কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর সবকটি নদণ্ডনদীর পানি বেড়ে বিপদসীমা ছুঁই ছুই করছে। দুধকুমার, সঙ্কোষ, গঙ্গাধর, ব্রহ্মপুত্রসহ সবকটি নদণ্ডনদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে উপজেলার প্রায় শহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে দুধকুমার নদের বামনডাঙ্গা মুড়িয়াঘাট এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি এলাকা। তলিয়ে গেছে পুকুর, নষ্ট হয়েছে বীজতলা, পাটসহ বিভিন্ন শাকসবজির ক্ষেত। এছাড়াও শিশু বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে বন্যা কবলিতরা। স্থানীয়রা জানান প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুম আসলেই বন্যার কবলে পড়ে নাগেশ্বরীর বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে ওই ইউনিয়নের তেলিয়ানিরকুটি, মালিয়ানীটারী, আদর্শপাড়া, বড়মানী, পাটেশ্বরী নাগেশ্বরী পৌরসভার সেনপাড়া, পূর্ব সাঞ্জুয়ারভিটা, ধনীটারী, অন্তাইরপাড়, বোয়ালের ডাড়া, নুনখাওয়া ইউনিয়নের চর কপনা, ব্যাপারীরচর, রায়গঞ্জ ইউনিয়নের ফন্দেরচর, বড়বাড়ী, কাশেম বাজারসহ বহু গ্রামে পানি প্রবেশ করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এক হাজারের অধিক পরিবার। বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের তেলয়ানিরপাড় এলাকার আবদুস ছাত্তার, ধনীটারীর মাইদুল ইসলাম, সাইফুর রহমান জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকে অনেক বাড়ি পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেক বীজতলা তলিয়ে গেছে। অনেকের আবাদীজমিতে বালু পড়ে সেগুলোতে আর আবাদ করা যাবে না। মকবুল হোসেন জানায় অনেকের পুকুর ডুবে গিয়ে মাছ বের হয়ে গেছে ফলে মাচ চাষিরা অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছে। পানিবন্দী এক কৃষক জানায় তাদের বাড়ির চারপাশে পানি থাকার কারণে তারা বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। গরু ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। আবাদি জমিটুকুতে বালু পড়ে গেছে। এ বছর আবাদ করতে না পাড়লে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে তাদের। এছাড়াও হাটবাজার করা, বাইরে বের হওয়া নিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার পানিবন্দী পরিবারগুলো। তবে সময়মতো বাঁধ নিয়ন্ত্রণের কাজ না করাকেও দুষছেন স্থানীয়রা।
বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য আবেদ আলী জানান, মঙ্গলবার বিকেল থেকে তেলিয়ানীতে তার বাড়ির পাশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর দিয়ে দুধকুমার নদের পানি লোকালয়ে ঢুকতে থাকে। ক্রমেই স্রােতের তীব্রতা বাড়তে থাকে। বড় বড় গর্ত হয়ে তলিয়ে যেতে থাকে বাঁধে থাকা জিও ব্যাগ। একসময় স্রােতের তীব্রতায় ভেঙে যায় প্রায় ২৫০ মিটার বাঁধ। বানডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রনি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড যে ব্যবস্থাটা এখন নিচ্ছে সে ব্যবস্থা যদি আরও এক-দেড় মাস আগে নিতো তাহলে আজকে মানুষের এই ক্ষয়ক্ষতিটা হতো না। সময় মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে আমার ইউনিয়নের অনেক এলাকায় পানি ঢুকেছে। বীজতলা, পাটসহ অনেক ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বাঁধ ভাঙ্গার পর আমি বিষয়টি ইউএনও স্যার এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালে তারা এসে পরিদর্শন করে গেছেন। এখন কাজ চলমান রয়েছে। তবে আমার বন্যা কবলিত ইউনিয়নকে বাঁচাতে দ্রুত কাজ করার দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা জাহান বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমি বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা এবং নুনখাওয়া ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছি। তবে এখন পানি কিছুটা কমে আসছে। আমাদের যথেষ্ঠ ত্রাণের ব্যবস্থা আছে। যেকোন সময় কোনো সমস্যা হলে আমরা তা মোকাবেলা করতে পারব এবং ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে থাকব। উপজেলা প্রশাসন সবসময় প্রস্তুত আছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা মূলত নদীর স্থায়ী ভাঙন রোধে কাজ করছি। এমতাবস্তায় বাঁধের কিছু নিচু জায়গা দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। সে জায়গায় জিও ব্যাগ, জিও টিউব, বোল্ডার ফেলে উঁচু করা হচ্ছে। যাতে নদীর পানি উপচে লোকালয়ে ঢুকতে না পারে।