ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত তেলবাহী জাহাজ ‘সাগর নন্দিনী ২’ থেকে ১১ লাখ লিটার তেলের মধ্যে প্রায় ৮ লাখ লিটার পেট্রোল ও ডিজেল পদ্মা ওয়েল ডিপুতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকী তেলও সড়িয়ে নিতে কাজ করছে অন্য দুটি তেলবাহী জাহাজ এমন খবর নিশ্চিত করেছেন ডিপো কর্তৃপক্ষ। নিমজ্জিত হওয়া মাষ্টার ব্রীজ ও কেবিন উদ্ধারে বরিশাল থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘নির্ভীক’ এসে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। রোববার সকাল ১০টা থেকে নিখোঁজদের সন্ধানে উদ্ধার কাজ শুরু করে। উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস, কোস্টর্গাড ও বিআইডব্লিউটিএ এর উদ্ধার কর্মীরা। এদিকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, পুলিশ সমন্বয়ে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে তাঁরা জাহাজের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পরিদর্শন করে কাজ শুরু করেছেন। অন্যদিকে নিখোঁজদের স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের খোঁজে সুগন্ধা নদীর বিভিন্ন স্থানে চষে বেড়াচ্ছেন।
জানাযায়, সাগর নন্দিনি-২ নামের জাহাজটি চট্রগাম থেকে ১১ লাখ লিটার পেট্রোল ও ডিজেল ভর্তি করে ঝালকাঠি শহরের সুগন্ধা নদীর পাশ্ববর্তী পদ্মা ওয়েল ডিপোতে তেল খালাস করা জন্য আসে। জাহাজটি নোঙর করা অবস্থায় নদীর অপর প্রান্তে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লেগে যায়। আগুনে দগ্ধ হয় জাহাজের শ্রমিক শাকিল (৩৫), ফরিদুল আলম (৫০), ইকবাল হোসেন (২৭), ও মাইনুল ইসলাম হৃদয় (২৯)। তাদের উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে রোববার দুপুরে তাদের অবস্থা আশংকাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
নিখোজ চার জনের মধ্যে জাহাজের মাষ্টার রুহুল আমিন খান, চালক একরাম হোসেন, সুপারভাইজার মাসুদুর রহমানের পরিচয় পাওয়া গেছে। নিখোঁজ চারজনের মধ্যে জাহাজের গ্রিজার আবদুস সালাম হৃদয়ের লাশ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। রোববার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের ইঞ্জিন কক্ষ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। হৃদয় হবিগঞ্জ জেলার মাদবপুর এলাকার বাসিন্দা। সে দীর্ঘদিন ধরে সাগর নন্দিনী ২ জাহাজে গ্রিজার পদে কাজ করেন। কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ শাফায়েত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ছয় মাস পূর্বে ডুবে গিয়েছিল এই এমভি সাগর নন্দিনী-২:
২০২১ সালের ১২ নভেম্বর একই স্থানে নন্দিনী-৩ অগ্নিকাণ্ডে ৭জন নিহত হয়েছে। গত ২৫ ডিসেম্বর এই ট্যাংকারটি ১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেল নিয়ে মেঘনা নদীতে ডুবে গিয়েছিলো। ২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জ্বালানি তেল নিয়ে চাঁদপুরে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডিপোর উদ্দেশে রওনা হয়েছিল এমভি সাগর নন্দিনী-২। পরদিন ভোরে ঘন কুয়াশার কারণে ভোলার মেঘনা নদীর ভোলার তুলাতুলি কাঠিরমাথা এলাকায় বালুবাহী একটি বাল্কহেডের সঙ্গে ট্যাংকারটির সংঘর্ষ হয়। এতে তলা ফেটে ট্যাংকারটি ডুবে যায়। ওই সময় ট্যাংকারে থাকা ১৩ জন কর্মী সাঁতরে তীরে উঠেন। ডুবে যাওয়ার সাতদিন পর দেশীয় প্রযুক্তিতে দুইটি বার্জের মাধ্যমে সাগর নন্দিনী-২ ভাসানো হয়। বিআইডব্লিউটিএর নেতৃত্বে কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ, প্রাইভেট স্যালভেজ ও মোংলা বন্দরের জাহাজ ‘অগ্নি প্রহরী’ উদ্ধার কাজে সহায়তা করে। ধারনা করা হচ্ছে মেঘনায় ডুবে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধার করে ক্রুটিপূর্ণ অবস্থায় আবারও ব্যাবহার করায় এ দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
বাংলাদেশ কোস্টগাড অপারেশন অফিসার লে. মোঃ শাফায়েত বলেন, বিস্ফোরিত জাহাজের নিখোজদের সন্ধানে বরিশাল থেকে ঝালকাঠি পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় উদ্ধার অভিযান চললেও এখোন পর্যন্ত কারো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে কার্গোটিতে বহনকরা বিপুল পরিমান জ্বালানি রক্ষা করায় নদীর পানিসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে এবারের মতো রক্ষা পেয়েছে।