সাতক্ষীরা শহরের বুক চিরে প্রবাহিত প্রাণ সায়ের খালের দু'পাড়ে দু' পাড়ে বৃক্ষ বীজ বপন কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার (৮ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের পাকাপুলের মোড় থেকে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। প্রাণ সায়ের খাল রক্ষায় জেলা নাগরিক কমিটির উদ্যোগে প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। সাতক্ষীরা শহরের অস্তিত্ব রক্ষাকারী প্রাণ সায়ের খালটি আবর্জনায় ভরে গেছে। দখল আর দূষণের কবলে জনগুরুত্বপূর্ণ এ খালটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। খালটির অস্তিত্ব ও সৌন্দর্য রক্ষায় প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব বৃক্ষ বীজ বপন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডঃ দিলারা বেগম, প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব সাতক্ষীরার উপদেষ্টা ডাঃ সুশান্ত ঘোষ ও ক্লাবের সমন্বয়কারী ও চ্যানেল আইয়ের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ, অ্যাডঃ খায়রুল বদিউজ্জামান, উদীচী জেলা শাখার সভাপতি শেখ সিদ্দিকুর রহমান, সাংবাদিক শেখ আবদুল আলিম, প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব সাতক্ষীরার সভাপতি অ্যাডঃ মুনিরুদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ, সহ-সভাপতি আহসানুর রহমান রাজিব, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম বিপ্লব হোসেন, অর্থ সম্পাদক মোঃ ফিরোজ আলী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মিলন, দপ্তর সম্পাদক হুমায়ন কবির রায়হান, নারী বিষয়ক সম্পাদক ফারজানা রুবি মুক্তি, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সালাউদ্দীন রান, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক মোঃ গোলাম সরোয়ার, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক নিয়াজ মোরর্শেদ প্রমুখ।
এর আগে প্রাণ সায়ের খালের পাড়ে প্রকৃতি ও জীবন ক্লাবের নেতারা 'প্রাণ সায়ের খাল রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী' পালন করেন।
প্রসঙ্গতঃ সাতক্ষীরা শহরের বুক চিরে বহমান খালটির নাম প্রাণসায়ের। এই প্রাণসায়ের খাল ঘিরে গড়ে উঠেছিল একসময় সাতক্ষীরা শহর। বর্তমানে খালটি সাতক্ষীরার শহরের ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে ইচ্ছেমতো। খালের কালো পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সর্বত্র। খালের পাড়ের সড়ক দিয়ে লোকজনকে চলতে হয় নাক চেপে।
স্থানীয়রা জানান, ১৮৫০ সালের দিকে সাতক্ষীরার জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী নদীপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা ও শহরের শ্রীবৃদ্ধির জন্য খালটি খনন করেন।
সাতক্ষীরা শহরের দক্ষিণে মরিচ্চাপ নদের সঙ্গে উত্তর দিকের বেতনা নদীর সরাসরি যোগাযোগ রক্ষার জন্য ১৪ কিলোমিটার এ খাল খনন করা হয়। খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম ছিল এ খাল। এ খালের মাধ্যমে সহজ হয়ে উঠেছিল জেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরীর নাম অনুসারে খালটির নামকরণ করা হয় প্রাণসায়ের খাল।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো, বিভাগ-২) নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরার সদর উপজেলার এল্লারচর থেকে খেজুরডাঙ্গী পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। খাল খননের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০১৯ সালের ১ আগস্ট। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ৩০ জুন। কিন্তু শেষ হয় ২০২১ সালে জুনে। খননকাজ শেষ হওয়া খালটি দেড় বছর যেতে না যেতেই আবার ভরাট হয়ে গেছে।
সাতক্ষীরা পাউবোর (বিভাগ-২) নির্বাহী প্রকৌশলী শামিম হুসনাইন মাহমুদ জানান, খালটি পাউবো খনন করলেও জমির মালিক পৌর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন। তাদেরই এটি রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাসকিন আহমেদ বলেন, প্রাণ সায়ের খালের সৌন্দর্য ও পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব সবার। এ খালটি শহরের রক্ষা কবজ। মানুষ যাতে খালটিতে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে সেজন্য বারবার সতর্ক করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, প্রাণসায়ের খালপাড়ের বাসিন্দা ও দোকানদারদের নোটিশ করে নিষেধ করা হবে। তাঁরা না শুনলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় দেখছেন না। খাল রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।