তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী ও অবস) হিসেবে ডাঃ আফিফা জিন্নাত আফি যোগদান করেছেন। তিনি মিডফোর্ট সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এরআগে তিনি পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অতিসম্প্রতি তিনি জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী ও অবস) হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে গত ১১ জুলাই/২০২৩ অপরাহ্নে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শর্যা হাসপাতালে যোগদান করেছেন।
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তিনদিক সীমান্তের কাটাতারের বেড়া বেষ্টিত। এ উপজেলার প্রায় দু’লক্ষাধিক লোকের চিকিৎসকার একমাত্র ভরসাস্থল তেঁতুলিয়া হাসপাতাল। এ উপজেলার বেশি ভাগ মানুষ সমতলে মাটি খনন করে নুঁড়ি পাথর শ্রমিক এবং সবুজের সমারোহ চা বাগানের শ্রমিকের কাজ করেন। পাশাপাশি পঞ্চগড় জেলার অন্যান্য উপজেলা এবং ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী জেলার অনেক লোকজন এ উপজেলার বিভিন্ন পাথর সাইট সহ বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে পাথর লোড আনলোডের কাজ করেন। বিশেষ করে গর্ভবর্তী মা ও শিশু রোগীদের জরুরী বিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৪৮ কিলোমিটার দূরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে রেফার করেন। ফলে সঠিক সময়ে উন্নত উন্নত চিকিৎসার অভাবে দূরবর্তী হাসপাতালে নিতে অনেক সীমান্তবর্তী গ্রামের গর্ভবর্তী মা ও শিশু রোগীর মৃত্যুও ঘটেছে। কিন্তু জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী ও অপঃ) যোগদানের ফলে সীমান্তবর্তী গ্রামের গর্ভবর্তী মা ও শিশু রোগীরা সঠিক সময়ে উন্নত চিকিৎসা পাবে সচেতন মহলের মনে করেন।
জানা যায় ২০১১ সালে হাসপাতালটি ৩১ শর্যা থেকে ৫০ শর্যা উন্নীত করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা, মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালটেন্ট ও সহকারী সার্জন সহ ২৮জনের বিদ্যমান। কিন্তু তদস্থলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা, ১জন জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী ও অপঃ) ও মেডিকেল অফিসার সহ মোট ১১ জন কর্মরত আছেন। এ ছাড়া তেঁতুলিয়া হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ শরিফ আফজাল, মেডিকেল ডাঃ মোঃ ফারহান হোসেন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে সংযুক্ত আছেন। বর্তমানে আবাসিক মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চুক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থো), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিও), জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেসথেসিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (যৌন ও চর্ম), সহকারী সার্জন (আইএমও), সহকারী সার্জন(ইএমও), সহকারী সার্জন (প্যাথোলোজী), সহকারী সার্জন (এনেসথেসিয়া), ৫জন সহকারী সার্জন, ৩ জন মেডিকেল অফিসার, এমও (হোমিও/আর্য়ুবেদিক) ও ডেন্টাল সার্জন গুরুত্বপুর্ণ ১৫ জন চিকিৎসকের পদ দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শূণ্য রয়েছে। ফলে হাসপাতালে ওটি বিভাগে আধুনিক সকল সরঞ্জামাতি থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে চালু না হওয়ায় অনেক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
হাসপাতাল পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্যানুযায়ী, হাসপাতালে বর্হিবিভাগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন এবং আন্তঃবিভাগে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন নতুন রোগী ভর্তি হন। কিন্তু হাসপাতালের উল্লিখিত গুরুত্বপুর্ণ পদগুলোশূণ্য থাকায় তীব্র জনবল সংকটে আন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগে জনসাধারণ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হিমসীম খাচ্ছে। এ ছাড়া উপজেলার তিনটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র যথাক্রমে তিরনইহাট, কালান্দিগঞ্জ ও ভজনপুরে মেডিকেল অফিসার (এমবিবিএস) নাই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স এবং ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ মৌল মানবিক অধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে।
এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আলী এহসান বলেন, হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবলের তীব্র সংকট থাকার পরও কর্মরত চিকিৎসকদের নিয়ে জনসাধারণকে যথাসাধ্য চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। অত্র হাসপাতালের প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের পদায়ন চেয়ে চাহিদাপত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদুর রহমান (ডাবলু) বলেন, সীমান্তবর্তী উপজেলা তেঁতুলিয়ার বিপুল সংখ্যক জনসাধারণের একমাত্র চিকিৎসর ভরসাস্থল তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু এখানে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসকের প্রায় ১৫টি পদ দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শূণ্য আছে। এরপরও জুনিয়র কনসালটেন্ট সহ অন্যান্য মেডিকেল অফিসার যোগদান করলেও বেশিদিন থাকে না। এ ছাড়া অত্র হাসপাতালের চিকিৎসকদের পঞ্চগড় সিভিল সার্জন জেলায় সংযুক্ত করেন আর এখানে চিকিৎসক সংকটে পড়ে এটা খুবই দুঃখজনক। তিনি এই হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের চাকুরির নিদিষ্ট সময় কর্মস্থলে থেকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান শেষে যেনো অন্যত্র বদলী করা হয় এজন্য পঞ্চগড় সিভিল সার্জন, রংপুর বিভাগের ডিজি (স্বাস্থ্য) সহ বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।