বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেরি কিংবা প্রকৃতির বাতাস যখন থমকে থাকে, তখন হাত পাখার বাতাস একটু প্রশান্তি এনে দেয়। আবার প্রকৃতি যখন লু-হাওয়া ছড়াই তখন ও হাত পাখার প্রয়োজন হয়। আগের দিনে গ্রামে গঞ্জে বিয়েতে কনের বিয়েতে কারুকার্যমন্ডিত বাহারি তালপাতার পাখা দেয়ার রেওয়াজ ছিল। এর রেওয়াজ ওঠে গেলেও এর কদর কমেনি। কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর অধুষ্যিত নিকলী উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের টেকপাড়া ও সূত্রধর পাড়া গ্রামের বাসিন্দারা প্রায় ২৫ বছর ধরে তালপাতার বাহারি অথবা কারুকার্যমন্ডিত পাখা তৈরি করছে। এতে তারা সচ্ছলতা বুধ ফিরে পেয়েছে। এই দুইটি গ্রামের তালপাতার কদর দেশ-বিদেশে আছে। বাংলা চৈত্র মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত তাদের তৈরি এসব হাত পাখাগুলো বিভিন্ন গ্রামের মানুষ কিনে থাকেন। এ গ্রামের শিল্পীদের তৈরি প্রতিটি তালপাতার পাখা প্রকার ভেদে ৪০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়। শীতকাল ছাড়া বছরের সব সময় এ হাত পাখা সাধারণত গ্রামের মহিলা শিল্পীরাই করে থাকেন। নিকলী উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়ের টেকপাড়া গ্রামের পাখা তৈরির শিল্পী মনোয়ারা খাতুন (৫০) বলেল, দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে তালপাতার পাখা তৈরি করছি। সংসারের কাজক্রর্ম সেরে অবসরে তালপাতার পাখা বুনন করি। এর আয় দিয়ে সংসার চালাচ্ছি। ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ যুগাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা পাখাগুলো খুচরা ও পাকারিতে পাখা বিক্রি করে থাকি। বিভিন্ন এলাকার লোকজন আমাদের পাখা গুলো কিনে নেয়। শুনেছি আমাদের তালপাতার পাখা বিদেশে ও যাচ্ছে। তালপাতার জন্য বাশ, তালপাতা, বেত, প্লাস্টিক এসব উপকরণ বিভিন্ন গ্রাম থেকে আমাদের সংগ্রহ করতে হয়। রুমা আক্তার বলেন, আমার মায়ের কাছ থেকে তালপাতার পাখার তৈরি কাজ শিখেছি। আমরা এর আয় দিয়ে লেখা পড়া করেছি। এর পরও অবসরে মাকে সহায়তা করি। বর্তমানে এই কাজ করে এই গ্রামের সবাই খেয়ে পড়ে চলতে পারে। দামপাড়া কারার মাহতাবউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সালমা বলেন, পড়া লেখার ফাঁকে তালপাতার পাখা তৈরি করি। মা বাবাকে এর উর্পাজিত অর্থ দেই। এতে করে আমাদের সংসার ভালোই চলে। টেকপাড়া গ্রামের অলকা রায়, দিপা রায় বলেন, বর্তমান সরকার যদি আমাদের প্রতি সু-নজর দেয় তাহলে আমরা আরো সাবলম্বী হবেন বলে উল্লেখ করেন।