প্রথমবারের মতো সব কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল আটটা থেকে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের ১২৬টি ভোট কেন্দ্রের ৮৯৪টি বুথে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে সকাল আটটার আগেই ভোটারদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
নগরীর রূপাতলী হাউজিংয়ের শহীদ আবদুর রব সেরিনয়াবাত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল আটটার আগেই কেন্দ্রে আসা শারীরিক প্রতিবন্ধী ভোটার বাবুল পাটোয়ারী বলেন, নিজ মনের ইচ্ছেতে ভোট দিতে এসেছি। এটাতো নাগরিক অধিকার। ভোটার মোস্তফা বলেন, তাড়াতাড়ি ভোট দেওয়ার জন্য সকালেই কেন্দ্রে এসেছি। এখন ভিড় কম তাই ভোট দিতেও কোনো সমস্যা হয়নি। নগরীর রসুলপুর এলাকার নারী ভোটার নাবিলা আহমেদ বলেন, ভোটশুরুর আগেই সকালে ভোট কেন্দ্রে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। কেন্দ্রের প্রথমভোটার হিসেবে আমি ভোট দিতে পেরেছি।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা আগে থেকেই ভোট দিতে ভোটারদের কেন্দ্রে আসার জন্য আহবান জানিয়েছি। সে অনুযায়ী অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে সকালে নারী ও পুরুষ ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ ওয়ার্ডের কেন্দ্রে দিনের প্রথমার্ধ্বে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত সরকারি বরিশাল কলেজ কেন্দ্রে, হাতপাখা মার্কার প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম রূপাতলী হাউজিং শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, লাঙল মার্কার প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস গোরস্থান রোডের সৈয়দ আবদুল মান্নান ডিডিএফ আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে, টেবিল ঘড়ি মার্কার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপন কালুশাহ সড়কের আলেকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, জাকের পার্টি মনোনীত গোলাপফুল মার্কার প্রার্থী মিজানুর রহমান বাচ্চু নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চহুতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, হাতি মার্কার প্রার্থী মো. আসাদুজ্জামান সদর রোডের সিটি কলেজ কেন্দ্রে ও হরিণ মার্কার প্রার্থী আলী হোসেন হাওলাদার নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চহুতপুর ইস্কান্দার শরীফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
ভোট কেন্দ্রে শারীরিক প্রতিবন্ধীরা ॥ নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের খেয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা শারীরিক প্রতিবন্ধী বাবুল পাটোয়ারী (৫৫)। ক্রাচে ভর না দিয়ে চলতে পারেন না। কিন্তু পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চান, তাই সকালে ছেলে শামীম পাটোয়ারীকে নিয়ে এসেছেন ভোটকেন্দ্রে। নগরীর রূপাতলী হাউজিংয়ে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে এসে বাবুল পাটোয়ারী বলেন, ভোট একটা পবিত্র আমানত, আর ভোট দেওয়াটাও একটা আনন্দের। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারাটা যেমন আনন্দের, তেমনি তার বিজয় আরও আনন্দের। ভিড় এড়াতে সকালেই তিনি ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট দিয়েছেন। নগরীর কালুশাহ সড়কের আলেকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী তুহিন হাওলাদারকে নিয়ে ভোট দিতে এসেছেন তার ভাই তুষার হাওলাদার। তুষার বলেন, কেন্দ্রে এসে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দিতে পেরে বেশ উচ্ছ্বাসিত তার ভাই। তার উচ্ছ্বাসই পরিবারের সবার খুশি। শারীরিক অসুস্থ্যতার কারণে চলাচলে অক্ষম সত্তরোর্ধ্ব শরীফ ওয়ালিউল ইসলাম ও সোবাহান মিয়াকে নিয়ে তার স্বজনরা এসেছেন ভোটকেন্দ্রে। কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা বলেন, অসুস্থ ভোটারদের কক্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন।
নির্বাচনী পরিবেশ চমৎকার ॥ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত সোমবার দুপুরে নগরীর কালিবাড়ি রোডের সরকারি বরিশাল কলেজ কেন্দ্রে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ চমৎকার। ভোট ভালো হচ্ছে। প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের তোলা অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কী বলবো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে, নির্বাচন কমিশন রয়েছে। তারাই এগুলো পর্যবেক্ষণ করবে। তবে আমার কোনো অভিযোগ নেই। ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক জানিয়ে তিনি বলেন, ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে এসে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন।
