গত ১০-১৫ বছরে ইংল্যান্ডের সেরা দল হিসেবে চেলসি নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে, এমন দাবী জানিয়েছেন ক্লাবের নতুন ম্যানেজার মরিসিও পোচেত্তিনো। ২০০৪ সালের পর থেকে ২১টি শিরোপা জয় করেছে ব্লুজরা। এর মধ্যে রয়েছে পাঁচটি প্রিমিয়ার লিগ ও দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি। কিন্তু গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে সাফল্যের খোঁজে চেলসি দুইজন ম্যানেজারকে বরখাস্ত করেছে। তারপরও ব্যর্থতা তাদের পিছু ছাড়েনি। টেবিলের ১২তম স্থানে থেকে তাদের লিগ শেষ করতে হয়েছে। সাউদাম্পটন ও টটেনহ্যামের সাবেক বস পোচেত্তিনো বলেন, ‘গত ১০, ১২, ১৫ বছরে ইংল্যান্ডের সেরা দলে পরিনত হয়েছে চেলসি। আমি প্রিমিয়ার লিগ সম্পর্কে খুব ভালভাবে জানি। চেলসির সংষ্কৃতি সম্পর্কেও অবগত আছি। আমি মনে করি আবারো জয়ের ধারায় ফিরতে এখানকার সমর্থকরা মুখিয়ে আছে।’ ৫১ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন ২০২১-২২ মৌসুমে লিগ ওয়ান শিরোপাসহ পিএসজিকে তিনটি ট্রফি উপহার দিয়েছেন। এর আগে ইংল্যান্ডে ছয় বছরের মেয়াদে তিনি কোন শিরোপা জিততে পারেননি। যদিও তার অধীনে স্পার্সরা ২০১৯ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে খেলেছিল। পোচেত্তিনো বলেন, ‘অতীতের তুলনায় এক ভিন্ন আঙ্গিকের অত্যন্ত তরুণ এই দলটি নিয়ে কাজ করতে আমি মুখিয়ে আছি। কিন্তু আমাদের সবাইকে একটি বিষয় বুঝতে হবে এজন্য কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন। আগামী কয়েক বছরের সাফল্যের খোঁজে অনুশীলন মাঠে দারুন একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। চেলসি ফুটবল ক্লাবের সথে নিজেকে যুক্ত করতে পারাটা আমার জন্য দারুন গৌরবের। আমরা সবাই দারুন উত্তেজিত, আমি চেলসিকে খুব ভালবাবে চিনি, এটা বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব। সে কারণে অবশ্যই এখানে আসার সিদ্ধান্তটা একেবারেই সহজ ছিল।’
প্রথম মৌসুমেই ক্লাবের নতুন মালিক টড বোহলি কোচ থমাস টাচেল ও গ্রাহাম পটারকে ছাঁটাই করেছেন। জানুয়ারিতে ট্রান্সফার মার্কেটে ২৮৮ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করেও সফল হতে পারেনি চেলসি। বুন্দেসলিগা, লা লিাগা, সিরি-এ ও লিগ ওয়ানের সব ক্লাব মিলেও একসাথে ট্রান্সফার বাবদ এত অর্থ ব্যয় করেনি। এবারের গ্রীষ্মে অনেকটাই বদলে যাওয়া দলের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন পোচেত্তিনো। কালিডু কুলিবালি, এডুয়ার্ড মেন্ডি ও এন’গোলো কান্তে চলে গেছেন সৌদি আরবের লিগে। ইংলিশ মিডফিল্ডার ম্যাসন মাউন্ড ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে, রুবেন লোফতাস-চিক এসি মিলানে ও মাতেও কোভাচিচ প্রিমিয়ার লিগ বিজয়ী ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দিয়েছেন। তবে তার পরিবর্তে ৫২ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ফরাসি স্ট্রাইকার ক্রিস্টোফার এনকুকু আরবি লিপজিগ থেকে দলে এসেছেন। ভিয়ারিয়াল থেকে আট বছরের চুক্তিতে সেনেগালিজ ফরোয়ার্ড নিকোলাস জ্যাকসনকেও দলে ভিড়িয়েছে ব্লুজরা। পোচেত্তিনো অবশ্য বলেছেন ক্লাবের পরিকল্পনা বেশ স্পষ্ট। কিন্তু এর বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগবে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে এসেছি ক্লাব ও সমর্থকদের সহযোগিতা করতে। দিনের শেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সবাইকে খুশী করা, নিজেদের নিয়ে গর্ব করা। খেলোয়াড়দেরও এটা উপলব্ধি করতে হবে। অবশ্যই ফুটবলের ইতিহাসে চড়াই-উতরাই রয়েছে। কিন্তু চেলসি এমন একটি ক্লাব যা সব বাঁধাকে উপেক্ষা করে সবসময় সামনে এগিয়ে গেছে। শীর্ষ পর্যায়ে টিকে থাকতে হলে ক্লাবের যা প্রয়োজন তার নিশ্চয়তা আমাদের দিতে হবে।
