সাতক্ষীরা শহর থেকে দক্ষিণে আশাশুনির দিকে ২৪ কিলোমিটার সড়কের দু'ধারে এখন মরাগাছের সারি। গাছগুলো লাগানো হয় নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে গাছগুলো মরে গেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, সাদা কাফনপরা গাছ। দুই পাশের সারি সারি এই মরা গাছ এখন মরণ ফাঁদ। জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ। আতঙ্ক তো বটেই, এসব মরাগাছের ডাল ভেঙে পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে প্রাণহানির ঝুঁকিও। অতি সম্প্রতি এমনই এক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের মেল্লেকপাড়া গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে ফারুক হোসেন।
পবিত্র ঈদুল আজহার দিন সন্ধ্যায় আশাশুনি থেকে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের কোমরপুরে একটি মরাগাছের (রেইন ট্রি) ডাল ডেঙে গায়ে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার মোটরসাইকেলটিও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের দুই ধারে সারি সারি মরা গাছের কঙ্কালসার দাঁড়িয়ে আছে। যা ক্রমেই ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে প্রকৃতির নিয়মে। আর ভয়টা সেখানেই। এসব মরা গাছের ডাল আকস্মিকভাবেই ভেঙে পড়ে সড়কের ওপর।
সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মাজেদ জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে এই সড়কের দু’পাশে শিশু (রেইনট্রি) গাছ রোপণ করে জেলা পরিষদ ও স্থানীয় বাসিন্দারা। বছর খানেক আগে সড়কটির বেশকিছু স্থানের গাছ শুকিয়ে যেতে থাকে। একপর্যায়ে শত শত গাছ মারা যায়। সামান্য ঝড় বৃষ্টিতেই গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। অনেক সময় সাইকেল, মোটরসাইকেল, ইজিবাইকসহ অন্যান্য যানবাহনে চলাচলকারী ও পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্টদের বলছি গাছগুলো অপসারণ করতে, কিন্তু এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ এখনো চোখে পড়েনি। হয়তো কর্তৃপক্ষ জীবনহানির অপেক্ষা করছে।
স্থানীয়রা জানান, গাছগুলোর বয়স ৩০/৩৫ বছর। রোগ বা পোকার আক্রমণে গাছগুলোর মারা যাচ্ছে। ডাল ভেঙে পড়ে চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। একটু বাতাস হলেই ডাল ভেঙে সড়কের ওপর পড়ে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান মোঃ আলাউদ্দীন বলেন, গাছগুলো এখন মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি জেলা পরিষদকে জানানো হয়েছে।
একই কথা বলেন, ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, সাতক্ষীরা থেকে আশাশুনি পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির দু'ধারের গাছ মরে গেছে বছর দুয়েক আগে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে গাছগুলো মরে যাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। গাছগুলো অপসারণ না করায় ডাল-পালা ভেঙে প্রতি নিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
এদিকে, সাতক্ষীরা সামাজিক বনবিভাগ জানিয়েছে, গাছগুলো মারা যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ বনগবেষণা ইনস্টিটিউটে চিঠি দেওয়া হয়। সেখানকার একটি টিম এসে কাঠ ও পোকার নমুনা নিয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ‘লাখ্যা’ নামের এক ধরনের পোকার আক্রমণে গাছগুলো মারা যাচ্ছে। রিপোর্ট এলে সঠিক কারণ জানা যাবে। এ ছাড়া লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়াও গাছগুলো মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, গাছগুলি ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে গাছগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে টেন্ডারের মাধ্যমে মরা গাছগুলি অপসারণ করা হবে।