গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলাধীন গোবিন্দপুর দাখিল মাদ্রাসাটিতে সুপারের মনগড়া নিয়ম ও সেচ্ছা চারিতায় পাঠদানে ব্যহতসহ সকল প্রকার শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। আদালতের মামলা, সরকারি নিয়ম-নীতি, এলাকাবাসীর বাধা ও শিক্ষার্থী কমে যাওয়াসহ সকল বাঁধা উপেক্ষা করে সুপার তার নিজের ইচ্ছেমতো মাদ্রাসাটি একেক সময় একেক স্থানে স্থানান্তর নিয়ে শিক্ষকদের সাথে সুপারের সৃষ্ট বিবাদের কারণে এই অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিগত ২০১৪ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে গোবিন্দপুর দাখিল মাদ্রসাটি ভাঙ্গনের সম্মুখীন হলে সে সময় মাদ্রাসাটি পার্শ্ববর্তী গোবিন্দপুর ঈদগাঁ মাঠ সংলগ্ন স্থানে ৩০ শতক জমি ক্রয় করে সেখানে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে সুন্দর মনোরম পরিবেশে রীতিমতো পাঠদান চলতে থাকে। এমতবস্থায় ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে মাদ্রাসা সুপার হঠাৎ করে মাদ্রাসাটি পার্শ্ববর্তী জুমারবাড়ী ইউনিয়নের বসন্তের পাড়া মৌজায় শিক্ষার অনুপোযুক্ত স্থানে স্থানান্তর করে নিয়ে যাওয়ার কথা শিক্ষকদের জানায়। তার কথায় অন্যান্য শিক্ষকরা রাজি না হওয়ায় তাদের সাথে সুপার আতাউর রহমানের বিরোধ সৃষ্টি হয়। পরে বিষয়টি স্থানীয় লোকজন এবং অন্যান্য শিক্ষক মিলে সুপার আতাউর রহমানের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এবং তারা মাদ্রাসা স্থানান্তরে বাধা দেয়। পরে মাদ্রাসা সুপার মাদ্রসাটি সেখানে রেখেই শিক্ষক, এলাকাবাসীর বাধা ও সরকারী অনুমতির উপেক্ষা করে পাঠদানের জন্য জুমারবাড়ী ইউনিয়নের বসন্তের পাড়া মৌজায় একটি মাত্র টিনের ঘর করে। এতে এলাকাবাসীর সাথে সুপার আতাউর রহমানের বিরোধ আরো তুঙ্গে ওঠে। একপর্যায়ে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী সুপারের তৈরী বসন্তের পাড়ায় অবৈধভাবে নির্মাণ করা নতুন টিন সেট ঘরটি ভেঙ্গে দেয়। এই ঘটনায় মাদ্রাসাটির শিক্ষকরা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়লে সুপার তার বিপক্ষে অবস্থান নেয়া শিক্ষদের বেতন বন্ধ করে দেন। পরে স্থানীয় এমপির হস্তক্ষেপে ওই শিক্ষদের বেতন চালু হয়েছে। তবে পাঠদান বন্ধ হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সহকারী শিক্ষক জানান,“মাদ্রসার সুপার আতাউর রহমান শিক্ষকদের জিম্মি করে তার মনগড়া ভাবে শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি না নিয়ে মাদ্রাসাটি স্থানান্তরের নামে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষৎ জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের কয়েক মাস বেতন বন্ধ করে রাখে। এখন আমরা নিরুপায় হয়ে কোন প্রতিবাদ করতে পারছিনা। নবম শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান,“মাদ্রাসাটি অবকাঠামো থাকার পরেও আমাদের নিয়ে নতুন নতুন স্থানে দোটানার ফলে আমাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে পড়েছে। আমরা গোবিন্দপুর ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন এই মাদ্রাসাটিতেই লেখাপড়া করতে চাই।
এই বিষয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান,“গোবিন্দপুর দাখিল মাদ্রাসাটি স্থানান্তরের কোন সুযোগ নেই কারণ এই মাদ্রাসাটির সব অবকাঠামো আছে। একটি মহল নিজের স্বার্থ হাসিল করতে মাদ্রাসাটি স্থানান্তরের পায়তারা চালাচ্ছে। ফলে পাঠদান ব্যহতসহ চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সু-দৃষ্টি কামনা করছি। ”
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, গোবিন্দপুর দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্টাকালীন সদস্য ও সাবেক সভাপতি ইয়াকুব আলী জানান, ‘মাদ্রাসা সুপার আতাউর রহমান, মাদ্রসায় শুণ্য পদে লোক নিয়োগ বাণিজ্য করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার লক্ষে মাদ্রসাটি অন্যত্রে স্থানান্তর করার পায়তারা করছেন। এরই অংশ হিসেবে মাদ্রাসার সুপার আতাউর রহমান মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি ছাড়া অন্য ইউনিয়নের বসন্তর পাড়া গ্রামে শিক্ষার অনুপযোগী স্থানে অবৈধভাবে একটি টিনসেট ঘর তুলে পাঠদানের চেষ্টা চালান। এ ঘটনায় স্থানীয়রা বাধা দিয়ে ঘরটি ভেঙ্গে দেয়। এ ঘটনায় মাদ্রাসাটি স্থানান্তরের প্রতিবাদে আমি বাদি হয়ে গাইবান্ধা আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। যা গাইবান্ধা জেলা দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন আছে।”
মাদ্রাসাটি স্থানান্তরের বিষয়েটি এড়িয়ে গিয়ে সুপার আতাউর রহমান জানান,“মাদ্রাসাটি স্থানান্তরের জন্য আমি আগে জুমারবাড়ী ইউনিয়নের বসন্তের পাড়ায় একটি সেট ঘর তুলি। ঘরটি স্থানীয়রা ভেঙ্গে দেয়। তবে পাঠদান ব্যহত হওয়ার বিষয়টির কোন জবাব দেননি।”
সাঘাটা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আহসান হাবীন জানান,“এই বিষয়টি নিয়ে আমি গত রোববার সরে জামিনে তদন্ত করেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।”