জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্যদিয়ে পরিবার থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের দুই নিবাসী তামান্না ও রহিমার বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। আর এ বিয়েকে ঘিরে গত একসপ্তাহ থেকে প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ছিলো উৎসবের আমেজ।
কেন্দ্রের নিবাসীরা জানিয়েছেন, এনিয়ে পরপর তিনবার দুইজন করে নিবাসীর বিয়ের অনুষ্ঠান একত্রে করছে কর্তৃপক্ষ। আর আয়োজনগুলোতে কোনো কমতি না রেখে এত ধুমধামভাবে করা হয়, যাতে কারও বোঝার উপায় থাকেনা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো তরুণীর বিয়ে হচ্ছে। তারা আরো বলেন, বিয়ের আয়োজন মানেই সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিবেশটাই অন্যরকম উৎসবমুখর হয়ে যায়।
শনিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত বিয়ের মধ্যদিয়ে কেন্দ্রের ১৭ ও ১৮ তম বিয়ের অনুষ্ঠান একসাথে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে বর ও কনেপক্ষ মিলিয়ে তিনশ’ জন অতিথির খাবারের আয়োজন করা হয়েছিলো। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, কেন্দ্রের নিবাসী রহিমা খানমের সাথে নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর জাগুয়া এলাকার বাসিন্দা রাসেল মিয়ার বিয়ে হয়েছে। আর তামান্না আক্তারের সাথে জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের মানিককাঠী গ্রামের বাসিন্দা মুদি ব্যবসায়ী ফরিদ হোসেনের বিয়ে হয়েছে।
সূত্রমতে, প্রায় একযুগ ধরে রহিমা খানম ওই কেন্দ্রে রয়েছে। সে পিরোজপুর থেকে আসলেও তার পরিবারের কারও সন্ধান নেই কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের কাছে। অপরদিকে তামান্না প্রায় পাঁচ বছর ধরে কেন্দ্রে রয়েছে। তার বাড়ি জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার পাতারহাট গ্রামে। সমাজের অন্যসব বিয়ের মতো উভয়পক্ষে দেখাদেখি ও কথাবার্তা সম্পন্ন করার পরেই বিয়েতে মত দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তামান্না। তিনি বলেন, আগেই পাত্র ও তার পরিবারের সাথে আমাদের স্যারেরা কথা বলেছেন, আমিও কথা বলেছি। উভয়ের মতে এ বিয়ে হচ্ছে। রহিমা খানম বলেন, স্যারেরা বিয়েতে কোনো কমতি রাখেননি। বিয়ের পোশাক থেকে শুরু করে কেন্দ্র সাজানো, গান-বাজনার মধ্যদিয়ে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান শেষে বিয়ের অনুষ্ঠান করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উভয় বিয়েতে কেন্দ্র থেকে উপহার হিসেবে সেলাই মেশিন, লেপণ্ডতোষক ও প্রতেক্যেকে ৫০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। তামান্নার বর ফরিদ হোসেন ও রহিমার বর রাসেল মিয়া বলেন, তারা ঊভয়ই পূর্বে এখানকার একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। সেখানে এসে তাদের পাত্রী পছন্দ হলে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর কথাবার্তা বলে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়।
শুধু বিয়ে দিয়েই দায় এড়াতে নারাজ বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ বিয়ের আয়োজনে আমরা সবাই খুশি। আমাদের মেয়েরা যাতে ভালো থাকে, সেদিকে আমরা খেয়াল রাখবো। শুধু বিয়ে দিয়ে দায়সারা নয়, আমরা ভবিষ্যতে তাদের খোঁজখবর রাখবো। যেমনটা আমার মেয়ের বেলায় রাখা হবে।