কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে কোরবানীর ঈদকে ঘিরে জমে উঠেছে গরু-ছাগল বেচা-কেনা। হাটে উঠতে শুরু করেছে বাহারী রং ও নামের হৃষ্ঠপৃষ্ট বহু জাতের গরু-ছাগল। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সাধ্য অনুযায়ী কোরবানীর জন্য গরু, ছাগল কিনছেন ক্রেতারা। এদিকে গরুকে কোরবানীযোগ্য করতে পরিচর্যায় ব্যস্ত খামারীরা। এ উপজেলায় পৌরসভাসহ ১৫টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের বাড়িতে ২-৪টি করে ষাঁড়, বলদ কিংবা গাভি ও ছাগল পালন করে হৃষ্টপুষ্ট করা হয়। এসব গরু ছাগল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার পশুর হাটে বিক্রি হয়। কোরবানি ঘিরে গরু লালন-পালন করে এ উপজেলার দুধকুমার নদীবেষ্টিত ৫টি ইউনিয়নের চর এলাকা ছাড়াও অন্যান্য ইউনিয়নের গ্রাম পর্যায়ের খামারীরাও গরু পালন করে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হয়েছেন।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এ উপজেলায় সাধারণ কৃষকের পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবে গরু মোটাতাজাকরণে এ উপজেলায় ১১ হাজার ৮শ ৩৪জন খামারী রয়েছে। এ বছর কোরবানীর জন্য ৩৮ হাজার ১৫১টি গরুর চাহিদা থাকলেও তা অতিক্রম করে প্রস্তুত রয়েছে ৪৯ হাজার ৭শ ৩৮টি গরু।
সরেজমিনে জানা গেছে এ উপজেলার সবচেয়ে বড় খামারী স্থানীয় ঠিকাদার হারিসুল বারি রনির আরশী এ্যাগ্রো ফার্ম। এ খামারে ষাঁড়সহ শতাধিক গরু রয়েছে। তবে এ বছর কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করেছেন ৮০টি গরু। যেগুলোর প্রত্যেকটির ওজন আড়াইশ কেজি থেকে শুরু করে ৭শ কেজি পর্যন্ত। আর এগুলোর দাম দিয়েছেন ৩ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত। ওই খামারের একজন কর্মী জানায় তাদের খামারে সাকিব খান নামের একটি ষাড় আছে। যেটির ওজন প্রায় ৭শ কেজি। এই সাকিব খানের দাম দিয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। এছাড়াও রয়েছে ডিপজল, ফাটাকেষ্ট, কালা মানিকসহ বাহারী নামের গরু। এগুলোর ওজনের উপর নির্ভর করে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন তারা। আরশী এগ্রো ফার্মের উদ্যোক্তা হারিসুল বারী রনি জানায়, তিনি একেবারেই অর্গানিক পদ্ধতিতে, সাইলেস পদ্ধতিতে দেশীয় সুস্বাদু খাবার খাইয়ে এই গরুগুলোকে এক বছর ধরে লালন পালন করে কোরবানীযোগ্য করে তুলেছেন। নিজস্ব ডাক্তারের মাধ্যমে এগুলোকে চিকিৎসা দিয়ে রোগমুক্ত রেখেছেন। যাতে করে কুরবানীর ঈদে মানুষ একদম সুষম ও ভেজালমুক্ত মাংস খেতে পারে।
উপজেলার বিভিন্ন খামার ঘুরে দেখা গেছে প্রান্তিক খামারীরা দেশীয় ঘাস লাতাপাতার মাধ্যমে গরুকে মোটাতাজা করেছেন। বেরুবাড়ী ইউনিয়নের ঠাকুরবাড়ি এলাকার আবুল হোসেন জানান, তিনি প্রতি বছর ৪-৫টি করে গরু মোটাতাজা করে কোরবানীতে বিক্রি করে বেশ লাভবাবন হয়েছেন। এ বছরও তিনি ২টি গরুকে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। আর এ দুটি গরুর দাম দিয়েছেন ৩ লাখ টাকা।
একজন গ্রামীণ ব্যাংকের অবসারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন ব্যাপারী জানান, তিনি অবসরকে কাজে লাগাতে তিনি গরুর খামারের কাজ শুরু করেছেন। প্রতি বছর তিনি ১০-১৫টি গরু মোটাতাজা করে বিক্রি করে লাববান হচ্ছেন। প্রান্তিক খামারীরা জানান, তারা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজা করেছেন। কোনো প্রকার ভ্যাকসিনেশন বা মেডিসিন জাতীয় খাবার খাওয়াননি। এই গরু বিক্রির আয়ে সংসার চলে তাদের। তবে গো খাদ্য সামগ্রীর দাম অনুযায়ী গরুর ন্যয্যমূল্য পেলে বেশ লাভবান হবেন বলে প্রত্যাশা তাদের।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শহিদুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় সুষম খাদ্য ও প্রাকৃতিক উপায়ে উৎকৃষ্টমানের বড় বড় ষাঁড় ও বলদ গরু লালন-পালন করা হয়। ফলে দেশের বড় বড় হাটগুলোতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও খামারগুলোতে গরুকে অবৈধ ওষুধ বা কীটনাশক প্রয়োগ ও গো-খাদ্যে ভেজাল ঠেকাতে আমাদের টিম নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। আর কোরবানীর হাটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের সহযোগিতায় নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।