গাজীপুরের টঙ্গীতে পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে দুইটি হাটে কোরবানির পশু আসতে শুরু করেছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পূর্বপাশে প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চেরাগআলী পশুর হাট এবং সাতাইশ রাজনগর বাগানবাড়ি এলাকায় খাজা গরীবে নেওয়াজ (রা.) রোডের প্রায় ৪০ বিঘা জমির উপর বসেছে এবারের পশুরহাট। হাট দুটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেপারীরা হাজার হাজার গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া নিয়ে তাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে অবস্থান নিচ্ছেন। অনুকূল আবহাওয়া ও হাটের সাবির্ক পরিস্থিতি ভালো থাকায় দূরদুরান্ত থেকে আগত বেপারীরা স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন। বর্তমানে বেচা বিক্রি একটু কম হলেও আগামী সোম-মঙ্গলবার থেকে হরদম বেচা কেনা হবে বলে বেপারীরা আশা প্রকাশ করেছেন। গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে গরু লালন-পালন করতে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার তাদের বেশি খরচ পড়েছে। তাই গরুর দাম একটু চড়া যাবে বলে হাটে আসা বেপারীরা জানিয়েছেন।
সরজমিনে পশুর হাট দুটি ঘুরে দেখা গেছে, চেরাগআলী ও গাজীপুরা সাতাইশ রাজনগর বাগানবাড়ি এলাকায় খাজা গরীবে নেওয়াজ (রা:) রোডে কোরবানির পশুর হাটে কুুষ্টিয়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, ময়নসিংহসহ ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেপারীরা গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া নিয়ে এসেছেন। ক্রেতারাও হাটে এসে গরুর দামদর নিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে। ব্যাপক চাহিদা থাকায় হাটে দেশীয় মাঝারি আকারের গরুর উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা গেছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার গরুর দাম চড়া হাঁকা হচ্ছে বলে ক্রেতারা জানিয়েছেন।
কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার আল্লাহর দরগা এলাকা থেকে ১৯টি ষাড় গরু নিয়ে চেরাগআলীর হাটে এসেছে আজবার আলী (৩৫)। তিনি জানালেন, হাটের পরিবেশ মোটামুটি ভালো। তবে গরু কেনা বেচা এখনও পুরোদমে শুরু হয়নি। শহরের বাড়িতে গরু রাখার পর্যাপ্ত জায়গা থাকে না। তাই অনেকেই গরু দেখছেন। পছন্দ হলে দামদর জিজ্ঞাসা করছেন। আগামী সোম-মঙ্গলবার থেকে বেচা বিক্রি পুরোদমে শুরু হবে। গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এবার গরু লালন-পালন করতে আমাদের অনেক খরচ হয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই গরুর দাম একটু বেশি চাইতে হচ্ছে।
পাবনার সুজানগর থেকে সাতাইশ বাগানবাড়ি খাজা গরীবে নেওয়াজ (রা.) রোডের হাটে এসেছেন জাহাঙ্গীর আলম (৩০)। তিনি জানালেন, তার খামারে লালন-পালন করা ৯টি গরু নিয়ে তিনি হাটে এসেছেন। এর মধ্যে ক্রেতারা গরুর দামদর যাচাই করছেন। এই হাটটি নতুন হলেও আকারে বিশাল বড়। হাটে আসা-যাওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও হাটে পশু রাখার পর্যাপ্ত যায়গা রয়েছে। পরিবেশও সুন্দর। তাছাড়া বেপারীদের থাকা-খাওয়া, নামাজের স্থান, পানি ও বিদ্যুৎতের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করেছেন হাটের ইজারাদারা।
টঙ্গী বাজার এলাকা থেকে শনিবার দুপুরে ছেলে আসিব ও রাকিবকে নিয়ে চেরাগআলী গরুর হাটে এসেছেন ক্রেতা শফিকুল ইসলাম। তিনি যুগান্তরকে জানালেন, এখনও পর্যন্ত অন্যান্য বছরের তুলনায় হাটে গরু উঠেছে কম। তবে বেপারীরা গরুর দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন। দরদাম চলছে, সুবিধামতো হলে গরু কিনে নিয়ে যাব।
সাতাইশ বাগানবাড়ি হাটের ইজারাদার মো. মমতাজ উদ্দিন বলেন, আমরা বেপারী ও ক্রেতাদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। হাটের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। ক্রেতা ও বিক্রেতারা যাতে প্রতারিত না হন সে জন্য মাইকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এখানে ক্রেতা বিক্রেতাদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু আসতে শুরু করেছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে বিশাল এই হাটে গরু এসে কানায় কানায় ভরে যাবে।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চেরাগআলী কোরবানি পশু হাটের ইজারাদার ফরহাদ যাকারিয়া বলেন, প্রায় ৪ কিলোমিটার আয়তনের চেরাগআলীর এই বিশাল হাটে ৭-৮ হাজার গরু উঠার আশা করা যাচ্ছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জন্য নানাধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে কোরবানীর পশুতে পুরো হাট পূর্ণ হয়ে যাবে। হাটে পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন। তারা ক্রেতা-বিক্রেতাদের সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও হাটে আনা কোনো গরু অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদল প্রস্তুত রয়েছে।
যোগাযোগ করা করা হলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) মোহাম্মদ হাফিজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচলরত পশুবাহী ট্রাক ও কভার্ডভ্যানে যাতে কোনোপ্রকার চাঁদাবাজি করতে না পারে সেজন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। এছাড়াও পকেটমার, ছিনতাইকারী ও জাল টাকা কারবারিদের প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাটগুলোতে পুলিশের কন্ট্রোলরুম থাকবে, পুরো হাটে সিসি ক্যামেরা লাগানোর জন্য বলা হয়েছে। জালনোট শনাক্তের জন্য মেশিন রাখা হবে। সর্বোপরি টঙ্গীর পশুর হাটগুলোতে যাতে কোনোপ্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না সেজন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।