ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে মঙ্গলবার দিন ব্যাপি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছেন সওজ। অভিযানকালে সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের সরাইল উপজেলার হাসপাতাল মোড় ও কালীকচ্ছ এলাকার দেড় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। নেতৃত্বে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা, জেলা সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ ও সরাইল থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা মো. জয়নাল উদ্দিন। সওজ দুই সপ্তাহ আগেই দখলদারদের উচ্ছেদের নোটিশ করেছিলেন।
সওজ, উপজেলা প্রশাসন ও প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সূত্র জানায়, সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের হাসপাতাল মোড় ও কালীকচ্ছ বাজার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কিছু দখলদার সড়কের দু’পাশে কয়েকশত অবৈধ স্থাপনা তৈরী করে ব্যবসা করছে। প্রভাবশালী দালাল প্রকৃতির কিছু লোক প্রথমে ইশারায় জায়গার দখল নেয়। পরে দূর্বল দরিদ্র লোকজনের কাছে দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়া দেয়। সাধারণ মানুষ যানবাহন ও পথচারীদের ভুগান্তিতে ফেলে কৌশলে ব্যবসা করছে ওরা। এতে মূল সড়ক সরূ হয়ে পড়ছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতি মূহুর্তে সড়কে জ্যাম লেগে যাচ্ছে। জন দূর্ভোগ চরম আকার ধারণ করছে। সড়কে পথচারীদের হাঁটা চলার জায়গা থাকে না। স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যখন তখন আটকে যাচ্ছে গুরূতর রোগী বহনকারী এম্বোলেন্স। অনেক সময় জ্যামেই রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। দখলদার কর্তৃক সড়কের পাশ দখলের কারণে সৃষ্ট নানাবিধ সমস্যা উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় এক বছরেরও অধিক সময় ধরে তুলে ধরছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সুশিল সমাজের লোকজন। বিষয় গুলোকে গুরূত্ব দিয়েছেন জেলা আইন-শৃঙ্খলা সভা। তাই পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক মঙ্গলবার সকালে সওজ প্রথমে কালীকচ্ছ বাজার এলাকায় উচ্ছেদ শুরূ করেন। সওজের জায়গায় দন্ডায়মান সকল অবৈধস্থাপনা এস্কেবেটর দিয়ে গুড়িয়ে দেন। সেখানে শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। দুপুরের পর সরাইল সদরের হাসপাতাল মোড়ে প্রায় শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। বিকাল ৫ টা পর্যন্ত চলে এই অভিযান। উচ্ছেদ অভিযানে সাধারণ মানুষ স্বস্থিবোধ করলেও পর্দার আড়ালের দালাল ও চাঁদাবাজরা ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। কারণ প্রতিদিনের নগদ আয় আপাতত বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে ব্যবসায়ীদের আগামী ২-৩ মাস পরে সব ঠিক হয়ে যাওয়ার শান্তনাও দিচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, অনেকে গোপন আঁতাত করে লাল দাগ থেকে মুক্ত থেকেছেন। নির্মিত স্থায়ী ইমারতের অংশ বিশেষ সওজের জায়গায় পড়লেও বারবার মাসোয়ারার বিনিময়ে রক্ষা করে চলেছেন। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, জেলার সিদ্ধান্তে একটি ভাল কাজ হয়েছে। কারণ এটি আন্তজেলা সড়ক। অবৈধ দখলের কারণে কালীকচ্ছ ও হাসপাতাল মোড়ে নিয়মিত যানজট লেগে থাকে। মানুষ এখন যানজট থেকে মুক্তি পাবে। তবে উচ্ছেদই শেষ কথা নয়। এটাকে ধরে রাখতে হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বাজার পরিচালনা কমিটি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে কাজ করতে হবে। উচ্ছেদকৃত জায়গায় যাত্রীদের দাঁড়ানো বা বসার ব্যবস্থা করতে হবে।
অবৈধ স্থাপনায় বিদ্যুৎ সংযোগ কেন?
জায়গার মালিক সওজ। অথচ সওজের জায়গার দখলদাররা তাদের অবৈধ স্থাপনায় দেদারছে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। জ্বলছে একাধিক বাল্ব ও বৈদ্যুতিক পাখা। বছরের পর বছর এভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও নীরব কেন স্থানীয় পিডিবি? এমন জিজ্ঞাসা বৈধ গ্রাহক ও সাধারণ মানুষের। অনুসন্ধানে জানা যায়, সংশ্লিষ্টদের বিশেষ পন্থায় ম্যানেজ করে সরাসরি লাঠির মাধ্যমে লাইন টেনে ব্যবহার করছে অবৈধ দখলদাররা। কেউ পাশের দোকানদার থেকে সকেট ও ক্যাবলের সাহায্যে লাইন টেনে আনছে। আবার অনেকে মিটার নিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে সওজের জায়গায় নিজেদের নামে মিটারের অনুমোদন নিয়েছেন কিভাবে? এ বিষয়ে সহকারী প্রকৌশলী মো. সুমন হোসেন সর্দার বলেন, অনেকে বাড়ির নামে মিটার নিয়ে ওই স্থাপনায় ব্যবহার করেন। আর অন্য কারো মিটার থেকে সাব-লাইন নেয়ার বা দেয়ার কোন সুযোগ নেই।