বাবা- দ্য আনসাং হিরো। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে বাবা থাকেন মজবুত খুঁটি হয়ে, পরম আশ্রয় হয়ে। অনেকটা শক্তির পেছনে রক্তের প্রবাহের মতো। তাই বাবাদের গল্প, ত্যাগ আর ভালোবাসাগুলো বরাবরই থাকে আড়ালে। সেই আড়ালের খোলস কিছুটা উন্মোচিত হয় জুন মাসের তৃতীয় রবিবারে; কারণ এ দিন বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বাবা দিবস। রোববার বাবা দিবসে বাবার সঙ্গে তারকাদের সম্পর্কের গতিবিধি জানার চেষ্টা করেছে।
চিত্রনায়ক সিয়াম: চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদের গল্প সিয়ামের বাবার নাম অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন আহমেদ। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। বাবার সঙ্গে তার সম্পর্ক কেমন? অধিকাংশ ছেলের মতো তার সঙ্গে কি বাবার দূরত্ব আছে? সিয়ামের জবাব, ‘কোনো দূরত্ব নেই। আমার মনে হয়, বাবা আমার সবচেয়ে বড় সমালোচক, একই সঙ্গে আমার শুভাকাক্সক্ষী এবং আমার সিনিয়র বন্ধু।’ সিয়াম নিজেও বাবা হয়েছেন। গেলো বছরের এপ্রিলে তার ঘর আলো করে জন্ম নেয় পুত্র জোরাইজ আহমেদ জায়ান। বাবা হওয়ার পর নিজের বাবার প্রতি ভাবনায় কেমন পরিবর্তন এসেছে, সে বিষয়ে সিয়ামের ভাষ্য, ‘আমি এখন বুঝি, বাবারা সারাদিন একটা ছটফটানির মধ্যে থাকে, কখন বাসায় ফিরবে। যেমন ছোটবেলায় শুক্রবার হলেই আমি বাইরে যেতে চাইতাম। কিন্তু বাবা চাইতেন বাসায় থাকতে। আমি জেদ করতাম যে, শুক্রবার, বাইরে বের হবো না কেন? কিন্তু এখন বুঝি যে, ওই একটা দিন বাসায় থাকার মর্মটা কী। সবাইকে নিয়ে যদি সময়টা কাটানো যায়। কারণ ছুটি তো সপ্তাহে মাত্র একদিন।’ অবশ্য সাপ্তাহিক ছুটির স্বাদটুকুও সেভাবে জোটে না সিয়ামের। কারণ শুটিং-ডাবিং, বৈঠক কিংবা পেশাদারিত্বের খাতিরে অধিকাংশ সময় বাইরে থাকতে হয়। তাই যখন ঘরে ফেরেন, তখন ছেলে জায়ান যেমন ঘুমে থাকে, বাবা নাসির উদ্দিন আহমেদও ঘুমে বিভোর। বাবার সঙ্গে অদ্ভুত সুন্দর সব স্মৃতি-গল্প জড়িয়ে আছে বলে জানালেন সিয়াম। সিয়াম মনে করেন, বাবা-মাকে কিছু বলার থাকলে কোনো মাধ্যম ব্যবহার করে নয়, সরাসরি বলাই শ্রেয়। এ নিয়ে সিয়ামের মন্তব্য, ‘যতদিন তারা বেঁচে আছেন, যতদিন আমরা বেঁচে আছি, কথাগুলো সরাসরি হওয়াই ভালো। সেই কথাগুলো বলার জন্য কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন নেই। অন্য সন্তানদের প্রতিও আমার এই আহ্বান রইলো।’
শবনম ফারিয়া: বাবাকে নিয়ে শবনম ফারিয়া... ফাদার্স ডে আসলে আমার মন খারাপ হয়, একটু-আধটু না, অনেক বেশি! সবাই কম বেশি জানে, আমি আমার বাবার খুবই আহ্লাদী একটা মেয়ে ছিলাম। আমার বাবারও পুরা পৃথিবী একদিকে তার মেয়েরা ছিলো আরেক দিকে। প্রতিবছর ফাদার্স ডের আগে আমার অনেক প্ল্যান থাকতো। আমি বোঝার চেষ্টা করতাম, বাবার কী লাগতে পারে, বেশিরভাগ সময়ে বই ছাড়া বাবাকে দেয়ার মতো তেমন কিছু পাওয়া যেত না। বাবার জন্য বই কেনাও একটা মুশকিলের ব্যাপার। বাবা এত বই পড়ে যে, কোন বই তার পড়া হয়নি, সেটা বোঝা ছিলো মুশকিল। অনেক খুঁজে খুঁজে কিনতে হতো! আমি ইনকাম শুরু করার পর থেকে কোনো ফাদার্স ডে যায়নি, যেদিন আমরা ডিনারে বাইরে যাইনি! প্রায় ৬ বছর, এখনও যখন দেখি কেউ বাবার জন্য কিছু কেনে, আমার ভীষণ কষ্ট হয়! আমার মনে আছে, বাবা চলে যাওয়ার ৩ মাস পর থাইল্যান্ড গিয়েছি শুটিংয়ে। পুরনো অভ্যাসে বাবার জন্য ৪টা পোলো টি-শার্ট কিনে বের হয়েছি, জোভান বলে- এগুলো কার জন্য কিনলি? আমি বললাম, বাবার জন্য! জোভান অনেকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে ঘাড়ে হাত দিয়ে শান্ত স্বরে বলে, চল আমরা এগুলো চেঞ্জ করে অন্য কিছু নিয়ে আসি! ঠিক তখন মনে পড়লো, বাবা তো আর নাই! না, অ্যাকচুয়ালি বাবা আছে! সাথে কিংবা পাশে নাই! যেখানে আছে নিশ্চয়ই ভালো আছে, সারাজীবন অতো মানুষের চিকিৎসা করেছেন, সাহায্য করেছেন, আল্লাহতায়ালা নিশ্চয়ই তাকে খারাপ রাখবেন না। না, অ্যাকচুয়ালি বাবা আছে! সাথে কিংবা পাশে নাই! যেখানে আছে নিশ্চয়ই ভালো আছে, সারাজীবন অতো মানুষের চিকিৎসা করেছেন, সাহায্য করেছেন, আল্লাহতায়ালা নিশ্চয়ই তাকে খারাপ রাখবেন না।
চঞ্চল চৌধুরী: বাবা দিবসের স্ট্যাটাসে চঞ্চল লিখেছেন, বাবাহীন পৃথিবী যে একজন সন্তানের জন্য কতটা অন্ধকার, বিবর্ণ। যে সন্তান বাবাকে হারিয়েছে, সেটা কেবল সেই জানে। বাবা দিবস এ বছর থেকে আমার কাছে চোখের নোনা জলে ভেসে যাওয়া সমুদ্র, অকুল পাথার, বাবা ডাকে আর্তনাদ করা সন্তানের হাহাকার।
ফাহমিদা নবী: বাবাকে নিয়ে বলতে গিয়ে ফাহমিদা নবী আরও বলেন, আমার দেখা বাবা শুধু বাবাই ছিলেন না। তিনি ছিলেন কিংবদন্তি মানুষ। বাবা পৃথিবীতে না থাকলেও তিনি আছেন আমাদের অন্তরজুড়ে। আসলে সন্তানের কাছে বাবা-মায়ের কখনো মৃত্যু হয় না।