ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে গত ৩-৪ দিন ধরেই লাগামহীন কাঁচা মরিচের দাম। আড়তদার, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের দাম নির্ধারণে চলছে ভিন্নতা। সোমবারও একই বাজারে মরিচের দাম ছিল ৪ ধরণের। উপজেলা সদরের চেয়ে গ্রামের বাজার গুলো কেজি প্রতি দ্বিগুণ বেশী টাকা গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। কাঁচা মরিচের আমদানি কম এই কথা সুযোগে সরাইলের প্রত্যেকটি বাজারে বিক্রয় মূল্য নির্ধারণে চলছে হরিলুট। কৌশলে ক্রেতাদের কাছ থেকে যে যেভাবে পারে অধিক টাকা আদায়ের অভিযোগ ওঠেছে। গতকাল দিনভর বিভিন্ন সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, কাঁচা মরিচের ব্যবসা করে অনেকেই রাতারাতি বড় লোক হওয়ার চেষ্টায় আছেন। সদর ও গ্রামের বাজারে যে ব্যবসায়ির সামনে ৪-৫ কেজি কাঁচা মরিচ আছে তার ভাবশাপই অন্যরকম। সকাল ৯টার দিকে সরাইল সদরের হাসপাতাল মোড় বাজারে তিন ব্যবসায়ি তিন ধরণের দাম চান। বাচ্চু মিয়া প্রতি কেজির দাম চান ৬ শত টাকা। তার পাশের ব্যবসায়ি মো. শাহেদ মিয়া চান ৫ শত টাকা। সিকিম নামের আরেক ব্যবসায়ি চান ৩৫০ টাকা কেজি। একই বাজারের তিন ব্যবসায়ির দামের পার্থক্য সাধারণ ক্রেতাদের ভাবিয়ে তুলে। একাধিক ক্রেতা আক্ষেপ করে বলেন, এভাবেই কৌশল করে এক শ্রেণির লোক আমাদের রক্ত শোষণ করছে। সিকিম বলেন, আড়ত থেকে সকালে ৩ শত টাকা দরে ক্রয় করেছি। কেজিতে ৫০ টাকা লাভ করলেই যথেষ্ট। এর বেশী চিন্তা করা মানে সাধারণ মানুষকে জবাই করা। মলাইশ বাজারে সালাহ উদ্দিন মিয়া, রিপন চৌধুরী, মিকেশ দাস ও শামা দাস ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন। পাশের গ্রাম দেওড়া বাজারে আবদুর রহমান বিক্রি করছে ৪০০ টাকায়। অরূয়াইল বাজারে মোবারক হোসেন, ইকবাল, আওয়াল বিক্রি করছেন ৫০০ টাকায়। একই বাজারে পাশের ব্যবসায়ি বিক্রি করছে ৪০০ টাকায়। চুন্টা বাজারে বিশ্বাস ৭০০ টাকায়, হান্নান মিয়া ৬০০ টাকায় আর জামাল মিয়া বিক্রি করছে ৫০০ টাকা কেজি। নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কাটানিশার বাজারে রইচ আলী, মাহফুজ মিয়া ও অপু দাস ৭০০ টাকা কেজি মূল্যে বিক্রি করেছেন। প্রাত: বাজারের সোহেল মিয়া বলেন, কাঁচা মরিচ ৮০০ টাকা ছিল। ২০০ টাকা কমেছে আজ ৬০০ টাকায় বিক্রি করছি। সরাইল সদরের বিকাল বাজারে নাঈম মিয়া ৪০০ টাকা, সোহাগ মিয়া ৩৮০ টাকা ও আবদুল করিম চান ৩৫০ টাকা কেজি। তারা জানান, আজ সকালে আড়ত থেকে পাইকারী মূল্য ৩০০ টাকা কেজি ক্রয় করেছেন। তবে খুচরা বিক্রেতাদের বক্তব্যের সাথে আড়ৎদারদের বক্তব্য মিলছে না। সরাইল বাজারের আড়ৎদার মেসার্স মা বাণিজ্যালয়ের ব্যবস্থাপক শামীম মিয়া বলেন, আমরা (শনিবার দিবাগত রাতে) রাতেই জানি কাঁচা মরিচের দাম কমেছে। তাই আজ (গতকাল) সকালে আমরা ২৫০-২৮০ টাকা মূল্যে পাইকারী বিক্রয় করেছি। মায়ের দোয়া বাণিজ্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. নাদিম বলেন, আমরা বাড়ি ঘর থেকে আসা গৃহস্তদের কাছ থেকে মরিচ ক্রয় করেছি। সেই মরিচ ৩৫০/৪০০/৪৫০ টাকা মূলে বিক্রয় করেছি। সম্পূর্ণ মনগড়া মতে কিছু ব্যবসায়ি ইচ্ছেমত মূল্যে কাঁচা মরিচ বিক্রয় করায় সাধারণ ক্রেতারা ক্ষুদ্ধ হন। তাদের মতে এই অনিয়ম ও হরিলুটের পেছনে স্থানীয় কোন সিন্ডিকেট কাজ করছে। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, সর্বত্র একই মূল্য থাকার কথা। কাঁচা মরিচের ঘাটতি তো নেই। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিব।