পাবনা- ২ (সুজানগর- বেড়া) আসনে বইতে শুরু করেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগাম হাওয়া। নির্বাচনের এখনো ৬/৭ মাস বাকি থাকলেও সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকায় তাদের প্রার্থিতা জানান দিতে পোস্টার এবং বিলবোর্ড টাঙ্গানোর পাশাপাশি ব্যাপকভাবে গণসংযোগ শুরু করেছেন। পাশাপাশি তারা দলীয় মনোনয়ন পেতে দলের হাই কমান্ডের সাথে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সাথে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে এলাকায় কাঙ্খিত উন্নয়নমূলক কাজে অবদান রাখারও প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীরা সরব হলেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিরব। বিএনপি যেহেতু দলীয় সরকারের অধীনে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করছে সেহেতু বিএনপির সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীরা গণসংযোগ এবং নির্বাচনী প্রচারণা না চালিয়ে কেবল সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তবে আসনটিতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলেরই রয়েছে শক্ত ঘাঁটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসনটি থেকে ১৯৭০ এবং ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আহমেদ তফিজ উদ্দিন মাস্টার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মির্জা আবদুর রশিদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মির্জা আবদুর রশিদ সংসদ সদস্য থাকাকালে ১৯৮২ সালে আবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়। এরপর ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মকবুল হোসেন সন্টু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় পার্টি দীর্ঘ ৯ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ১৯৯১সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি থেকে বিএনপি মনোনীত হ্যাবিওয়েট প্রার্থী ওসমান গনি ওজি খান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে দুই দফা জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দফা ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় দফা ১২ জুন। প্রথম দফা অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অ্যাড: এ.কে.এম সেলিম রেজা হাবিব এবং দ্বিতীয় দফা অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আহমেদ তফিজ উদ্দিন মাস্টার তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে তফিজ উদ্দিন মাস্টার নির্বাচিত হওয়ার দুই বছরের মাথায় মারা যাওয়ায় ১৯৯৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর এ আসনে উপণ্ডনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত হ্যাবিওয়েট প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় সর্বাধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) একে খন্দকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আ্যড: এ.কে. এম সেলিম রেজা হাবিব সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালে আবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে আসনটি থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এয়ার ভাইস মার্শাল ( অব: ) এ কে খন্দকার দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করলে আসনটি থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খন্দকার আজিজুল হক আরজু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আহমেদ ফিরোজ কবির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিগত নির্বাচন গুলোর ফলাফল অনুযায়ী আসনটিতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলের রয়েছে শক্ত অবস্থান। সে কারণে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উভয় দল আসনটি দখলে নিতে অত্যন্ত সচেষ্ট। আর সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে নির্বাচনের এখনো ৬/৭ মাস বাকি থাকলেও বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী যে সকল প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আহমেদ ফিরোজ কবির, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান উজ্জ্বল ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আশিকুর রহমান খান সবুজ। এর বাইরেও সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু, সাবেক সচিব ড. মজিবুর রহমান, রাকসুর সাবেক জিএস খন্দকার জাহাঙ্গীর কবির রানা ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা আবদুল মতিন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে দলটির নেতা-কর্মীদের মুখে শোনা যাচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা জানান, নির্বাচনে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও বর্তমান সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান উজ্জ্বল ব্যাপকভাবে গণসংযোগ, উঠান বৈঠক এবং দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। আহমেদ ফিরোজ কবির তার কার্যকালে সংঘটিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট এবং ব্রিজ কালভার্টসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তথা সাধারণ জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে অবদান রাখার চিত্র তুলে ধরে এবং কামরুজ্জামান উজ্জ্বল মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে নির্বাচনী এলাকায় কাঙ্খিত উন্নয়ন করার রূপরেখা তুলে ধরার পাশাপাশি দলকে তৃণমূল পর্যায়ের সংগঠিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে গণসংযোগ, উঠান বৈঠক এবং সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে কামরুজ্জামান উজ্জ্বল নির্বাচনী এলাকার দরিদ্র ও দুস্থ মানুষকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছেন বলেও তার সমর্থকরা জানান। অন্যদিকে সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপির সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীরা গণসংযোগ না করলেও নির্বাচনী মাঠে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আ্যড: এ.কে.এম সেলিম রেজা হাবিব, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবদুল হালিম সাজ্জাদ মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়। বিশেষ করে নির্বাচনী মাঠে সাবেক সংসদ সদস্য আ্যড: এ.কে.এম সেলিম রেজা হাবিবের নাম বেশ সরব বলে দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা জানান।