প্রতি বছরই দেশ থেকে অর্থ পাঁচার হচ্ছে। কোনোভাবেই তা ঠেকানো যাচ্ছে না। বরং দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। শুধু পরিবর্তন হয়েছে পাঁচারের পথ ও গন্তব্য। পাঁচার করা অর্থের গন্তব্য যে সরছে তার প্রমাণ মেলে সুইস ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে। তাতে বলা হয়েছে, সে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে গত এক বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশী আমানতকারীরা। এই অর্থ পাঁচারের পেছনে কারণ রয়েছে একাধিক। বর্তমানে দেশে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দুর্বল এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজমান। ইতোমধ্যে টাকার মান কমে গেছে। এ কারণে বিত্তবানদের অনেকে বিদেশী মুদ্রায় সঞ্চয় রাখতে চাচ্ছেন। অন্য দিকে তাদের নিজের এবং সম্পদের নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা জরুরি। এজন্য তারা বিদেশে অর্থ রাখতে চান। আমাদের দেশের মোট বিনিয়োগের ৭৫-৮০ শতাংশ আসে বেসরকারি খাত থেকে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমার কারণে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। তাই অর্থ বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ ছাড় দেয়া হয় অর্থ পাঁচারকারীদের জন্য। কেউ ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশে পাঁচার করা অর্থ ফিরিয়ে এনে বৈধ করতে পারবেন। অথচ দেশে একজন নিয়মিত করদাতা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কর দেন। সে হিসাবে অর্থ পাঁচারকারীদের প্রণোদনা দেয়া হয়। তবে এই প্রক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত কোনো টাকা ফেরত আসেনি। যেখানে পাঁচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে আমাদের দেশের আইন যথেষ্ট। কিন্তু এসব আইন কার্যকরে রাজনৈতিক সদিচ্ছা নেই। লক্ষণীয়, অর্থ পাঁচারকারীরা থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অর্থ পাঁচারকারী বলে অভিযোগ আছে এমন শতাধিক ব্যক্তির নাম গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দূরের কথা উল্টো রাজনৈতিক সুবিধা দেয়া হয়েছে। তাই এখনো সময় রয়েছে, সরকার চাইলেই দেশকে অর্থ পাঁচারকারীদের হাত থেকে বাঁচাতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেন। দেশ থেকে অর্থ কারা পাঁচার করছেন তাদের খুঁজে বের করে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে হবে। কেননা একবার বিদেশে টাকা গেলে তা ফেরত আনা খুব কঠিন। প্রচলিত রাজনৈতিক শক্তি ও প্রশাসন দিয়ে এর সমাধান কঠিন। এমনকি নিয়ন্ত্রণে আনাও কষ্টকর। সে কারণে জবাবদিহিমূলক পরিস্থিতি এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তথ্য-উপাত্ত কোথায় কী আছে- এগুলো ভালোভাবে সংগ্রহ করতে হবে। সবধরনের অবৈধ আয় অর্জনের ক্ষেত্র বন্ধ করতে হবে। অপরদিকে এসব অর্থ উপার্জনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যা দেখে অন্যরা ভয় পায়। তা না হলে দেশ থেকে টাকা পাঁচার বন্ধ হবে না। আর টাকা পাঁচার বন্ধ না হলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে না। বাড়বে না কর্মসংস্থান। এতে দেশে বেকারত্বের হার আরো বেড়ে যাবে।