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং মেনে নেয়ার মত নয়। এতে এলাকার দুর্নাম হয়। এজন্যই প্রতিটি সামাজিক অনুষ্ঠানে গ্রাম পুলিশদের মাধ্যমে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এখন সবাই নিভয়ে সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে। সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আজমিরুজ্জামান বলেন, 'সর্বানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা একটি মহতী উদ্যোগ। এভাবে সব ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করলে সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে মোটরসাইকেল চুরি বন্ধ হয়ে যাবে। এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, 'বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে মোটরসাইকেল চুরি ঠেকাতে সর্বানন্দ ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যতিক্রমী উদ্যোগটি অনুকরণীয়। সবার উচিত এভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা।'