নাটোরের সিংড়া উপজেলার ছাতারদীঘি ইউনিয়নের কালিগঞ্জ বাজারের মূল্যবান সরকারি জায়গা দখল করে পাকা বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন এক প্রভাবশালী। ফলে হাটে চলাচল সংকীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি এলাকার জনসাধারণের চলাচল বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। এ বিষয়ে সিংড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ছাতারদীঘি ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে একাধিক লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
লিখিত অভিযোগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কালিগঞ্জ ধান হাটের পাশে তারাপদ ঘাটমাঝির কাছ থেকে ২ শতক জায়গা কিনেন পাশবর্তী রাণীনগর থানার পাঁচুপুর গ্রামের মৃত কাজেম আলীর ছেলে আশরাফ আলী। এরপর ক্ষমতাসীনদের টাকা দিয়ে তার কেনা জায়গা সংলগ্ন ধান হাটের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ৭ শতক সরকারি জায়গায় টিনের বেড়া দিয়ে নিজের দখলে নেন প্রভাবশালী আশরাফ আলী। এখন সেই দখলকৃত জায়গায় পাকা বহুতল ভবন নির্মাণ শুরু করেছেন। আর সেখানে ভবন নির্মাণ করতে নিষেধ করায় সাধারণ মানুষকে এলাকা ছাড়া করারও হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তাছাড়া সরকারি জায়গা জবর দখল করে ভবন নির্মাণের ফলে পাশবর্তী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৬/৭ টি পরিবারের চলাচল বন্ধ হতে বসেছে।
এবিষয়ে প্রতিবেশী প্রভাতী রাণী বলেন, জনৈক আশরাফ আলী নামের এক ব্যক্তি তার শ্বশুড় তারাপদ ঘাটমাঝির কাছ থেকে সেখানে মাত্র ২ শতক জায়গা কিনেন। এখন সে ধান হাটের গুরুত্বপূর্ণ অনেক জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণ শুরু করেছেন। ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি পরিবারের চলাচল বন্ধ হতে বসেছে। বাড়িতে তার শতবর্ষী শ্বাশুড়ী মৃত্যু শয্যায় দিন গুনছেন। মারা গেলে তার মৃতদেহটি বের করা কঠিন হয়ে যাবে। আর এ বিষয়ে বলতে গিয়ে তাদেরকে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিয়েছেন প্রভাবশালী আশরাফ আলী।
কালিগঞ্জ ধান হাট-বাজারের খাজনা আদায়কারী বাবলু প্রামাণিক বলেন, তিনি প্রায় ২১ বছর ধরে এই হাটে খাজনা আদায় করেন। হঠাৎ রাতারাতি সরকারি জায়গা দখল করে এভাবে বহুতল পাকা ভবন নির্মাণের হাটের জায়গা সংকীর্ণ হচ্ছে। ফলে কৃষকের ধান কেনা-বেচা বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। আর এভাবে সরকারি জায়গা দখল হতে থাকলে একসময় সেখান থেকে হাট-বাজারের বিলুপ্তি ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। ৭৬ বছর বয়সী হরেন মহন্ত বলেন, হাটের জায়গা দখল করে এভাবে পাকা ভবন নির্মাণ খুবই দুঃখ জনক বিষয়। এখন হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি পরিবারের চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় আশা ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, কালিগঞ্জ বাজার উত্তরবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধান হাট ছিল। একসময় এই হাটে বাহিরের অনেক এলাকার পাইকাররা আসত। কিন্তু এখন অবৈধ দখলদারদের কারণে হাটের এতিহ্য হারিয়ে গেছে। ফলে কৃষক তাদের নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর সরকারি জায়গায় এই বহুতল ভবন নির্মাণ হলে হাটের অস্তিত্ব থাকবে না। এভাবে একের পর এক সরকারি জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতায় নামবে।
এবিষয়ে লিখিত অভিযোগকারী সহিদ হোসেন ও আনন্দ ঘাটমাঝী বলেন, সরকারি জায়গা দখলের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব জায়গাও দখলের পায়তারা করছেন প্রভাবশালী আশরাফ আলী। জনস্বার্থে তারা লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাদেরকে অভিযোগ তুলে নিতে মারধর সহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত আশরাফ আলী মুঠোফোনে বলেন, তিনি কালিগঞ্জ বাজারে বিয়ে করেছেন। আর এই সুত্র ধরেই পাশবর্তী থানা থেকে এসে সেখানে ২ শতক জায়গা কিনে ৫ তলা ভবন নির্মাণ করছেন। কেনার পর কোন মাপ- যোগ নেই। কতখানি জায়গা আছে তার জানা নেই। তিনি প্রভাবশালীও নন আর কাউকে হুমকি-ধামকিও দেননি।
এবিষয়ে ছাতারদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রউফ বাদশা বলেন, এই ভবন নির্মাণের বিষয়ে তিনি বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। কারণ যিনি ভবন নির্মাণ করছেন তিনি তার মেয়ের শ্বশুর। তবে তিনি ন্যায়ের পক্ষে রয়েছেন এবং সেখানে ভবন নির্মাণে নিষেধও করেছেন। কিন্তু তার কথার কোন কর্নপাত করা হয়নি।
ছাতারদীঘি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা তাইজুল ইসলাম বলেন, যেখানে ভবন নির্মাণ হচ্ছে। আশে পাশের প্রায় জায়গা খাস। ইতোমধ্যে ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধে নোটিশ করা হয়েছে।
উপজেলা সাহকারী কমিশনার (ভূমি) আল ইমরান বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন যথাযথা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সেখানে আর কোন ভবন নির্মাণের সুযোগ নেই।