নিউক্যাসলে যোগ দিয়ে রেকর্ড গড়লেন টোনালি
এফএনএস স্পোর্টস: ইটালিয়ান মিডফিল্ডার সান্দ্রো টোনালিকে ৬০ মিলিয়ন পাউন্ডে দলে ভিড়িয়েছে নিউক্যাসল। এর মাধ্যমে ২৩ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার ইতালির সর্বকালের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন। ২০২০ সালে ব্রেসিয়া থেকে মিলানে যোগ দিয়েছিলেন টোনালি। গত এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মত ২০২২ সালে সিরি-এ শিরোপা জয়ে তিনি মিলানকে সবদিক থেকে সহযোগিতা করেন। গত মৌসুমে মিলান চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালেও খেলেছে। কিন্তু টোনালির জন্য যে পরিমান বেতনের প্রস্তাব নিউক্যাসল দিয়েছিল তা মিলান লুফে নিয়েছে। এতে সায় ছিল টোনালির নিজেরও। গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে এটাই নিউক্যাসলের প্রথম বড় কোন চুক্তি। সৌদি ধনকুবের দ্বারা পরিচালিত ম্যাগপাইরা ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। নিউক্যাসল ম্যানেজার এডি হোয়ে ক্লাবের এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘তিনি একজন ব্যতিক্রমী প্রতিভা এবং তার মধ্যে যে ধরনের মানসিকতা, শারীরিক দক্ষতা এবং টেকনিক্যাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা আমাদের জন্য উপযুক্ত হতে পারে। ২৩ বছর বয়সেই সে ইউরোপের শীর্ষ লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজেকে একজন নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়ে পরিনত করেছে। একইসাথে নিজ দেশের হয়েও নিজেকে প্রমান করেছে।" এ পর্যন্ত আজ্জুরিদের হয়ে ১৫টি ম্যাচ খেলেছেন টোনালি। রেকর্ড চুক্তি প্রসঙ্গে টোনালি বলেছেন, ‘প্রথমত আমি ইউনাইটেডকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারণ তারা আমার ক্যারিয়ারে অনেক বড় একটি সুযোগ করে দিয়েছে। আমি মাঠে এই আস্থার প্রতিদান দিতে চাই। সবসময়ই যেভাবে করেছি, নিজের শতভাগ দিয়ে দলের জয়ে অবদান রাখতে চাই। সেন্ট জেমস পার্কে খেলার জন্য আমি মুখিয়ে আছি। সমর্থকদের উষ্ণতা অনুভবে আর অপেক্ষা সইছে না।’ গাম্বিয়ান উইঙ্গার ইনকুবা মিনটেকে দলে ভেড়ানোর পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে টোনলিকে দলে নিল নিউক্যাসল। ড্যানিশ ক্লাব ওডেন্স থেকে মিনটেকে দলে ভেড়ালেও ধারে ফেয়েনুর্ডের কাছে ছেড়ে দিয়েছে নিউক্যাসল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছাড়া ক্রিকেট বিশ্বকাপ কল্পনা করতে পারছেন না গ্রিনিজ
এফএনএস স্পোর্টস: ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠেয় আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি দু’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। চলমান বাছাই পর্বের বাঁধা টপকাতে পারেনি তারা। এজন্য এই প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখা যাবে না ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। এটা যেন ভাবতেই পারছেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা। সেই দলে আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্যাটার ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক কোচ গর্ডন গ্রিনিজ। ভারতীয় ভারতীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) গ্রিনিজ বলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছাড়া বিশ্বকাপ অকল্পনীয়। বিশ্বকাপ সুপার লিগ পয়েন্ট টেবিলে সেরা আট দলের মধ্যেই থাকলেই সরাসরি বিশ্ব মঞ্চে খেলার সুযোগ পেত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২৪ ম্যাচে ৮৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের নবমস্থানে থাকায় বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার যোগ্যতা হারায় ক্যারিবীয়রা। এজন্য বিশ্বকাপ বাছাই পর্বেও লড়াইয়ে নামতে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। বাছাই পর্বে গ্রুপ পর্যায়ে ৪ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ২টিতে জিততে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু সেই দু’টি জয় শুধুমাত্র গ্রুপ পর্ব পার হতেই সহায়তা করেছে। নেপাল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে জয় এবং জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে যাওয়ায় সুপার সিক্সে খালি হাতে পা রাখে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সুপার সিক্সে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে বিশ্বকাপ খেলার আশা শেষ হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সুপার সিক্সে বাকী দুই ম্যাচে জিতলেও টেবিলের শীর্ষ দুই দলের মধ্যে থাকতে পারবে না ক্যারিবীয়রা। এজন্য প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ খেলতে পারবে না ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালের চ্যাম্পিয়নরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখা যাবে না, এটিই ভাবতেই পারছেন না গ্রিনিজ। তিনি বলেন, ‘ইদানীং আমি খুব বেশি ক্রিকেট দেখি না। বিশেষ করে সাদা বলের ক্রিকেট। আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হার আমাকে কষ্ট দিতো কিন্তু এখন আর সেরকম খারাপ লাগে না। বেশ অনেক বছর ধরে আমাদের ক্রিকেটের মান পড়ে গেছে।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১০৮ টেস্টে ৭৫৫৮ রান ও ১২৮ ওয়ানডেতে ৫১৩৪ রান করা গ্রিনিজ আরও বলেন, ‘হ্যাঁ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া বিশ্বকাপ একেবারেই অকল্পনীয়। আমাদের আর নিচে নামার জায়গা বাকি নেই।’ গ্রিনিজের মত হতাশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি পেসার জোয়েল গার্নার, ‘আমরা আগে যেমন ছিলাম, এখন তেমন নেই। আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলা অনেক গর্বের ছিল। আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা ছিল। এখন তরুণ খেলোয়াড়রা টি-টোয়েন্টি লিগের প্রতি বেশি আগ্রহী। তাদেরও কোন দোষ নেই, কারণ সবাই নিজেদের নিরাপত্তার কথাই ভাবে।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ৫৮ টেস্টে ২৫৯ উইকেট ও ৯৮ ওয়ানডেতে ১৪৬ উইকেট নেয়া গার্নার আরও বলেন, ‘ঐ সময় আমাদের প্রজন্মও খুব বেশি টাকা পায়নি। মূলত কাউন্টি ক্রিকেট থেকেই যা এসেছে। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের ক্রিকেটারদের উপার্জনের অনেক উপায় আছে এবং এজন্য তাদের দোষ দেয়া যায় না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলার গর্ব ফিরিয়ে আনতে হবে।’