রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের চান্দামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় ঠিকাদারকে অবরোধ করে রাখেন এলাকাবাসী। পরে ইউএনও ও থানা পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন ইউএনও নাহিদ তামান্না।
এ ঘটনায় রোববার বিকেলে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন ইউএনও। তিন সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী আবদুল হানিফ। সদস্য হলে উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন ও উপসহকারী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান। সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন ইউএনও’র কার্যালয়ে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তদন্ত কমিটিকে।
উপজেলা প্রকৌশলীর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের অধীনে ওই বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন নির্মাণ শুরু হয় আট মাস আগে। এতে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় ৯০ লাখ টাকা। কাজটি পান স্থানীয় ঠিকাদার রাজিব মিয়া।
স্থানীদের অভিযোগ, গত শনিবার ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাঁদ ঢালাইয়ে কাজ শুরু হয়। এতে নিম্নমানের ইটের খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হয়। গাঁথুনিও করা হয় নিম্নমানের ইট দিয়ে। তাই এলাকাবাসী ওই দিন ভালো মানের উপকরণ ব্যবহার করতে বলেন ঠিকাদারকে। এতে ঠিকাদার ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করলে লোকজন তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
এলাকার আপন চন্দ্র রায় বলেন, ভবনটি নির্মাণ হচ্ছে নিম্নমানের ইট ও বালু দিয়ে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। এভাবে ভবন নির্মাণ হলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা থাকবেন ঝুঁকিতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার দুইজন অভিযোগ করে বলেন, শনিবার নিম্নমানের ইট দিয়ে শ্রমিকরা কাজ করছিলেন। এতে বাধা দিলে ঠিকাদার প্রভাব খাটিয়ে কাজ বন্ধ না করে উল্টো অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করেন। এতে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে প্রশাসনের লোকজন এসে ঠিকাদারকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।’
চান্দামারী এলাকার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, নিম্নমানের ইট, সিমেন্ট ও বালু ব্যবহার করে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ হলে তা কিছুদিনের মধ্যেই ভেঙে পড়ে যেতে পারে। আমাদের শিশুরা এখানে লেখাপড়া করে। তাঁরা মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকবে। একারণে আমরা কাজে বাধা দিয়েছি। ইউএনও সরেজমিনে এসে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার প্রমাণ পাওয়ায় তা বন্ধ করে দেন।
চান্দামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ বেগম বলেন, শুক্র ও শনিবার স্কুল বন্ধ ছিল। ওই দুইদিন স্কুলে যাইনি। এ সুযোগে ঠিকাদার নিম্নমানের ইট ও বালু দিয়ে কাজ করছিলেন।
ঠিকাদার রাজিব মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমি ঢাকায় ছিলাম। ভুলবশত দুই হাজার নিম্নমানের ইট স্কুলে নেওয়া হয়। স্থানীয়রা আপত্তি তোলায় তা ফেরত দিয়েছি। তবে আমাকে কেউ অবরুদ্ধ করে রাখেনি।
ইউএনও কাজ বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার রাজিব মিয়া বলেন, তাৎক্ষনিক ইউএনও এসে কিছু নিম্নমানের ইট দেখতে পেয়েছিলেন। সেগুলো অপসারণ না করা পর্যন্ত কাজ করতে নিষেধ করেছেন। ইতোমধ্যে ইটগুলো অপসারণ করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী মজিদুল হক বলেন, নিম্নমানের স্কুল ভবন নির্মাণে অনিয়ম, কাজ বন্ধ করলেন ইউএনও কাজ করার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না সোমবার মুঠোফোনে বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণের সত্যতা পাওয়া গেছে। নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।