পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সাংসদের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রশাসনের সামনে ছাত্র ও যুবলীগের কতিপয় নেতার বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্ষমতাসীন দলের ওইসব নেতার প্রভাবে সাধারণ ব্যবসায়ী ও ঠিকাদাররা দরপত্র পর্যন্ত ক্রয় করতে পারেননি। এনিয়ে সাধারণ ঠিকাদারদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তেমনি সরকার হারিয়েছে বিপুল পরিমান রাজস্ব।
ছাত্র ও যুবলীগের কতিপয় নেতার হুমকি ও বাঁধার মুখে দরপত্র ক্রয় করতে না পারা অসংখ্য সাধারণ ঠিকাদাররা শুক্রবার সকালে অভিযোগ করে বলেন, বরিশাল সদর উপজেলায় ৩৬টি বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের জন্য উম্মুক্ত নিলামের আহবান করেন সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। এ-সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সূত্রমতে, প্রকাশ্য নিলামের জন্য দুইদিন ধার্য্য করা হয়। এরমধ্যে মহানগরীর ১৮টি স্কুলের জন্য ১৪ জুন সকাল ১০ টা এবং সদর উপজেলার ১৮টি স্কুলের জন্য ১৫ জুন সকাল ১০টা নির্ধারন করা হয়। প্রকাশ্য নিলাম উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
সাধারণ ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, উভয়দিন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুবলীগের কতিপয় নেতারা স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে প্রশাসনের সামনে বসে আমাদের দরপত্র ক্রয় করতে বাঁধা প্রদান করেন। নিলামে অংশগ্রহণ করতে আসা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ১৪ জুন নামমাত্র মূল্যে ১৮টি স্কুল সিন্ডিকেট তৈরি করে প্রতিমন্ত্রীর প্রভাব বিস্তার করে বাগিয়ে নিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা প্রিন্স সরদার, আওয়ামী লীগ কর্মী টিপু, যুবলীগ নেতা বাবলু জমাদ্দার, রিয়াজ হোসেন, মামুনসহ তাদের সহযোগিরা। এজন্য সরকার বড় অংকের রাজস্ব হারিয়েছে।
ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন ও মাহফুজুর রহমান মিলন অভিযোগ করে বলেন, দ্বিতীয় টেন্ডারটিও (১৫ জুন) ওই সিন্ডিকেট চক্রটি বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। ফলে টেন্ডার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা সাধারণ ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীদের ওই চক্রটি বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে।
এ ব্যাপারে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন, গত ১৪ জুন নগরী ১৮টি স্কুলের উম্মুক্ত নিলামে অনিয়মের ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ১৫ জুনের উম্মুক্ত নিলামে কিছু ব্যক্তিকে দরপত্র ক্রয় করতে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়ার পর, তাৎক্ষণিক সমাধান করে সকলের উম্মুক্ত নিলামে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সে দলেরই হোকনা কেন, দরপত্র নিয়ে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবেনা। এ ঘটনায় কোন সরকারি কর্মকর্তা জড়িত থাকলেও তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযোগের ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা প্রিন্স সরদার বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে একটি পক্ষ নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। বৈধভাবেই আমরা উম্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেছি।
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের এমপি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, আমার নাম ভাঙ্গিয়ে যারা যেকোন ধরনের অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত হবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া আছে।