ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯ উইকেট নিয়ে ২০১১ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক রবিচন্দ্রন অশ্বিনের। সেই থেকে চলছে, অশ্বিন মানেই যেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংয়ের আতঙ্ক। প্রায় ১২ বছর পরও সেটিই সত্যি। আরও একবার অশ্বিনের স্পিন-ধাঁধায় নাকানিচুবানি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তিন দিনেই ম্যাচ জিতে নিল ভারত। ডমিনিকা টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ও ১৪১ রানে হারিয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল ভারত। দেশের মাঠে ভারতের কাছে ক্যারিবিয়ানদের সবচেয়ে বড় হার এটিই। জয়-পরাজয়ের এই রেকর্ড ব্যবধান গড়া হলো অশ্বিনের রেকর্ড গড়া বোলিংয়ের সৌজন্যে। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া এই অফ স্পিনার দ্বিতীয় ইনিংসে শিকার করেন ৭ উইকেট। ম্যাচে তার প্রাপ্তি ১৩১ রানে ১২ উইকেট। সেই ১৯৩০ সাল থেকে টেস্ট ক্রিকেট হয়ে আসছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। এই নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার সেখানে এক টেস্টে ১২ উইকেট নিতে পারলেন কোনো স্পিনার। অশ্বিনের আগে ১৯৭৪ সালে ত্রিনিদাদে ১৩ উইকেট নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের টনি গ্রেগ। তবে ক্যারিবিয়ায় ভারতের কোনো বোলারের সেরা বোলিং এখন অশ্বিনেরই। তিনি ছাড়িয়ে গেছেন ২০১১ সালে বারবাডোজে ইশান্ত শর্মার ১০৮ রানে ১০ উইকেট কীর্তিকে। ম্যাচ এ দিনই শেষ হতে পারে, এমন আভাস পাওয়া যায়নি এমনকি লাঞ্চ বিরতির সময়ও। ভারতের প্রথম ইনিংসও যে তখনও শেষ হয়নি! কিন্তু রোহিত শর্মার ইনিংস ঘোষণার পর অশ্বিনের স্পিন ভেল্কিতে ম্যাচ শেষ তৃতীয় দিনেই। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেট নেন তিনি ৭১ রানে, দেশের বাইরে যা তার ক্যারিয়ার সেরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সব মিলিয়ে ৭২ উইকেট হয়ে গেল তার কেবল ১২ টেস্টেই। ম্যান অব দা ম্যাচ যদিও অশ্বিন নন। অভিষেকে সেই স্বীকৃতি পেয়েছেন যাশাসবি জয়সওয়াল। অভিষিক্ত ওপেনার টানা দুই দিন অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়ার পর শেষ পর্যন্ত তৃতীয় দিনে আউট হয়েছেন ১৭১ রানে। ম্যারাথন ইনিংসে ৫০১ মিনিট ক্রিজে থেকে ৩৮৭ বল খেলেছেন ২১ বছর বয়সী এই বাঁহাতি। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান জয়সওয়াল ও বিরাট কোহলি শুরু করেন দিন। ১৪৩ রানে দিন শুরু করা জয়সওয়াল দেড়শ স্পর্শ করেন ৩৬০ বলে। অভিষেকে ভারতের হয়ে শিখর ধাওয়ানের সর্বোচ্চ ১৮৭ রানের রেকর্ড ভাঙার সুযোগ ছিল তার সামনে, হাতছানি ছিল ডাবল সেঞ্চুরির। তবে সেটি আর পারেননি। ইনিংসজুড়ে দারুণ সব স্ট্রোকের পাশাপাশি ধৈর্য ও শৃঙ্খলার প্রদর্শনী মেলে ধরা ব্যাটসম্যান একটু মনোযোগ হারিয়ে আউট হয়ে যান আলগা শট খেলে। এরপর অজিঙ্কা রাহানেকে দ্রুত হারায় ভারত। তবে কোহলির লড়াই চলতে থাকে। আগের দিন প্রথম বাউন্ডারি পেতে ৮০ বল অপেক্ষা করা ব্যাটসম্যান তৃতীয় দিনেও একইরকম গতিতে এগোতে থাকেন। এ দিন অবশ্য দুই দফায় জীবন পান তিনি। ৪০ রানে কাভারে ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। বেঁচে গিয়ে তিনি ফিফটি করেন ১৪৭ বলে। লাঞ্চের পর ৭২ রানে তার ক্যাচ গ্লাভসে জমাতে পারেননি কিপার জশুয়া দা সিলভা। এরপর আর বেশিদূর এগোতে পারেনি তিনি। রাকিম কর্নওয়ালের অফ স্পিনে ধরা পড়েন লেগ স্লিপে। ২৬২ মিনিটের লড়াই থামে ৭৬ রানে। রবীন্দ্র জাদেজা ছয়ে নেমে কিছু শট খেলেন। অভিষিক্ত ইশান কিষান অবশেষে ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ পান অনেক অপেক্ষার পর। তবে খুব বেশিক্ষণ সেই স্বাদ তিনি নিতে পারেননি। প্রথম রানের দেখা পেতে ২০ বল লাগে তার। এরপরই ইনিংস ঘোষণা করে দেন রোহিত। ভারত তখন এগিয়ে ২৭১ রানে। লিড আরও বাড়ানোর সময়-সুযোগ সবই ছিল তাদের। কিন্তু উইকেটে যা পরিমাণ টার্ন ও বাউন্স, তাতে রোহিত বুঝতে পেরেছিলেন, অশ্বিন-জাদেজার সামনে টিকতে পারবেন না ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা। পেস বোলিংয়ে ৫ ওভার করার পরই দুই প্রান্ত থেকে স্পিন আনেন ভারতীয় অধিনায়ক। সাফল্যও আসতে থাকে একের পর এক। তেজনারাইন চন্দরপলকে ফিরিয়ে শুরুটা করেন জাদেজা। এই বাঁহাতি স্পিনার পরে আউট করেন আরেক বাঁহাতি রেমন রিফারকেও। জাদেজার এই দুই উইকেটের মাঝে ব্র্যাথওয়েটকে ফেরান অশ্বিন। এরপর তার উইকেটের খেলা চলতেই থাকে। ভেঙে পড়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং লাইন আপ। প্রথম ইনিংসে দলের সর্বাচ্চ ৪৭ রান করা অভিষিক্ত আলিক আথানেজ দ্বিতীয় ইনিংসেও করেন দলের সর্বোচ্চ ২৮ রান। স্পিন আক্রমণের ফাঁকে ছোট্ট স্পেলে ফিরে একটি উইকেট নেন পেসার মোহাম্মদ সিরাজ। বাকি সব শিকার অশ্বিনের। এই নিয়ে ইনিংসে ৫ উইকেট পেলেন তিনি ৩৪ বার। আর একবার পেলেই স্পর্শ করবেন ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ বার ৫ উইকেট নেওয়া অনিল কুম্বলেকে। আরেকটি কীর্তিতে অবশ্য কুম্বলেকে ছুঁয়েই ফেলেছেন তিনি। ম্যাচে ১০ উইকেট ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৮ বার নেওয়ার রেকর্ড কুম্বলের। এখন এই কিংবদন্তি স্পিনারের পাশে আছেন অশ্বিনও। সব মিলিয়ে ভারতের দাপটেরই গল্প। প্রথম ইনিংসে দেড়শতে গুটিয়ে যাওয়া ক্যারিবিয়ানরা দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ আরও ২০ রান পেছনে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুটি চক্রেই ফাইনাল খেলা ভারত নতুন চক্র শুরু করল একই ধারাবাহিকতায়।
সিরিজের পরের টেস্ট শুরু বৃহস্পতিবার, ত্রিনিদাদে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ১৫০
ভারত ১ম ইনিংস: ১৫২.২ ওভারে ৪২১/৫ (ডি.) (আগের দিন ৩১২/২) (জয়সওয়াল ১৭১, রোহিত ১০৩, গিল ৬, কোহলি ৭৬, রাহানে ৩, জাদেজা ৩৭*, কিষান ১* ; রোচ ২৪-৬-৫০-১, জোসেফ ১৮.২-২-৮০-০, কর্নওয়াল ১৬-৫-৩২-১, ওয়ারিক্যান ৪৫-৪-১০৬-১, হোল্ডার ১৮-৫-৪০-০, ব্র্যাথওয়েট ৯-০-২১-০, আথানেজ ১৬-২-৫৩-১, রিফার ৪-০-১৬-০, ব্ল্যাকউড ২-০-৪-০)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ৫০.৩ ওভারে ১৩০ (ব্র্যাথওয়েট ৭, চন্দরপল ৭, রিফার ১১, ব্ল্যাকউড ৫, আথানেজ ২৮, জশুয়া ১৩, হোল্ডার ২০*, জোসেফ ১৩, কর্নওয়াল ৪, রোচ ০, ওয়ারিক্যান ১৮; সিরাজ ৬-১-১৬-১, উনাদকাট ২-১-১-০, অশ্বিন ২১.৩-৭-৭১-৭, জাদেজা ২১-৫-৩৮-২)।
ফল: ভারত ইনিংস ও ১৪১ রানে জয়ী।
সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজে ভারত ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: যাশাসবি জয়সওয়াল।