পুলিশের দায়ের করা বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তারের পর কারাগারে প্রেরণ করা হয় আসামি হাবিবুর রহমান নয়নকে। ওই মামলার জামিন শুনানি ছিলো সোমবার ১০ জুলাই। কিন্তু জামিন শুনানীর আগেই রহস্যজনকভাবে গত ২৫ জুন থেকে আসামি নয়ন কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে প্রকাশ্যে ঘোরাঘুরি করছে।
বিষয়টি নিয়ে প্রবীণ আইনজীবী থেকে শুরু করে সচেতন মহলের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বিষয়টি বাংলা সিনেমার খলনায়ককে হার মানিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। আসামি হাবিবুর রহমান নয়ন জেলার মুলাদী উপজেলার সফিপুর এলাকার বাসিন্দা।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, নয়নের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এরমধ্যে ২০২১ সালের ২২ জুন মুলাদী থানায় থানা পুলিশ বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ২২ জুন মুলাদী উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের নির্বাচন চলছিলো। ওইদিন ইউনিয়নের বালিয়াতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থী দাদন মিয়ার পক্ষে নয়নসহ তাদের সহযোগিরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নির্বাচনের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করে। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর বিস্ফোরক আইনে দায়েরকৃত ওই মামলায় নয়নসহ কয়েকজন আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন থানার এসআই শহিদুল ইসলাম।
সূত্রে আরও জানা গেছে, মুলাদী থানার অপর একটি জিআর মামলায় নয়নকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে গত ২৮ মে নয়নের পক্ষে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ ইমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখিয়ে নথি তলব করে পিডব্লিউ সহকারে জামিনের আবেদন করেন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে জামিনের শুনানির জন্য দিন ধার্য্য করেন।
একাধিক প্রবীণ আইনজীবীরা বলেন, আইনানুসারে গত ২৮ মে’র পর থেকে নয়ন অন্য মামলায় জেল হাজতে থাকলেও অপর মামলায়ও জামিন না হওয়া পর্যন্ত সে (নয়ন) কারাভোগ করবেন। সব মামলায় জামিন হওয়ার পর কারাগার থেকে নয়নের জামিনে বের হওয়ার কথা।
সূত্রমতে, নয়নের আইনজীবীরা পুনরায় ৮ জুন পুরনো পিডব্লিউ প্রত্যাহার করে নতুন করে পিডব্লিউ ইস্যু করে জামিনের আবেদন করেন। আবেদনের শুনানির সময় বরিশালের সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস অংশগ্রহণ করেন। আদালতের বিচারক জামিনের জন্য ২৬ জুলাই শুনানির দিন ধার্য্য করেন। এ সময় শুনানির দিন এগিয়ে দেওয়ার দাবি জানালে ১০ জুলাই শুনানির দিন ধার্য্য করা হয়। কিন্তু জামিন শুনানীর আগেই রহস্যজনকভাবে নয়ন গত ২৫ জুন কারাগার থেকে বের হন।
এ ব্যাপারে ১ নম্বর যুগ্ম দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. নয়ন ফয়সাল বলেন, আসামির জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য্য আছে। গত ২৮ মে শ্যোন এরেস্ট ও পিডব্লিউ ইস্যুর ব্যাপারে ২৯ মে কারাগারে আদেশনামা পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আসামি কারাগার থেকে বের হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমার জানা নেই।
বরিশাল জেলা জজ আদালতের নাজির হেদায়েতুন্নবী জাকির বলেন, জামিন শুনানি পেন্ডিং থাকলে আসামি বের হওয়ার কোন ঘটনা লাইফে দেখিনি। এধরণের কোন ঘটনা ঘটলে কিভাবে ঘটছে তা জানা নেই। আদালতের কেউ এ ধরণের কাজ করতে পারে বলে মনে হয়না। বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বরিশাল আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ওবায়দুল্লাহ সাজু বলেন, আদালতের আদেশ ছাড়া জামিন পেন্ডিং থাকা মামলায় আসামি কারাগার থেকে বের হতে পারেনা। হয়তো আদালত থেকে কিছু করা হয়েছে। বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবুল বাশার বলেন, আসামির বিরুদ্ধে যখন পিডব্লিউ ছিল তখন তাকে মুক্তি দেয়া হয়নি। ঈদের আগে পিডব্লিউ প্রত্যাহার করে নিলে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। এতে আইনগত কোন সমস্যা নেই। আসামির পিডব্লিউ প্রত্যাহার করে নিলে ওই মামলায় আসামিকে ছেড়ে দিতে আইনগত কোন বাঁধা নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ ইমন বলেন, ১০ জুলাই জামিন শুনানির দিন ধার্য্য ছিলো। এরআগে ২৫ জুন নয়ন কারাগার থেকে জামিনে বের হয়েছে। তবে কিভাবে বের হয়েছে তা আদালতে খোঁজ নিলেই বিস্তারিত জানতে পারবেন। বরিশাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফয়েজুল হক ফয়েজ বলেন, জামিন শুনানি পেন্ডিং থাকলে আসামি মুক্তি পেতে পারেনা। আদালতে কোনো আদেশ হয়েছে কি না, তা নথি না দেখে কিছু বলা যাবেনা।