শিশু শ্রম থেকে সরিয়ে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে গত ১২ জুন ‘শিশু শিক্ষা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করি’ প্রতিবাদ্য নিয়ে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়েছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, শিক্ষা ও সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত এদেশের অনেক শিশু। নিজেদের উদরের ক্ষুধা থামাতে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে অথবা পরিবারের প্রয়োজনে তারা শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হয়। শুধু তাই নয়, তারা নির্যাতনেরও শিকার। গত মার্চে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও ইউনিসেফ প্রকাশিত ‘পথ শিশুদের ওপর জরিপ ২০২২’ শীর্ষক জরিপে দেয়া যায়, জরিপের অংশ নেওয়া পথ শিশুদের ৩০ শতাংশ খোলা জায়গায় থাকে, ৩৬ শতাংশ কখনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায় নি, ৯১ শতাংশ পথ শিশু কাজ করে। আট বিভাগের ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৭ হাজার ২০০ পথ শিশু জরিপে অংশ নেয়। ৪৯ শতাংশ শিশু ঢাকায় থাকে। পথ শিশুদের অধিকাংশই সহিংসতা শিকার। নামমাত্র কারনেই তারা নির্যাতিত হয়। গত ২৯ মে মহাখালীতে নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্মপ্রেসওয়ের ওপর থেকে ফেলে রড মাথায় ঢুকে সুমন নামের এক পথ শিশুর মৃত্যু হয়। একই দিন চট্টগ্রামের থানায় ইসহাক ডিপো টোল প্লাজার কাছে একটি টিনের ঘর থেকে ১৩-১৪ বছর বয়সী চার পথ-শিশু কিশোরকে উদ্ধার করে পুলিশ। আশ্রয় ও কাজ দেওয়ার কথা বলে তাদের যৌন নিপীড়নমূলক কাজে বাধ্য করা হচ্ছিল। যারা দোকানে কাজ করে বা ছোট খাটো ব্যবসা করে নিজেদের কোনো রকম টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে, তারাও রাতের ঘুমের মধ্যে আক্রান্ত হন এবং তাদের সাথে থাকা টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়া হয়। ছোট খাটো ব্যবসা করার জন্য তাদের চাঁদা দিতে হয় এলাকার মাস্তানদের। না হলে তারা ব্যবসা করতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে শিশু সুরক্ষা বা তাদের মাঝে শিক্ষার আলো দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অথচ সারা দেশে সুবিধা বঞ্চিত পথ-শিশুর সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। পথ শিশুদের জন্য সামাজিক সেবা অধিদপ্তরের ছ‘ টি এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ছ‘ টি কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু পথ শিশুরা সেখানে নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে থাকতে চায় না। ফলে সেখানে থেকে তারা বন্ধনহীন ভাবে চলাচল করতে স্বাচ্ছন্দ্য করে। কিন্তু সরকার তাদের জন্য সারা দেশে আরও ২৫ টি হাব প্রতিষ্ঠা ও সমাজকর্মীর সংখ্যা ২০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ করার কথা ভাবছে। পথ শিশুদের অপরিচ্ছন্ন, রোগ জীবাণু বাহক,অপরাধী জনগোষ্ঠী হিসেবে দেখা যায়। এ দৃষ্টি ভঙ্গি পরিবর্তন করে রাষ্ট্রীয় দায় বদ্ধতার আত্ততায় তাদের শৈশব নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের আবদ্ধ জায়গায় আনার আগে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের সেবা নিয়ে পথ থেকে সরে আসার আগ্রহ তৈরি করতে হবে। আর তাদের ফিরেয়ে নেয়ার উদ্যোগ গুলো শুধু প্রকল্প ভিত্তিক না করে স্থায়ী রূপ দিতে হবে। আজকের শিশু আগামী দিনের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারকে পথ-শিশুদের নিরাপদ জীবন প্রদানের উদ্যোগ যত দ্রুত নেয়া হবে, দেশ ও জাঁতি ততো দ্রুত উন্নত হবে। কারণ পথ শিশুরা বাস্তবতার কারণেই অনেক সাহসী ও মেধাবী হয়ে থাকে।