চলতি বোরো মৌসুমে আমরা লক্ষ্যমাত্রার বেশি চাল ক্রয় করেছি বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে গত শনিবার পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ছয় লাখ ৫৬ হাজার ৫৭৮ মেট্রিক টন চাল ও এক লাখ ১৫ হাজার ২৭২ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘বোরো সংগ্রহ অভিযান ২০২৩ এর অগ্রগতি, কার্ডের মাধ্যমে ওএমএস বিতরণ ও সামগ্রিক খাদ্য পরিস্থিতি’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমরা অভ্যন্তরীণভাবে সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম। আর চার লাখ মেট্রিক টন ধান। চাল ছিল ৪৪ টাকা কেজি, ধান ছিল ৩০ টাকা। আগস্টের শেষ দিন পর্যন্ত আমাদের এগুলো কেনার কথা। এরমধ্যেই আমরা চাল ক্রয় করেছি ছয় লাখ ৫৬ হাজার ৫৭৮ মেট্রিক টন। ধান সংগ্রহ করেছি এক লাখ ১৫ হাজার ২৭২ মেট্রিক টন। জুনের পর, জুলাই আগস্ট, এভাবে মাস ভাগ করতে গেলে এ জুনে চার লাখ ক্রয় করলেই আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। আমরা লক্ষ্যমাত্রার বেশি ক্রয় করেছি। আশা করছি, সম্পূর্ণ চাল ক্রয় করতে পারব। ধান ক্রয়ের কথা বলতে গিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, গত শনিবার পর্যন্ত আমরা ধান ক্রয় করেছি এক লাখ ১৫ হাজার ২৭২ মেট্রিক টন। এখনো তিন দিন সময় আছে। আমরা লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারব বলে দৃঢ় বিশ্বাস। এবার যেহেতু বাম্পার ফলন হয়েছে, তার জন্য চালের মানও আমরা ভালো পেয়েছে। চালের মান সবসময় ভালো থাকে, এবার আরও ভালো হবে। কারণ ধানের মান ভালো। মন্ত্রী বলেন, বন্যা, করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন চড়াই-উতরাই আমরা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচি সঠিকভাবে পালন করেছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে সারা বিশ্বে সন্দিহান তৈরি হয়েছিল, এক সময়ে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা থেকে বলা হয়েছিল, বিশ্বে দুর্ভিক্ষ হবে, বাংলাদেশও সেই দুর্ভিক্ষের দাবিদার। কিন্তু আমরা সঠিকভাবেই তা মোকাবিলা করতে পেরেছি। চাল নেই এমন অবস্থা কখনো আমাদের হয়নি। আমরা সফলতার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছি।
এদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্ডধারীরা আগামী জুলাই থেকে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে পাঁচ কেজি করে চাল পাবেন বলে বলেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে এক কোটি পরিবার টিসিবির পণ্য পাঁচ্ছেন। আগামী জুলাই থেকে তাদেরকে ৩০ টাকা দরে পাঁচ কেজি চাল দেওয়া হবে। খোলাবাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রির (ওএমএস) ডিলাররা তাদের এই চাল সরবরাহ করবেন। তিনি বলেন, অন্তত এক কোটি পরিবার এই পাঁচ কেজি চাল পাবেন। সারা বছরই পাবেন। পাশাপাশি আমাদের ওএমএস চলতে থাকবে। আমরা ওএমএসের ডিজিটাল কার্ড তৈরি করছি। পাঁচ কেজি চাল কীভাবে দেওয়া হবে; জানতে চাইলে তিনি বলেন, টিসিবির জিনিস যখন পাবেন, তখন একই প্যাকেটে তাদের এই চাল দেওয়া হবে। আমাদের কাছে আসতে হবে না, ওএমএস ডিলাররা তাদের এটি দেবে। অর্থাৎ টিসিবিতে আরেকটি পণ্য হিসেবে এই চাল যুক্ত হয়েছে। এক কোটি পরিবারের যাদের কার্ড আছে, যখনই তারা টিসিবির মাল পাবেন, তখনই তারা এই পাঁচ কেজি চালও পাবেন। সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, চালের দাম যখন একটু বাড়তির দিকে থাকে, তখন সারা দেশে প্রায় দুই হাজার ৫০০ ডিলারের মাধ্যমে খোলাবাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম চালিয়েছি। শুধু বিতরণই না, বাজেটে যা ছিল, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে আমরা তার চেয়েও বেশি মানুষের কাছে বিতরণ করেছি। অতিরিক্ত দুই লাখ মেট্রিক টন ওএমএস বিতরণ করেছি। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ৫০ লাখ পরিবারকে যে নিয়মিত পাঁচ মাস খাদ্যবান্ধব সহায়তা দেওয়ার, তা দিয়েছি। তারা প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল পাঁচ্ছেন। আমরা করোনাকালীন পাঁচমাসের জায়গায় আরও একমাস বাড়িয়ে আমরা বিতরণ করেছি। শুধু তা-ই না, করোনার সময় বিশেষ খাদ্যবাবন্ধব কর্মসূচিতে প্রতি জেলায় ১০ টাকা করে কেজি চাল তালিকা ধরে বিতরণ করা হয়েছে। এখন এই সহায়তার এনআইডিভিত্তিক ডিজিটাল কার্ড তৈরি করা হয়েছে।