বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমান সরকারকে অবৈধ সরকার আখ্যায়িত করে আবারো বলেছেন, আমাদের অবস্থান একদম স্পষ্ট। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন অবৈধ সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো না। এই সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা পরিস্কার করে বলছি, এই সরকার বৈধ নয়। এই সরকার অবৈধ। এই সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠ নির্বাচন হতে পারে না। অবৈধ সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাবো না। ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের জনজগনকে সাথে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে, এই ফ্যসিবাদি সরকারকে আমরা পরাজিত করে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো। আমরা নির্বাচন চাই, তবে হাসিনার অধীনে না। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।
শনিবার বিকেলে বরিশাল নগরীতে বিএনপির বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই তারা ভোট চুরি করে। তারা সন্ত্রাস করবে, চুরি করবে, এটা আর মেনে নেয়া যায়না। তিনি বলেন, এই অবৈধ সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে; পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে। এরপর নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠণ করে তার অধীনেই নির্বাচন হবে।
ফখরুল বলেন, আমরা দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলাম; যা আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে এক দলীয় শাসন কায়েম করেছে। তিনি দাবি করেন, আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে, আবার আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই মিথ্যে মামলা দেওয়া হচ্ছে। সরকার উন্নয়নের কথা বলে বাহাদুরি দেখায়, অথচ কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের নামে আওয়ামী লীগ হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। যেকারণে সারাদেশে আজ বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিং হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠণ করে নির্বাচন করতে হবে। জনগণ এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে আজ মুক্তি চায়, এর থেকে পরিত্রাণ চায়। তাই আমাদের আজকের আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়; বেগম খালেদা জিয়ার জন্য নয়; তারেক রহমানের জন্য নয় কিংবা আমাদের নেতাদের জন্য নয়। এ আন্দোলন জাঁতি ও দেশের প্রয়োজনে সমগ্র জাতিকে রক্ষা করার জন্য। এই আন্দোলনে তরুন সমাজকে আরো দুর্বারগতিতে রাজপথে নামার জন্য ফখরুল আহবান করেন।
বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলর্স পার্ক) বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের আয়োজনে শনিবার বিকেলে তারুণ্যের সমাবেশ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও বিশেষ বক্তা ছিলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী। যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলে সঞ্চালনায় সমাবেশে কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দরা বক্তব্য রাখেন।
পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ উপলক্ষে শনিবার সকাল থেকেই বেলস পার্কে বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মিছিল সহকারে জড়ো হন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। খন্ড খন্ড মিছিল, ফেস্টুন, ব্যানার নিয়ে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে জড়ো হয়। মিছিল থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ সরকার বিরোধী বিভিন্ন শ্লোগান দেওয়া হয়।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, শনিবার বিকেল চারটার দিকে পবিত্র কোরান তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে তারুণ্যের সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশের মঞ্চে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মানে দুটি চেয়ার খালি রাখা হয়েছিলো। তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনে তরুণ প্রজন্মকে জাগ্রত করতে দেশের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণস্থানে তারুণের সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপির এই তিনটি সংগঠন। তারই ধারাবাহিকতায় বরিশাল নগরীতে বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলা ও উপজেলা থেকে রিজার্ভ করা গাড়ি সমাবেশে আসতে দেওয়া হয়নি। এমনকি ভোলা থেকেও লঞ্চ ছাড়েনি মালিকপক্ষ। আওয়ামী লীগ নেতাদের হুমকির মুখে রিজার্ভের টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন লঞ্চ ও পরিবহনের মালিকরা। তারপরেও নেতাকর্মীরা বিভিন্ন উপায়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়ে সমাবেশকে সফল করেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অপরদিকে একইদিন বঙ্গবন্ধু উদ্যান (বেলস পার্ক) থেকে আধা কিলোমিটার দূরত্বের নগর ভবনের সামনে শান্তি সমাবেশের নামে পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে যুবলীগ। পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে ঘিরে নগরজুড়ে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করলেও শেষপর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই উভয়দলের কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছে।