তেঁতুলিয়া মহানন্দা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ না থাকায় চলতি বর্ষায় বিলীনের পথে প্রাচীন স্থাপনা সহ বেশ কিছু চা বাগান। জানা যায় নদীর তীরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা শতাধিক বছরের পুরনো ডাকবাংলো ভবন, পিকনিক কর্ণার, কেন্দ্রীয় গোরস্থান, কেন্দ্রীয় ঈদগা ময়দান, তেঁতুলিয়া থানা ভবন,পুরাতন বাজার, শিবমন্দির সহ প্রায় আবাদি জমি ও চা বাগান নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষার জন্য স্থানীয় সুশিল সমাজের দাবীর প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন মহানন্দা নদীতে বালুর স্লাব কেটে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় পাথর উত্তোলন বন্দ ঘোষণা করে চরম সমালোচনার মুখে পড়ে। তখন বিজিবি ও প্রশাসনের মধ্যে যৌথ সিদ্ধান্তের অভাবে তা বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু মহানন্দা নদীর কোন কোন স্থানে তীর রক্ষা বাঁধ না থাকায় বর্তমান বর্ষা মৌসূমে আশপাশের প্রাচীন স্থাপনা সহ চা বাগান ও আবাদি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে।
তেঁতুলিয়া পুরাতন বাজার এলাকায় সীমান্তের নদীর মেইন সীমানা পিলার ৪৪৩ এলাকায় ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শিবমন্দির অবস্থিত। এই প্রাচীন মন্দিরটি ১৯০৫ সালে তেঁতুলিয়া সদরের তেলিপাড়া এলাকায় টেংকু সাহা নির্মাণ করেন। তৎকালীন পুর্বপাকিস্তানের হিন্দু ধর্মালম্বী লোকজন যাকজমকভাবে পূর্জা অর্জন্ করত। দেশ স্বাধীনের পর ২০০৭ সালে বাংলাদেশের স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় মন্দিরটি সংস্কার করে শিবপূজা সহ অন্যান্যপূর্জা অর্জনা করত। মন্দিরটি সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় পরবর্তীতে সংস্কারকে নানা জটিলতা দেখা দেয়। ফলে সংস্কারের অভাবে মন্দিরের ভক্তদের মাঝে পূর্জা অর্জনায় অনীহা সৃষ্টি হয়। বর্তমানে মহানন্দা নদীর পানির স্রােতে ওই মন্দিরটি ভাঙ্গনের হুমকীর মুখে পড়েছে। এ ছাড়া প্রাচীন জেলাপরিষদ ডাকবাংলোর প্রায় একহাজার গজ উত্তরের কোন তীর রক্ষা বাঁধ না থাকায় চা বাগান ও ফসলি ক্ষেত এবং ২৩৮ নং মেইন পিলার উত্তর কাশিমগঞ্জ, জায়গীরজোত, জামাদার গছ, ডুংডুংগীর ঘাট, ইসলামপুর ও ভাদ্রুবাড়ি নামকস্থানে মহানন্দা চলতি বর্ষায় প্রবল ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ফলে এসব এলাকার আবাদি জমিসহ বাড়িঘর হুমকীর মুখে পড়েছে।
এছাড়া প্রায় ১২শ কোটি টাকা ব্যয়ে ডাকবাংলো থেকে পুরাতন বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার এলাকায় মহানন্দা নদীর পুর্বে নির্মিত তীর সংরক্ষন বাঁধের সিসি ব্লকের একাধিক স্থানে ফাটল সহ ধ্বসে গেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর দাবী চলতি বর্ষা মৌসূমে ক্ষতিগ্রস্থ তীর রক্ষা বাঁধ সংস্কার সহ নতুন করে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করে প্রাচীন স্থাপনা সহ চা বাগান ও আবাদি জমি রক্ষা করা না হলে মহানন্দার স্রােতে বিলীন হবে।
তেলিপাড়া সার্বজনীন শিবমন্দির এর সভাপতি কাঞ্চন কুমার দেব জানান-মন্দিরটি সংস্কারের জন্য দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কোন বরাদ্দ পায়নি। এরপরও কষ্ট করে ভক্তরা মন্দিরে পূর্জা অজর্না কার্যক্রম করে যাচ্ছে। বর্তমানে মহানন্দা নদীর ভাঙ্গনের কবলে মন্দিরটি বিলীন হওয়ার পথে। স্মৃতি বিজরিত প্রাচীন স্থাপনাটি যেনো হারিয়ে না যায় কোনভাবে রক্ষার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, মন্দিরটি ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষার জন্য উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঠাকুরগাঁও সার্কেল এর তত্ত্বাবধায় প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল সরকার এর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে বলেন, মন্দিরটি সংরক্ষণের জন্য একটি প্রকল্পের টেন্ডার কাজ চলমান আছে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকায় নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদুর রহমান (ডাবলু) বলেন, ইতোমধ্যে মন্দিরটির ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা নির্বাহী অফিসার সহ পরিদর্শন করেছি। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বালির বস্তা ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া পঞ্চগড় পানি উন্নয়নের বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সংগে কথা হয়েছে অচিরেই সিসি ব্লক নির্মাণ করে তীর সংরক্ষণ বাঁধ করা হবে।