ঝিনাইদহের কালীগঞ্জসহ আঞ্চলিক সড়ক গুলোর পাশে নির্মিত যাত্রী ছাউনি গুলো কোনো কাজেই আসছে না। প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যয় হলেও অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এসব যাত্রী ছাউনি। পথচারীদের বিশ্রাম নেয়া কিংবা যানবাহনের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীদের কোনো কাজে না লাগলেও ছাউনিগুলো মাদকসেবীদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
জেলা পরিষদের তথ্যমতে, যাত্রীসহ মানুষের বিশ্রামের জন্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে জেলা পরিষদের জায়গায় ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে মহাসড়ক, বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা হয় ৪০টি যাত্রী ছাউনি। পরবর্তীতে সময়ে আরও কিছু যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি যাত্রী ছাউনির নির্মাণ ব্যয় ছিল গড়ে ৩০ হাজার থেকে দেড়লাখ টাকা।
সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে জেলার অভ্যন্তরীণ প্রতিটি সড়কের পাশে প্রকল্পের মাধ্যমে জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ যাত্রী ছাউনি নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে। এসব যাত্রী ছাউনিতে গিয়ে অপেক্ষা করেন না সাধারন মানুষ ও যাত্রীরা। এসব স্থাপনা দেখভালের অভাবেও নষ্ট হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, অযতœ-অবহেলায় পড়ে আছে বেশির ভাগ যাত্রী ছাউনি। ৪০টি যাত্রী ছাউনি থাকলেও ব্যবহার করার পর্যায়ে নেই বেশির ভাগই। মাদকসেবী, ভিক্ষুক ও ভবঘুরেদের দখলে রয়েছে অনেক যাত্রী ছাউনি। অন্যগুলোর মেঝে ভেঙ্গে যাবার কারণে সে সব যাত্রী ছাউনিতে যাবার কোন পরিবেশ নেই। কোনোটির বসার জায়গা ধুলোবালিতে একাকার হয়ে আছে। কিছু যাত্রী ছাউনি দেখে বোঝার উপায় নেই যে সেখানে কখনো বসার জন্য ব্যবস্থা ছিল। অথচ যাত্রীদের রোদ-বৃষ্টি থেকে রেহাই দিতে ছাউনি গুলো নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় সরকার ও জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে থাকা যাত্রী ছাউনি গুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অনেক আগেই। সাধারণ যাত্রীদের সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের চাহিদার কারণেই এসব যাত্রী ছাউনি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
বিশেষ করে যশোর সড়কের কেয়াবাগান, ঝিনাইদহ সড়কের চুটলিয়া মোড়ে, কোটচাদপুর সড়কের এলাঙ্গি নামক স্থানে, চুটলিয়া মোড়ের যাত্রী ছাউনি দীর্ঘ প্রায় ১৩ বছর অযতেœ পড়ে আছে। এটি ভেঙে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। মধুপুর চৌরাস্তা বাজারের যাত্রী ছাউনিটি দখল করে পাকা করে মোটর সাইকেল রাখার জায়গা বানিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। হাটগোপালপুর, কালা বাজার, ডায়াবেটিক হাসপাতালসহ বিভিন্ন এলাকার যাত্রী ছাউনিগুলোরও একই অবস্থা।
দীর্ঘদিন এভাবে পড়ে থাকলেও তা দেখভাল করা হয় না। ফলে এখানে বসা যায় না। যে যার মতো দখলে রেখেছে। অযতেœ পড়ে থাকা সরকারি এ সম্পত্তি দখল করে কেউ দোকান বসিয়েছেন। আবার কেউবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে পাকা করে কাজে লাগাচ্ছেন নিজেদে প্রয়োজনে। ফলে বিভিন্ন সময় যাত্রীদের পাশাপাশি ঝড়-বৃষ্টির সময় নারীরাও এখানে দাঁড়াতে পারেন না। চুটলিয়া এলাকার কাশেম মন্ডল জানান, এখানকার যাত্রী ছাউনিটি ১২-১৩ বছর হলো ভেঙে পড়ে আছে। এর ভেতরে কেউ আসতেও পারেন না, বসতেও পারেন না। যাত্রীরা গাড়ির জন্য আশপাশের দোকান গুলোতে বসে অপেক্ষা করেন। বৃষ্টির সময় যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। চৌরাস্তা এলাকার মুদি ব্যবসায়ী সবুর মিয়া বলেন, ‘বাজারের যাত্রী ছাউনিটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। যেকোনো মুহূর্তে এটি ধসে পড়তে পারে। কয়েকদিন আগে এখানে মোটর সাইকেল রাখার পর ছাদের পলেস্তারা ভেঙে মোটর সাইকেলের ক্ষতি হয়।
হাটগোপালপুর বাজার এলাকার সোলেমান হোসেন বলেন, ‘যাত্রী ছাউনিতে নোংরা পরিবেশ। ওর মধ্যে মানুষ বসবে কীভাবে ? যারা বিচালির ব্যবসা করেন তারা এর মধ্যে বিচালি রেখে ব্যবসা করেন। অনেকে চেয়ার, টেবিল, বাইসাইকেলও রেখে দেন। কেউ কেউ চায়ের দোকান দিয়ে বসে আছেন। যাত্রী ছাউনি গুলো বেদখল হয়ে আছে।’
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম হারুন অর রশীদ বলেন, জরিপ করে ক্ষতিগ্রস্থ যাত্রী ছাউনি মেরামত ও অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।