ভোটারদের ফিরিয়ে দেয়ার অভিযোগ ॥ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙল মার্কার মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস অভিযোগ করেছেন, একটি ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার দাবি করা ব্যক্তির আইডি কার্ডে কোনো ছবি নেই। সন্দেহ হচ্ছে, অন্য এজেন্সির লোক ঢুকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। সোমবার দুপুরে গোরস্থান রোডের সৈয়দ আবদুল মান্নান ডিডিএফ আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ তুলে ইকবাল হোসেন তাপস আরও বলেন, ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে, একটি বুথের ৮-১০ জন নারী এ অভিযোগ আমাকে করেছেন। আমি ভোট দিতে গেলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেলেনি, তখন প্রিজাইডিং অফিসার সহায়তা করায় ভোট দিতে পেরেছি। নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাজীপাড়া কেন্দ্রে ছাত্রলীগের কর্মীরা নারী ভোটারদের বাঁধা দিচ্ছে অভিযোগ করে তাপস বলেন, নৌকার কর্মীরা রাস্তা থেকে আমার ভোটারদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। বলছে, আপনাদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই। তাপস অভিযোগ করে বলেন, আমার পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছেনা।
হাতপাখার প্রার্থীর ওপর হামলা ॥ নগরীর চৌমাথা এলাকায় হাতপাখা মার্কার প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আহত অবস্থায় তিনি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে হাতপাখা মার্কার প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, নগরীর ছাবেরা খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার পর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথার কাছে ৩০/৪০ জন নৌকার সমর্থক তার ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এ সময় তারা লাঠিসোটা ও পাথর ব্যবহার করে। হামলায় তিনিসহ তার সাথে থাকা বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় রিটানিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে জানিয়ে ফয়জুল করীম বলেন, যতো হামলা হোক ভোটের শেষপর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে আছি। নির্বাচনের পর আন্দোলনের হুশিয়ারী উচ্চারণ করে তিনি আরও বলেন, এই সরকারের পতন না করে আমি ঘরে ফিরবো না। আমি তো কোনো অন্যায় করিনি। যারা হামলা করেছে তাদের বাবার বয়সী আমি। আমাকে মারধর করার কি কারণ? আমার দাঁড়ি পাকা, আমি একজন আলেম মানুষ। এতোবড় পিশাচ হতে পারে মানুষ? এসব কি হচ্ছে? এটা কেমন নির্বাচন। এর আগে নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের এ. কাদের চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে লাঞ্ছনার শিকার হন হাতপাখা মার্কার প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম।
হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ॥ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হাতপাখা মার্কার প্রার্থীর ওপর নৌকার কর্মীদের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে ইসলামি আন্দোলনের কর্মীরা। সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে এয়ারপোর্ট থানার কাশিপুর এলাকায় তারা বিক্ষোভ করেন। আন্দোলনকারীরা বলেন, মুফতী ফয়জুল করীমের ওপর প্রকাশ্যে হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। আমরা হামলাকারীদের প্রকাশ্যে বিচার চাই। এয়ারপোর্ট থানার ওসি হেলাল উদ্দিন বলেন, ইসলামি আন্দোলনের কর্মীরা সড়কে বিক্ষোভ করেছে। তাদের বুঝিয়ে শান্ত করা হয়েছে। কাশিপুরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এজেন্টদের ঢুকতে না দেয়ার অভিযোগ ॥ এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন টেবিল ঘড়ি মার্কার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপন। সোমবার সকালে আলেকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নিজের ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে রূপন এ অভিযোগ করেন।
নৌকার সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাঁধা ॥ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার কর্মীদের ওপর হামলা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও নৌকার সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সোমবার দুপুর দুইটায় নৌকা মার্কার প্রধান এজেন্ট অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে নগরীর ছয়টি ওয়ার্ডে হাতপাখার লোকজনের দ্বারা নৌকা মার্কার সমর্থকদের মারধর, ভোটকেন্দ্রে আসতে বাঁধা প্রধান, ভোট দিতে আসা নারীদের ধর্মীয়ভাবে বুঝিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট না দেওয়া, কেন্দ্রে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের লাঠি ও তলোয়ার নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ করা হয়।
দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের হাতাহাতি ॥ নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের গোরস্থান রোড মাদ্রাসা কেন্দ্রের ভেতরেই ভোট দিতে আসা লাটিম মার্কার কাউন্সিলর প্রার্থী শাহরিয়ার সাচিব রাজিব এবং টিফিন বক্স মার্কার প্রার্থী শেখ সাঈদ আহমেদ মান্নার সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকেই দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা ভোট কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে ঘোরাফেরা করতে থাকেন। