ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ছিনতাই হওয়া ইজিবাইকের ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন ইজি বাইক চালক মমিনুর রহমান। তিনি কালীগঞ্জের বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি ইজিবাইক ক্রয় করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত ১৫ জুন ২০২৩ কালীগঞ্জ উপজেলার বলরামপুর বাজার সংলগ্ন রাস্তায় দিনে দুপুরে ফিল্মি স্টাইলে মমিনুরের একমাত্র সম্বল ইজিবাইকটি ছিনতাই করে নেয় একদল ছিনতাইকারী। ছিনতায়ের সময় তারা প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে মমিনুরকে প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে ঝিনাইদহ বাইপাশ সড়কে ছেড়ে দেয়। পরে রাতে ফিরে এসে মমিনুর বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরের দিন সকালে অভিযোগের তদারকি পুলিশ কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার এসআই ফেরদৌস তাকে বাড়ি থেকে থানায় ডেকে এনে খরচ বাবদ দুই হাজার টাকা দাবি করেন। অসহায় হতদরিদ্র ইজিবাইক চালক মমিনুর টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় কালীগঞ্জ থানায় অভিযোগটি ধামাচাপা পড়ে যায়। যে কারণে তার ইজিবাইকটি আজ ও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। দীর্ঘ প্রায় ১ মাস পার হলেও ভুক্তভোগীর ইজিবাইকটি আজও উদ্ধার হয়নি। এদিকে ওই ইজিবাইকটি কেনার জন্য মমিনুর যে সব এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিল তারা এখন কিস্তির টাকা আদায়ের জন্য প্রতিনিয়িত তার বাড়িআসতে থাকে। কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় মমিনুর রাতের আঁধারে প্রতিবেশি বা আত্মীয় স্বজনের কিছু না জানিয়ে বাবা-মা, স্ত্রী ও ভাই বোনকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। মমিনুরের কয়েকজন প্রতিবেশি জানান, ঈদুল আযহার দুই দিন পরে সকালে উঠে দেখি ওদের বাড়িতে তালা লাগানো এবং হাঁস মুরগী ও কবুতরও নেই। তাদের অবস্থান এখনো পর্যন্ত কেউ কিছু জানে না। অনেক কষ্টে কেনা ইজিবাইকটি ছিনতায়ের পর সে থানায় অভিযোগ করলেও থানা পুলিশ এ ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা করেনি।কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম ও তার ছেলে মমিনুর রহমান বিভিন্ন এনজিও থেকে টাকা নিয়ে একটি ইজিবাইক ক্রয় করে তারা বাইকের অর্থদিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাতো। গত ১১ এপ্রিল ঝিনাইদহ থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ইজিবাইকটি ক্রয় করে। এনজিও থেকে ২ লাখ টাকা এবং সাধারন মানুষের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে বাইকটি ক্রয় করেছিল। ইজিবাইক চালক মমিনুর জানাই, কালীগঞ্জ মধুগঞ্জ বাজার ১০ তালা ভবনের সামনে থেকে ১ জন যাত্রি নিয়ে কোলাবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা করে বারপাখিয়া মাঠ পার হতে না হতেই ছিনতাইকারীরা ইজিবাইকটা ছিনতাই করে নেয়। এক নারী জানান, দুপুরের সময় কয়েকজন লোক পুলিশ পরিচয়ে এক ইজিবাইক চালককে তুলে নিয়ে যেতে দেখেন। ছিনতায়ের ঘটনা বুঝতে না পারায় তিনি তখন অতটা গুরুত্ব দেয়নি। ইজিবাইকটি চুরি হবার থেকে ঋণের টাকা পরিশোধে তাগাদা দিলে রাতের কোনো একসময় বাড়ি ছেড়ে পরিবার নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। সেই থেকে ওই পরিবার গুলোর হদিস মিলছে না।
সরোজমিনে শুক্রবার ওই গ্রামে দেখা গেছে বাড়িতে তালা ঝুলছে। এ সময় কথা হয় প্রতিবেশিদের সঙ্গে, তারা বলেন, ঈদের ২ দিন পর পরিবারের সদস্যরা বাড়িতেই ছিল। কিন্তু পরের দিন সকালে বাড়ির দরজায় তালা ঝুলতে দেখা যায়। শুনেছি তাদের অনেক দেনা রয়েছে। তাই হয়তো পাওনাদারের চাপে রাতের কোনো একসময় তারা বাড়ি ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুবুর রহমান জানান, ঘটনাটি আমি যোগদানের পূর্বের। তদন্ত কার্যক্রম বর্তমানে কি অবস্থায় আছে সেটা আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি। ইজিবাইকটি উদ্ধারে জোরালো ভাবে কাজ করা হবে।