দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জেলা ও উপজেলাগুলোতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন গাইডবই প্রকাশক প্রধান শিক্ষকদের মোটা অংকের ডোনেশন দিয়ে ভুলে ভরা নিম্নমানের গাইডবই উচ্চ মূল্য হাকিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করছে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন জেলার উপজেলাগুলোতে গাইডবই প্রকাশকগণ তাদের প্রতিনিধিদের মারফত প্রধান শিক্ষকদের সেলামী দিয়ে নিজেদের মর্জি মাফিক মূল্য হাকানো নিম্নমানের গাইডবই শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করছে। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে জানা যায়, ফুলকুঁড়ি, পাঞ্জেরী, গ্লাক্সী, এ্যাডভান্সসহ নানা গাইডবই প্রকাশক তাদের নিজ নিজ প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সৌজন্য গাইড ও টেস্টপেপার ও সেলামী প্রধান শিক্ষকদের পৌঁছে দিচ্ছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিম্নমালের এ সকল বই কিনতে বাধ্য করছে। এ সকল বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীদের হাতেও নিম্নমানের এ গাইডবই দেখা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক এ প্রতিবেদককে জানান, নানা বই কোম্পানীর প্রতিনিধিগণ এ সকল বই ঢাকা থেকে ৫/১০ টাকা করে কিনে এনে ১১০-১৩০ টাকা করে বিক্রয় করা হচ্ছে। ঢাকা কেন্দ্রীক এ সকল বইয়ের প্রকাশকগণ শুধুমাত্র বাণিজ্যিক স্বার্থকে সামনে রেখে প্রথম শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ভুলে ভরা নিম্নমানের গাইড উচ্চ দাম হাঁকিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জিম্মি করে স্বার্থপর ও বেনিয়া প্রধান শিক্ষকদের মোটা অংকের ডোনেশন দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
আতিয়ার রহমান নামক সাতক্ষীরার শ্যামনগর নিবাসী এ প্রতিবেদককে জানান, তাদের উপজেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিশুদের মাঝে গাইড বই দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষাকে ধ্বংস করছে। শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ অজ্ঞাত কারণে নিরব ভূমিকা পালন করছেন। তিনি আরও জানান, দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোর ন্যায় পাঠ্য পুস্তক প্রকাশকগণও এ অঞ্চলে প্রতিনিধিদের দ্বারা নানা আর্থিক সুযোগ দিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের সাথে আঁতাত করে শিক্ষার্থীদের জিম্মী করে তাদের ধরিয়ে দেয় বুকলিস্ট। বছরের প্রথম ৩ মাসের মধ্যে তালিকামত বই কেনার জন্য রীতিমত চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
বিজ্ঞমহলের জিজ্ঞাসা, আর কতদিন শিক্ষা নিয়ে এ বানিজ্য চলবে? কবে এ দেশের শিক্ষকদের পেট ভরবে? তাদের কি শিক্ষা ক্ষেত্রে নানামুখি ব্যবসা বন্ধ হবে না?