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে বাগবিতন্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। টিফিন বক্স মার্কার প্রার্থী শেখ সাঈদ আহমেদ মান্নার সমর্থকেরা অভিযোগ করেন, লাটিম মার্কার প্রার্থী ও তার স্ত্রী ভোটারদের জোর করে তাদের পক্ষে ভোট দেওয়াচ্ছে। আমাদের কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেনা। তারা আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। লাটিম মার্কার প্রার্থী শাহরিয়ার সাচিব রাজিবের স্ত্রী মৌসুমী কবির মৌ অভিযোগ করে বলেন, টিফিন বক্সের প্রার্থী মাঠে নেই। সে ভোটারদের টাকার প্রলোভন দিয়ে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসছে। এইটার বাঁধা দেওয়ার জন্য আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। আমাদের লাইনেই দাঁড়াতে দিচ্ছেনা। লাটিম মার্কার সমর্থকরা বলেন, সবাই জানে শেখ সাঈদ আহমেদ মান্না একাধিক মার্ডার ও অস্ত্র মামলার আসামী। কেন্দ্রের ভেতরে হাতাহাতির পর কেন্দ্রের ভেতর থেকে উভয়পক্ষের সমর্থকদের বের করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এর কিছুক্ষণ পরেই এপিবিএন’র ফোর্স এসে কেন্দ্রের সামনে থেকে উভয় কাউন্সিলের সমর্থকদের সরিয়ে দিয়েছে। এপিবিএন’র কর্মকর্তা দুলাল আহমেদ বলেন, এখানে ঝামেলা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে আমরা এসে দুই কাউন্সিলরের লোকজনকে কেন্দ্রের সামনে থেকে সরিয়ে দিয়েছি। এখন ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
ভোট ভালো হচ্ছে ॥ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। সোমবার দুপুরে বরিশাল সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরা মনিটরিং কক্ষে তিনি আরও বলেন, বেলা ১১টা পর্যন্ত কোনো কেন্দ্রে ১১ শতাংশ আবার কোনো কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সুন্দর পরিবেশে সবাই ভোট দিচ্ছে। সচিব বলেন, হাতপাখা মার্কার প্রার্থী দুটি কেন্দ্রের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছি। তিনি বলেন, আমরা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে প্রতিটি কেন্দ্রের ভেতরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। তাতে ভেতরে কোন অপ্রীতিকর কিছু খুঁজে পাইনি।
শুরু হয়েছে বৃষ্টি ॥ ভোটগ্রহণের মাঝেই বিকেল তিনটা থেকে বরিশাল নগরীতে শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি। ফলে ভোটারদের ভোট কেন্দ্র আসতে চরম বিরম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। বিকেল সাড়ে তিনটা বৃষ্টি চলমান ছিলো। পাশাপাশি বিদ্যুত বিভ্রাট দেখা দিয়েছিলো।
ভোট দিতেও বরিশালে আসেননি মেয়র সাদিক ॥ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিতেও বরিশালে আসেননি বর্তমান সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। এ নিয়ে ভোটের মাঠে নানা আলোচনা চলছে। গত ২৬ মে প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকেই বরিশালের বাহিরে অবস্থান করছেন সাদিক আব্দুল্লাহ। সাদিক আব্দুল্লাহর একমাত্র চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। মনোনয়ন নিয়ে শুরু থেকেই চাচা-ভাতিজার মধ্যে বিভেদ চলে আসছে। সাদিক আব্দুল্লাহ ও তার বাবা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতারা শুরু থেকেই নির্বাচনী মাঠে অনেকটা কৌশল অবলম্বন করে দূরে থাকেন। পরবর্তীতে প্রচার প্রচারনার একবারে শেষ সময়ে কেন্দ্রীয় টিমের উদ্যোগে হাসানাত ও তার ছেলে সাদিকের অনুসারীদের নির্বাচনী মাঠে নামানো হয়। সূত্রমতে, খোকন সেরনিয়াবাতের বড় ভাই বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনের সংসদ সদস্য। তিনি তার নির্বাচনী এলাকার ভোটার। ফলে ভোটের দিন তিনি বরিশালে আসেননি। বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার আগে থেকেই বরিশাল ছেড়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এরপর তিনি আর বরিশালে ফিরে আসেননি। এমনকি ভোট দেওয়ার জন্য সোমবারও এলাকায় ফেরেননি। মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নৌকার মার্কার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মীর আমিন উদ্দীন বলেন, দলের উচ্চপর্যায় থেকে তাকে (সাদিক আব্দুল্লাহ) নির্বাচনের আগে বরিশালে না আসার জন্য নির্দেশনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, সোমবার (১২ জুন) সকাল আটটা থেকে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের ১২৬টি কেন্দ্রের ৮৯৪টি বুথে একযোগে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বরিশাল সিটি নির্বাচনে এবার মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন। নির্বাচনে সাতজন মেয়র প্রার্থী, ৩০টি ওয়ার্ডে সাধারণ ওয়ার্ডে ১১৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৪২ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। বরিশাল নগরী ও ভোট কেন্দ্রের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসারসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাড়ে চার হাজার সদস্য এবং ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। পাশাপাশি প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ১২ জন আনসার সদস্যসহ সাতজন পুলিশ সদস্য কাজ করছে। এ ছাড়া পুলিশের মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স, র্যাবের ১৬টি স্ট্রাইকিং টিম, র্যাব-পুলিশের গোয়েন্দা টিমের সদস্যরা নগরীজুড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে। যেখানে টহলের পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।