ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মালিয়াট ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনকে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে উপজেলার মালিয়াট গ্রাম থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় হত্যায় ব্যবহৃত রক্তমাখা ধারালো দা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ইউপি সদস্যের ভাই আবদুল আজিজ মন্ডল। মামলা নং ১৭। আটককৃতরা হলেন নিহত ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী মাহফুজা বেগম (৪৮), তার মেয়ে উম্মে সুমাইয়া ইয়াসমিন মিতু (২৩) ও মেয়ের প্রেমিক পাচকাহুনিয়া গ্রামের আবদুস সাত্তার মন্ডলের ছেলে সাজ্জাত হোসেন চয়ন (২৫)। পুলিশ জানায়, ১২ জুলাই দুপুর ১ টার দিকে নিজ বাড়িতে ধারালো দা দিয়ে গলাকেটে হত্যা করা হয় মালিয়াট ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনকে। কিন্তু ঘটনার দিন ইউপি সদস্য স্ট্রোক করে শোকেজের কাচের উপর পড়ে গলা কেটে মারা যান বলে স্ত্রী ও মেয়ে প্রচার করেন। স্থানীয়রা তাকে যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে তদন্ত শুরু করে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ। নিহত ইউপি সদস্যের মেয়ে মিতুর বিয়ে হয়েছিল। কিছুদিন সংসার করার পর তাদের ডিভোর্স হয়। এরপর তার মেয়ে উম্মে সুমাইয়া ইয়াসমিন মিতু পাশের গ্রাম পাচকাহুনিয়া গ্রামের সাজ্জাত হোসেন চয়নের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তাদের বিয়ের কথাও চলছিল। কিন্তু ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বিয়েতে রাজি ছিলেন না। এ নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে বাকবিন্ডা হতো। এরই জের ধরে গত বুধবার তাকে নিজ ঘরে গলাকেটে হত্যা করে। নিহত ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন মালিয়াট গ্রামের বারেক মন্ডলের ছেলে। যে সময় আনোয়ার বাড়ি থাকতো না তখন সাজ্জাত হোসেন মিতুদের বাড়িতে আসতো। আনোয়ার হোসেন সেনাবাহিতে চাকরি করতো ও গত ৬ বছর আগে অবসরে গিয়ে বাড়িতে বসবাস করতো। প্রেমিক সাজ্জাদ হোসেন কালীগঞ্জ বারোবাজার কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার সাথে জড়িত স্বিকার করেছে। এসব তথ্য জানান কালীগঞ্জ থানার এসআই প্রকাশ কুমার।
তার মৃত্যুর পর পুলিশ, পরিবার ও প্রতিবেশিরা ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দেওয়ায় এ রহস্যের সৃষ্টি হয়। সংবাদ পেয়ে ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। হত্যার একদিন আগে যশোর সিএমএইচ থেকে ডাক্তার দেখিয়ে আনা হয়। এরপর তাকে উদ্ধার করে যশোর নেওয়ার পথে মারা যান।
কালীগঞ্জ থানার ওসি মাহাবুবুর রহমান জানান, এ ঘটনায় ইউপি সদস্যের স্ত্রী, মেয়ে ও মেয়ের প্রেমিককে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন নিহতের ভাই। সোমবার দিবাগত রাতে তাদের আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাদেরকে মঙ্গলবার দুপুরে ঝিনাইদহ জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।